Advertisement
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
Lockdown

স্কুল বন্ধ, পড়ুয়া থেকে রাতারাতি ফেরিওয়ালা

লকডাউনে স্কুল-কলেজ বন্ধ। কিন্তু পড়ুয়াদের পঠন-পাঠন চালু রাখতে প্রযুক্তিগত নানা আয়োজন করেছে সরকার। চলছে অনলাইন ক্লাস, স্কুল থেকে দেওয়া হচ্ছে মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্ক।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

কেশব মান্না
দিঘা শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২০ ০২:৪১
Share: Save:

মাস ছয়েক আগেও ওরা ছিল স্কুল পড়ুয়া। কিন্তু করোনা আর লকডাউনের জাঁতাকলে বদলে গিয়েছে পরিচয়। খুদে ছেলেমেয়েগুলো এখন ফেরিওয়ালা। দিঘার সৈকতে খেলনা, ঝিনুকের মালার পসরা সাজিয়ে বসছে ওরা। কখনও বা পর্যটকের পিছু নিয়ে বলছে, ‘একটা মালা নাও না গো!’

আনলক পর্বে অনেকটাই ছন্দে ফিরেছে সৈকত শহর। পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। তাঁদের পিছনে পিছনে ঘুরে ঘরেই হরেক মাল বিক্রি করছে সন্দীপ, বিল্টু, শেফালি, মলিনারা (নাম পরিবর্তিত)। ওল্ড দিঘার বিশ্ব বাংলা উদ্যানের সামনে থেকে একেবারে নিউ দিঘা পর্যন্ত— সর্বত্রই দেখা মিলবে বছর সাত থেকে পনেরোর জনা চল্লিশ খুদে ফেরিওয়ালাকে। অথচ কয়েক মাস আগেও এই পর্যটন শহরে এই বয়সের ‘হকার’দের বাড়বাড়ন্ত ছিল না। কি রে, একা একাই রোদে ঘুরে জিনিস বিক্রি করছিস? বড় কেউ নেই?

ঝিনুকের মালা বিক্রির ফাঁকে বছর বারোর বিল্টুর জবাব, ‘‘ঘরে খুব অভাব। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি। কিন্তু এখন তো স্কুল বন্ধ। তাই জিনিসপত্র নিয়ে চলে এসেছি বিক্রি করতে।’’ সৈকতের ধারে বসে থাকা এক পর্যটক দম্পতিকে ঝিনুকেরই নানা সামগ্রী দেখাচ্ছিল ছোট্ট মলিনা। সে-ও বলে, ‘‘স্কুল নেই বলে বাড়িতে বসেই থাকি। মা পাঠিয়ে দিয়েছে জিনিসপত্র বিক্রি করতে।’’ হাওড়ার বাগনান থেকে বেড়াতে আসা স্বপন কয়াল বলছিলেন, ‘‘এত ছোট ছোট ছেলেমেয়ে এসে অনুরোধ করছে। দেখে কষ্টই হয়।’’

‘খুদে ফেরিওয়ালা’রা জানাচ্ছে, তারা সকলেই দিঘার আশপাশের তিনটি স্কুলের পড়ুয়া। সকলেরই অভাবের সংসার। অন্য সময় স্কুল গেলেও এখন সে জো নেই। স্মার্টফোনের অভাবে অনলাইনে পড়াশোনাও সম্ভব নয়। তাই যে বয়সে পড়াশোনা আর খেলাধুলোয় মেতে থাকার কথা, তখন বিল্টু, সন্দীপরা পথে বেরিয়েছে দু’পয়সা রোজগারের জন্য।

লকডাউনে স্কুল-কলেজ বন্ধ। কিন্তু পড়ুয়াদের পঠন-পাঠন চালু রাখতে প্রযুক্তিগত নানা আয়োজন করেছে সরকার। চলছে অনলাইন ক্লাস, স্কুল থেকে দেওয়া হচ্ছে মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্ক। গত কয়েক মাসে নিয়ম করে পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলের চাল, ডাল, আলুও দেওয়া হচ্ছে। তবু অভাবের তাড়নায় এই ছাত্রছাত্রীরা রাতারাতি ‘শিশু শ্রমিকে’ পরিণত হওয়ায় চিন্তিত তাঁদের স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। দিঘা দেবেন্দ্রলাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক তাপস বেরা বলছেন, ‘‘বহু পড়ুয়াই অভাবী পরিবারের। অধিকাংশরই স্মার্টফোন নেই। এ ভাবেই ফেরি করে জীবন-যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ওরা।’’

বিষয়টি অবশ্য জানা ছিল না জেলার শিশু কল্যাণ দফতরের। জেলার শিশু কল্যাণ দফতরের চেয়ারম্যান দিলীপ কুমার দাস বলেন, ‘‘১৪ বছরের নীচে কোনও ছেলেমেয়ে যদি পড়াশোনা ছেড়ে জীবিকা অর্জনের পথ বেছে নেয়, সে ক্ষেত্রে শিশু শ্রম আইন কার্যকর হতে পারে। যাদের সেই বয়সসীমা পেরিয়ে গিয়েছে, তাদের অভিভাবকদেরও সচেতন করা দরকার।’’ তাঁর আশ্বাস, ‘‘পড়াশোনা এবং খেলাধুলোর সমন্বয়ে ওই খুদেদের শৈশব ফিরিয়ে চেষ্টা করা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Pandemic Lockdown Education Student Digha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy