বিজয়িনী: ঠাকুমা ও মায়ের সঙ্গে নাসলিন। নিজস্ব চিত্র
দু’বছর আগে কাজে বেরিয়ে আর ফেরেননি বাবা। সংসারের একমাত্র রোজগেরে মানুষটার নিখোঁজ হয়ে যাওয়া কেমন যেন বদলে দিয়েছিল নাসলিনকে। তখন সে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। দারিদ্রের সঙ্গে লড়াইয়ের তখন শুরু। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে গিয়েছে নাসলিন। আর মাধ্যমিকে তার প্রাপ্ত ৬৭০ নম্বর আশার আলো দেখিয়েছে তার পরিবারে। শুধু তাই নয় প্রিয় বিষয় অঙ্কে নাসলিন পেয়েছে পুরো ১০০ নম্বর। বাংলায় ৯৩, ইংরাজিতে ৯৭, ভৌতবিজ্ঞানে ৯২, জীবন বিজ্ঞানে ৯৮, ইতিহাসে ৯৪ ও ভূগোলে ৯৬।
পূর্ব মেদিনীপুরের মফস্বল শহর পাঁশকুড়ার নারান্দা এলাকার বাসিন্দা নাসলিন শেখ। পশ্চিম নারান্দা এলাকার মসজিদ পাড়া এলাকায় টালির ছাউনির এক চিলতে ঘরে মা, ভাই, দাদু আর ঠাকুমার সাথে থাকে পাঁশকুড়া ব্রাডলি বার্ট হাইস্কুলের এই ছাত্রী। বাবা শেখ মনতাজ কাঠের মিস্ত্রির কাজ করে সামান্য রোজগার করতেন। কিন্তু বছর দু’য়েক আগে বাড়ি থেকে কাজে বেরিয়ে আর ফেরেননি। ছেলে-মেয়ে, শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে সংসারের হাল ধরতে মাদ্রাসায় রান্নার কাজ শুরু করেন মমতাজ। এমন অবস্থায় অনেকে বলেছিলেন, নাসলিনের বিয়ে দেওয়ার কথা। কানে তোলেননি মমতাজ। মেয়েকে পড়াশোনা করে ভাল ফল করার জন্য বারবার বলতেন।
প্রথমে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল নাসলিন। কিন্তু জেদ ছাড়েনি সে। পাশে পেয়েছিল স্কুলের শিক্ষকদের। তাঁরাই বই কিনে দেওয়া, পড়াশোনায় সাহায্য করতেন। নাসলিনের এমন সাফল্যে খুশি তাঁর স্কুলের শিক্ষক মানসকুমার দাস। তিনি বলেন, ‘‘নাসলিন বরাবর মেধাবী। দারিদ্র যে কোনও বাধা হতে পারে না, নাসলিনের ফল তার প্রমাণ।’’
নাসলিন এ দিন বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে চাই। আরও পড়তে চাই। আর কিছু বলার নেই।’’ তবে এমন সাফল্যেও উঁকি মারছে অনিশ্চয়তার মেঘ। মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন নাসলিনের মা মমতাজ বেগম। তাঁর কথায়, ‘‘শ্বশুর অসুস্থ। আমার সামান্য আয় দিয়ে ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা চালানো মুশকিল। জানি না কী হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy