Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Ghatal TMC

দুয়ারে অপেক্ষা, ফেরা হল না তৃণমূলে

অদ্যুৎকে তৃণমূলে ফেরানো নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই কথাবার্তা চলছিল দলীয় স্তরে। ঘাটাল ব্লক তৃণমূলের সভাপতি দিলীপ মাঝিও জানিয়ে দিয়েছিলেন, ফিরিয়ে নেওয়া হবে শিক্ষক নেতা অদ্যুৎকে।

ঘাটাল ব্লক তৃণমূল পার্টি অফিসের বাইরে অনুগামীদের সঙ্গে বসে রয়েছেন অদ্যুৎ মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

ঘাটাল ব্লক তৃণমূল পার্টি অফিসের বাইরে অনুগামীদের সঙ্গে বসে রয়েছেন অদ্যুৎ মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র kousikghatal2023@gmail.com

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঘাটাল     শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:২৯
Share: Save:

অনুগামীদের নিয়ে তৈরি নেতা। দেড়বছর পর ফের ফিরবেন দলে। কিন্তু যোগদানের অনুষ্ঠানের ব্যস্ততা নেই। ব্যাপারটা কী! সূর্য ক্রমশ ঢলছে পশ্চিমে। জানা গেল, খড়ারের একদিনের পুরপ্রধান অদ্যুৎ মণ্ডলকে দলে ফেরানোর চূড়ান্ত অনুমোদন আসেনি রাজ্য স্তর থেকে। ঘণ্টা দুয়েকের অপেক্ষার মাঝে অনুগামীদের কেউ কেউ বললেন, ‘‘এ অপমানের মানে কী!’’ কেউবা একধাপ এগিয়ে বললেন, ‘‘আজই আমরা বিজেপিতে যোগ দেব।’’ অপেক্ষাই সার। যে ব্লক নেতৃত্বের কথায় ফের দলে যোগ দিতে এসেছিলেন অদ্যুৎ তাঁরা একে একে বেরিয়ে গেলেন অন্য কাজে। অনুগামীদের নিয়ে ফিরলেন অদ্যুৎও। দেড়বছর আগের নাটক ফের ফিরল খড়ারে। একদিনের পুরপ্রধানের ‘সাসপেনশন’ কাটিয়ে পুনর্মিলনকে কেন্দ্র করে।

অদ্যুৎকে তৃণমূলে ফেরানো নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই কথাবার্তা চলছিল দলীয় স্তরে। ঘাটাল ব্লক তৃণমূলের সভাপতি দিলীপ মাঝিও জানিয়ে দিয়েছিলেন, ফিরিয়ে নেওয়া হবে শিক্ষক নেতা অদ্যুৎকে। তৃণমূল সূত্রের খবর, এ বার্তা তিনি নিজেই দিয়েছিলেন ‘একদিনের পুরপ্রধানকে’। সেই মতো শুক্রবার সাড়ে তিনটে নাগাদ ঘাটাল ব্লক তৃণমূলের কার্যালয়ে অনুগামীদের নিয়ে পৌঁছন অদ্যুৎ। তবে কার্যালয়ের ভিতরে প্রবেশ করেননি তিনি। সে সময়ে বলেছিলেন, ‘‘দল যা নির্দেশ দেবে, সেই মতো কাজ করব। তবে দায়িত্ব পেলে একটাই লক্ষ্য, নড়বড়ে খড়ারে দলের সংগঠনকে মজবুত করা। সঙ্গে খড়ার পুরসভার দ্বিচারিতা বন্ধ করাও জরুরি।” দিলীপ-সহ অন্য ব্লক নেতারা পৌঁছলেও যোগদান অনুষ্ঠানের কোনও তৎপরতা দেখা যায়নি। বরং ব্লক নেতৃত্বের মোবাইলে ঘন ঘন বাজতে থাকে। উদ্বিগ্ন ভাবে পায়চারি শুরু করেন তাঁরা। অধৈর্য হয়ে উঠে মন্তব্য করতে থাকেন অদ্যুৎ অনুগামীরা। আজ, শনিবার ঘাটালে কর্মসূচি রয়েছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। হয়ত কাকতালীয়। কিন্তু অপেক্ষারত এক অদ্যুৎ অনুগামী অভিমানের সুরে বিজেপিতে যোগদানের কথা বলেন। তবে অদ্যুৎ নিজে অপেক্ষা করেছেন শান্ত ভাবে। শেষে যখন ঘরের পথ ধরেছেন তখন বলেছেন, ‘‘আগ্রহী ছিলাম না। ব্লক সভাপতির নির্দেশে এসেছিলাম। ডেকে যে ব্যবহার করেছে সেটা দল বুঝুক। যাঁরা আমাকে দেখে রাজনীতি করছেন তাঁরা কী করবেন।’’ অদ্যুৎ বেরনোর আগেই অবশ্য বেরিয়ে যান দিলীপ-সহ অন্য ব্লক নেতারা।

কেন এমন হল?

তৃণমূল সূত্রের খবর, রাজ্য নেতৃত্বের চূড়ান্ত অনুমোদন আসার আগেই সব ব্যবস্থা পাকা হয়ে গিয়েছিল। আসলে অদ্যুৎকে একশো শতাংশ ভরসা করার আগে রাজ্য নেতৃত্ব বিষয়টি আরও একবার ভেবে নিতে চান। তা হলে কেন এত তাড়া? কেন এই ভুল বোঝাবুঝি। এর ব্যাখ্যা দিয়ে দিলীপ বলেন, ‘‘অদ্যুৎবাবুকে দলে নেওয়া হবে এই নিয়ে দলের সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছে। শুক্রবার ঘাটাল ব্লক কার্যালয়ে আসতে বলা হয়েছিল। তবে বিশেষ কারণে আজকে ওই কর্মসূচি হয়নি।’’

বিশ্বাস-অবিশ্বাসের চুম্বকে রয়েছে দেড় বছর আগের ইতিহাস। খড়ারে পুরবোর্ড গঠনে প্রাক্তন অর্থনীতির এই শিক্ষক অদ্যুৎই দলের কাছে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। দলের ঘোষিত পুরপ্রধান সন্ন্যাসী দোলুইকে হারিয়ে বিজেপিকে সঙ্গে নিয়ে পুরপ্রধান হয়েছিলেন অদ্যুৎ। অবশ্য তার পুরপ্রধানের মেয়াদ ছিল একদিন। একদিন পরই পুর প্রধানের পদ থেকেই ইস্তফা দিয়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয় বারে বোর্ড গঠনে যাতে কোনও ব্যাঘাত না ঘটে, খড়ারে দেখা গিয়েছিল রিসর্ট রাজনীতি। সন্ন্যাসী পুরপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব নেন। দল সাসপেন্ড করে অদ্যুৎকে। তবে তৃণমূলের অন্দরের খবর, দলীয় নির্দেশ মেনে পুরপ্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ এবং বহি:ষ্কারের পরে চুপচাপ ছিলেন অদ্যুৎ। পুর প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জনসংযোগ অটুট ছিল তাঁর। দলে কিম্বা সংগঠনে নাক গলাননি। উল্টে দলের কর্মী এবং পুর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। দলের বিরুদ্ধেও কোনও কুকথা বলতে শোনা যায়নি। এ সবই দলের ফেরার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিল। কিন্তু এতকিছুর পরেও নির্ধারিত দিনে যোগদান হল না।

গত বিধানসভা ভোটের পর থেকেই খড়ার শহরে তৃণমূলের সংগঠন নড়বড়ে পরিস্থিতি তৈরি হয়। পুরভোটের আগে অদ্যুৎকে শহর সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছিল দল। তারপর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ গোলমালে পদ্ম শিবির মাথাচাড়া দেয়। সেই সময় তৃণমূলের একাধিক গোষ্ঠী সক্রিয় হয়। পুরবোর্ড গঠন, অদ্যুৎকে বহিষ্কারের পরেও ছবি পাল্টায়নি খড়ারে। উল্টে নতুন করে সমস্যা তৈরি হয়। দলের একপক্ষকে বাদ রেখেই দলীয় কাজকর্ম চলছিল। পুরসভাতেও নানা অনিয়মের অভিযোগ সরব হতে দেখা যায় দলের এক পক্ষকে।

খড়ারে তৃণমূলের সাংগঠনিক শক্তি ক্রমশ দুর্বল হচ্ছিল বলে খবর। লোকসভা ভোটের আগে তাই সতর্ক তৃণমূল। নড়বড়ে পরিস্থিতি কাটিয়ে সংগঠনকে ঢেলে সাজতে তৎপর শাসক তৃণমূল। তা হলে কেন শেষ মুহূর্তে আটকে গেল যোগদান? তৃণমূল সূত্রের খবর, বাধা এসেছে পুরসভার জনপ্রতিনিধিদের একাংশের থেকে। তাঁদের যুক্তি দলে ফিরলে ফের নানা বিষয়ে ‘নাক গলাতে’ পারেন অদ্যুৎ।

অতঃপর অপেক্ষা! নাকি ‘একসময়ের বিশ্বাসঘাতক’ এখনও রাজ্য নেতৃত্বের কাছে অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারেননি! নাকি নেহাতই আগ বাড়িয়ে তৎপর হওয়ায় শীর্ষ নেতৃত্ব বার্তা চাইলেন ব্লকনেতৃত্বকে। আপাতত সে সবের উত্তর খুঁজছে খড়ারের রাজনীতি।

অন্য বিষয়গুলি:

ghatal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy