গলায় শুভেন্দু অধিকারীর ছবি ঝুলিয়ে পথচারীদের রাখি পরানো হল ঝাড়গ্রাম শহরের কলেজ মোড় এলাকায় । নিজস্ব চিত্র
দুই জেলায় দুই ছবি। যুযুধান দুই শিবিরের ছবিটাও আলাদা।
রাজনৈতিক দলগুলির কাছে রাখি বন্ধন উৎসব জনসংযোগের মঞ্চ। এ বার করোনা বিধিনিষেধের মধ্যেও রাখি উদ্যাপন করেছে তৃণমূল-বিজেপি। তবে জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামে সেই আয়োজনে তৃণমূল নিষ্প্রভ। তুলনায় চোখে পড়েছে বিজেপি-র কর্মসূচি। অন্য দিকে, পশ্চিম মেদিনীপুরে তৃণমূল ছিল অনেক বেশি সক্রিয়। গেরুয়া-শিবির সে ভাবে পথে নামেনি। তবে সব ছাপিয়ে চোখে পড়েছে জঙ্গলমহলে শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামীদের সমান্তরাল রাখি উৎসব।
সোমবার ঝাড়গ্রাম জেলা জুড়েই ‘রাখি বন্ধন’ পালন করেছেন শুভেন্দুর অনুগামীরা। পথচলতি মানুষকে রাখি পরিয়েছেন। বাদ যায়নি পুলিশের গাড়িও। মাস্ক পরিয়ে মিষ্টি ও চকোলেটও বিলি করা হয়। শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ স্নেহাশিস ভকতের দাবি, জেলায় দেড় হাজার যুবক-যুবতী পথে নেমেছিলেন। সকালে মূল কর্মসূচিটি হয় ঝাড়গ্রাম শহরের কলেজ মোড়ে। শুভেন্দুর অনুগামীরা নানা স্লোগান লেখা শুভেন্দুর ছবি গলায় ঝুলিয়ে ছিলেন। কোনওটিতে লেখা, ‘আমার দ্রোণাচার্য না হারতে জানেন, না হারতে শেখান’, কোনওটিতে বার্তা, ‘ক্ষমতার জন্য নয়, মানুষের কাজ করার জন্য আমার রাজনীতি’। কলেজ মোড়ের কর্মসূচিতে হাজির তৃণমূলের পরিবহণ সংগঠনের জেলা নেতা গৌরাঙ্গ প্রধানের গলায় ঝোলানো ছবির সঙ্গে লেখা ছিল, ‘বিনয়ী হও, দুর্বল নয়, শক্তিশালী হও, হিংস্র নয়’। জামবনি, লোধাশুলি, রগড়া, রোহিণী, কুলটিকরি ও নয়াগ্রামেও কর্মসূচি করেন শুভেন্দু অনুগামীরা। মেদিনীপুর ক্লাব সমন্বয় কমিটির উদ্যোগে রাখিবন্ধন হয়েছে। এই কমিটির অনেকেই শুভেন্দু অনুগামী বলে পরিচিত।
ঝাড়গ্রামে তৃণমূলের উদ্যোগে রাখি বন্ধন কর্মসূচি অবশ্য সে ভাবে হয়নি। বিক্ষিপ্ত কিছু আয়োজন ছিল। যেমন, জেলা সভাধিপতি মাধবী বিশ্বাস ও প্রাক্তন পুরপ্রধান দুর্গেশ মল্লদেব, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর কবিতা ঘোষ, টিএমসিপি-র রাজ্য সম্পাদক আর্য ঘোষের উদ্যোগে দিনটি পালিত হয়। আর্যরা অরণ্যশহরের প্যাথলজি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ওষুধের দোকানগুলিতে গিয়ে কর্মীদের সংবর্ধনা দেন। সাঁকরাইল ব্লক তৃণমূলের উদ্যোগে রোহিণী বাসস্ট্যান্ডে কর্মসূচিতে ছিলেন জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান বিরবাহা সরেন। জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলেন, ‘‘অঞ্চলে, ব্লকে এবং শহরে দলীয় পতাকা ও মুখ্যমন্ত্রীর ছবি নিয়ে রাখি বন্ধন হয়েছে। তবে করোনার কারণে জেলা তৃণমূলের বড় কর্মসূচি হয়নি।’’ শুভেন্দু-অনুগামীদের আয়োজন প্রসঙ্গে দুলালের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ব্যক্তিগত উদ্যোগে কোথায় কী হয়েছে, সব আমার জানা নেই।’’
তুলনায় বিজেপি ছিল সক্রিয়। দলের ১৮টি মণ্ডলের উদ্যোগে জেলা জুড়ে রাখি পরানো হয়, মাস্ক বিলি হয়। সাংসদ কুনার হেমব্রম ঝাড়গ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে রাখি পরিয়েছেন। রাজ্য বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বিকেলে নয়াগ্রাম বিধানসভার গোপীবল্লভপুরের হাতিবাড়িতে রাখি বন্ধন উৎসবে যোগ দেন। সায়ন্তন বলেন, ‘‘রাখি বন্ধনের মধ্যে দিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সবাইকে একজোট হতে হবে।’’ সিপিআই কর্মীরা কদমকানন রেল গেট এলাকায় পথচারীদের রাখি পরান, মাস্কও বিলি করেন।
পশ্চিম মেদিনীপুরে আবার রাখি বন্ধন ঘিরে জনসংযোগে উজ্জ্বল ছিল তৃণমূল-শিবির। তুলনায় নিষ্প্রভ বিজেপি। জেলার প্রায় সব এলাকায় রাখিবন্ধনের আয়োজন করেছিল তৃণমূল। দলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি একাধিক কর্মসূচিতে ছিলেন। অজিত বলছেন, ‘‘পথচলতি মানুষকে রাখি পরানো হয়েছে। মাস্ক দেওয়া হয়েছে। আমরা সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছি।’’ খড়্গপুর গ্রামীণের মতো এলাকায় তৃণমূলের উদ্যোগে কৃতী ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে বিজেপির মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শমিত দাশ মানছেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে আমরা ঠিকই করেছিলাম, এ বার সর্বজনীনভাবে রাখিবন্ধন উৎসব পালন করব না। দলের নেতা-কর্মীরা অবশ্য যে যাঁর এলাকায় দিনটি পালন করেছেন।’’
রাজনীতির পরিসরে সৌজন্যের রাখি বন্ধনও দেখা গিয়েছে। বিনপুরের মাগুরায় ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-র নেত্রী, প্রাক্তন বিধায়ক চুনিবালা হাঁসদার বাড়িতে গিয়ে রাখি পরেছেন লালগড় ব্লক যুব তৃণমূলের সহ-সভাপতি জলধর পন্ডা। কেশিয়াড়িতে কোলাকুলি করেছেন বিধায়ক পরেশ মুর্মু ও তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি জগদীশ দাশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy