পরীক্ষা শেষে মেদিনীপুর বিদ্যাসাগর শিশু নিকেতনে (বাঁ দিকে)। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর হাতে জীবাণুনাশক দিচ্ছে ঝাড়গ্রাম কুমুদ কুমারী ইনস্টিটিউশনের পড়ুয়ারা (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।
ঘুম ঘুম ক্লাসরুম নয়। ক্লাসরুমের টানে ভোরেই ভেঙেছে ঘুম। পরীক্ষাও যে এত আনন্দের হতে পারে করোনার বন্দিদশা না এলে বোঝাই যেত না। কেমন লাগছে? এ প্রশ্নের জবাবে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেল মৈশীলী দত্ত। মেদিনীপুরের রয়্যাল অ্যাকাডেমির দশম শ্রেণির ছাত্রী প্রায় ২০ মাস পরে শুক্রবার গিয়েছিল স্কুলে। উপলক্ষ ‘ন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট সার্ভে’র (ন্যাস) পরীক্ষা।
শুধু মৈশীলী নয়। করোনা বিধি মেনে পরীক্ষা দেওয়ার পর অনেক পরীক্ষার্থীই ছিল খুশিতে ডগমগ। ন্যাসের জন্য পশ্চিম মেদিনীপুরের ১৩৬টি স্কুলকে নির্বাচন করা হয়েছিল। আর ঝাড়গ্রাম জেলায় মোট ১০০টি স্কুলে ২ হাজার ৭৩০ জন পরীক্ষা দিয়েছে। কেমন হল পরীক্ষা? মেদিনীপুরের রয়্যাল অ্যাকাডেমির দশম শ্রেণির পড়ুয়ারা ন্যাস পরীক্ষায় বসেছিল। স্কুলের অধ্যক্ষ সত্যব্রত দোলই বলেন, ‘‘পরীক্ষা শেষে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছি। সকলেই জানিয়েছে, তাদের পরীক্ষা ভালই হয়েছে।’’ শালবনির জয়পুর হাইস্কুলের দশম শ্রেণির পড়ুয়ারা ন্যাস পরীক্ষা দিয়েছে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘স্কুলে আসতে পেরে পরীক্ষার্থীরা খুব খুশি হয়েছে।’’ ঝাড়গ্রাম জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) শক্তিভূষণ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘১০০ টি কেন্দ্রে নির্বিঘ্নে পরীক্ষা হয়েছে। কোথাও কোনও সমস্যা হয়নি।
স্কুলস্তরে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা কেমন এগোচ্ছে, সার্বিক পঠনপাঠনের মান কেমন প্রভৃতি বিষয় সমীক্ষার জন্যই এই ন্যাস পরীক্ষা নেওয়া হয়। বেছে নেওয়া হয় স্কুল। এর মধ্যে যেমন প্রাথমিক স্কুল থাকে, তেমন জুনিয়র হাইস্কুল, হাইস্কুল, মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র, শিশুশিক্ষাকেন্দ্রের পড়ুয়াদেরও রাখা হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরে স্কুলে শ্রেণি পিছু গড়ে ৩০ জন পড়ুয়া ন্যাস পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষা শুরু হয়েছিল সকাল সাড়ে দশটা থেকে। তৃতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষা ছিল দেড় ঘন্টার। সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত। অষ্টম ও দশম শ্রেণির পরীক্ষা ছিল দু’ঘন্টার। সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত। স্কুলপিছু একজন করে ‘অবজার্ভার’, একজন করে ‘ফিল্ড ইনভেস্টিগেটর’ নিযুক্ত ছিলেন পরীক্ষার জন্য।
স্কুলে ফিরতে পেরে না হয় পড়ুয়ারা খুশি হল। কিন্তু পরীক্ষায় করোনা বিধি মানা হল কি? পশ্চিম মেদিনীপুরে এ দিন সকালে সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলির দরজায় দেখা গিয়েছে, করোনা বিধি মেনে যাবতীয় বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। ক্লাস ঘরে দূরত্ব বজায় রেখেই পরীক্ষার্থীদের বসানো হয়েছিল। কোনও স্কুলে বেঞ্চে একজন, কোনও স্কুলে দু'জন করে বসেছে। ঝাড়গ্রামে প্রতি পরীক্ষার্থী পিছু বরাদ্দ ছিল একটি বেঞ্চ। অধিকাংশ পরীক্ষার্থীর হাতে ছিল স্যানিটাইজ়ার।
মাস্ক পরে পরীক্ষা দিচ্ছিল ঝাড়গ্রাম শহরের কুমুদ কুমারী ইনস্টিটিউশনে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র স্বরাজ সিংহ। কিন্তু মাস্ক বার বার যেন খুলে যাচ্ছিল। পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বেরিয়েই মাস্ক পকেটে ঢোকাল স্বরাজ। তার বন্ধু মনোজকুমার সরেন আবার মাস্ক ছিঁড়ে ফেলে দিল রাস্তায়। দু’জনেরই বক্তব্য, ‘‘টানা এতক্ষণ মাস্ক পরার অভ্যাস নেই। এতক্ষণ কি মাস্ক পরে থাকা যায়। কিন্তু পরীক্ষা কেন্দ্রে স্যারদের ভয়ে পরে থাকতে হয়েছে।’’ কুমুদকুমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘সমস্ত কোভিড বিধি মেনেই পরীক্ষা হয়েছে। পরিদর্শকেরা এসে খুবই খুশি হয়েছেন।’’
স্বাস্থ্যের জন্য স্কুলের সঙ্গে বেড়েছিল দূরত্ব। ভেঙেছিল মন। করোনার চোখরাঙানি এখনও আছে। তবু তারই মধ্যে ফিরল চেনা স্কুলবেঞ্চের স্পর্শ। মাস্কের আড়ালকে সঙ্গী করেই সে স্পর্শে উজ্জ্বল হয়ে উঠল মৈশীলী, স্বরাজদের চোখ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy