ঝড়ে পটাশপুরে গাছ ভেঙে পড়ে ক্ষতি। — নিজস্ব চিত্র।
বৃহস্পতিবারের ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বেশ কিছু অংশ। ওই রাতে গাছের ডাল ভেঙে মৃত্যু হয়েছে এক কিশোরের। ভগবানপুর ২ ব্লকের জুখিয়া অঞ্চলের সাদুউল্লাচক গ্রামের বাসিন্দা হরিপদ মণ্ডল(১৬) ঝড়ের সময়ে একটি গাছের নীচে আশ্রয় নিয়েছিল। গাছের ডাল ভেঙে মাথায় পড়লে ঘটনাস্থলেই ওই কিশোরের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে খেজুরি ১ব্লকের কলাগেছিয়া অঞ্চলের ঘোলাবাড় গ্রামে গাছের ডাল ভেঙে দেবযানী মণ্ডল (৬৫) নামে এক বৃদ্ধা গুরুতর আহত হয়েছেন।
এ দিনের ঝড়বৃষ্টিতে কাঁথি মহকুমার খেজুরি ১, ২ ও ভগবানপুর ২ ব্লকের কয়েকশো কাঁচাবাড়ি ভেঙে পড়েছে। উপড়ে গিয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। কৃষি ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে ব্লক ও পঞ্চায়েত প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে। ভগবানপুর ২ বিডিও শৈলশিখর সরকার জানান, ভগবানপুর ২ ব্লকে সাড়ে ছ’শোর বেশি কাঁচাবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে খেজুরি ২ ব্লকের হলুদবাড়ি, খেজুরি ও বারাতলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কার্তিকখালি, কাদিরাবাদচর ও মালদা গ্রামে প্রচুর কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এ ছাড়াও প্রচুর গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে যাওয়ায় খেজুরি ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। খেজুরি-১ ব্লকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় চল্লিশ লক্ষ টাকার বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করছে প্রশাসন।
হলদিয়া মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকাতেও ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। হলদিয়া পুরসভা থেকে শুরু করে নন্দীগ্রাম ১ ও ২ ব্লক, মহিষাদল, সুতাহাটা ও হলদিয়া ব্লকে এই ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। হলদিয়া পুরসভা বাদে বাকি ব্লকগুলিতে ১৭৮৬ টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। তা ছাড়াও নন্দীগ্রাম ২ ব্লক ও মহিষাদল ব্লক এলাকায় ১১৯ হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ঝড়বৃষ্টির জন্য বিদুতের খুঁটি পড়ে অনেক এলাকায় বিদুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু হলদিয়া পুরসভা এলাকায় ক্ষতি পরিমাণ নিয়ে এখনও কিছু জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
এ দিকে বৃহস্পতিবার রাতে ঝড়ের জেরে হলদিয়া বন্দরের ভেতরে কাছি (দড়ি) ছিঁড়ে তিনটি জাহাজ বার্থ থেকে সরে যায়। রাতেই অবশ্য টাগের সাহায্যে জাহাজ তিনটিকে বার্থে নোঙর করানো হয়েছে। হলদিয়া বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার (মেরিন) এসএন চৌবে জানান, ঝড় হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে এ দিন কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বন্দরে। ওই জাহাজ তিনটিকে বার্থে ফেরানো হয়েছে।
হলদিয়ার মহকুমাশাসক শঙ্কর নস্কর জানান বৃহস্পতিবার রাতের ঝড়ে মহকুমার সব এলাকাতে কমবেশি ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে নন্দীগ্রাম ১ ব্লকে। নন্দীগ্রাম ১ ব্লকে ৯৫৬টি কাঁচা বাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। নন্দীগ্রামে ২ ব্লকে ৩৯৫ টি, মহিষাদল ব্লকে ২৫০ টি, হলদিয়া ব্লকে ১১০ টি ও সুতাহাটা ব্লকে ৭৫টি বাড়ি আংশিক ক্ষতি হয়েছে। নন্দীগ্রামে ২ ব্লকে ৭৫ হেক্টর ও মহিষাদল ব্লকে ৪৪ হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়েছে। হলদিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ মণ্ডল জানান, হলদিয়া পুরসভার ১১, ১৩, ১৪, ২২, ২৩, ২৪, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ঝুপড়ি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের সংখ্যার হিসেব এখনও হয়নি। শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২০০ টি ত্রিপল বিলি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই হলদিয়ার বিভিন্ন এলাকার বিদুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শুক্রবার দুপুরের পর থেকে পরিস্থিত কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে।
নন্দীগ্রাম ১পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আবু তাহের বলেন, ‘‘সোনাচুড়া, গোকুলনগর, কালীচরণপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা এবং সামসাবাদ ও কেন্দেমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের আংশিক এলাকায় ঝড়ে ক্ষতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে নন্দীগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বিদুৎ নেই।’’ বিদ্যুৎ বণ্টন বিভাগের পূর্ব মেদিনীপুরের রিজিওনাল ম্যানেজার শ্রীনিবাস রাউত জানান, ‘‘হলদিয়া মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় বিদুতের খুঁটি পড়ে ও বিদুতের তার ছিঁড়ে ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য শুক্রবার সকাল থেকে আমাদের কর্মীরা কাজ করেছেন।’’
এগরা মহকুমার বিভিন্ন ব্লকে ব্যপক ক্ষতির সম্মুখীন কৃষকরা। এগরা ১ ব্লকের পাঁচরোল, পানিপারুল, রাসন, মহাবিশ্রা ও এগরা ২ ব্লকের বালিঘাই, দাউদপুর, এরেন্দা-সহ আরও বেশ কিছু এলাকায় ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। পান, সব্জি এবং অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হয়েছে। পটাশপুর ১ ব্লকের ন’টি অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পটাশপুর ১ বিডিও বুলবুল বাগচী। ভগবানপুর ১ বিডিও উমাশঙ্কর দাস জানান এলাকার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা চলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy