তৈরি হচ্ছে জঙ্গলমহল উৎসবের মঞ্চ। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
বুধবার থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরেও শুরু হচ্ছে জঙ্গলমহল উৎসব। এই উৎসব হবে জেলা সদর মেদিনীপুরে। এবারের উৎসবের আমন্ত্রণপত্রে অতিথি-তালিকায় নাম নেই মন্ত্রী তথা শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতোর। অথচ জেলা থেকে নির্বাচিত অন্য মন্ত্রীদের নাম রয়েছে সেখানে। নাম আছে বিধায়ক জুন মালিয়ারও। ক’মাস আগে তৃণমূলের জুন-সহ দলে তারকা সাংসদ, বিধায়ক ও একাংশ জেলা নেতানেত্রীর সম্পর্কে বেফাঁস মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন শ্রীকান্ত। এর জেরেই কি অতিথি-তালিকায় ঠাঁই পেলেন না শালবনির বিধায়ক, জল্পনা দলের অন্দরে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিথি-তালিকায় নাম রয়েছে ৬ জনের। মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া, মন্ত্রী শিউলি সাহা, জেলা সভাধিপতি উত্তরা সিংহ, বিধায়ক জুন মালিয়া ছাড়াও সেখানে জায়গা পেয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের মন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী এবং জনজাতির নেতা আদিত্য কিস্কু। জেলার অন্য কোনও বিধায়কের নাম না থাকলেও জুনের নাম থাকা নিয়ে জল্পনা ছড়িয়েছে। তালিকায় মন্ত্রী শ্রীকান্তের নাম না থাকা ও তাঁর নাম থাকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মন্তব্য এড়িেয়ছেন জুন।
অতিথি তালিকায় তাঁর নাম নেই শুনে বিস্মিত শ্রীকান্তও। তাঁর কথায়, ‘‘ওখানে আমার নাম নেই না কি!’’ পরে তাঁর সংযোজন, ‘‘নামটা দিতে ভুলে গিয়েছে হয়তো!’’ শালবনির বিধায়ক জানাচ্ছেন, উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি যাবেন। তাঁর কথায়, ‘‘জেলা থেকে ফোন করে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ওই অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য। আমি যাব।’’
বিঁধছে বিরোধীরাও। বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি শমিত দাশের কটাক্ষ, ‘‘রাজ্যের মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো জঙ্গলমহল উৎসবে ব্রাত্য কেন, সেটা আমাদেরও প্রশ্ন!’’ শমিতের খোঁচা, ‘‘ভাগ (কাটমানির) ঠিক মতো না- পাঠানোর জন্য, না কি পুকুর চুরির বিরুদ্ধে মুখ খোলার জন্য, সেটা বোঝা যাচ্ছে না!’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘সরকারি অর্থে উৎসব। অথচ, নির্বাচিত বিরোধী সাংসদ, বিধায়কেরা ডাক পাননি। এ এক রাজনৈতিক নির্লজ্জতার উদাহরণ।’’
১৮ থেকে ২০ জানুয়ারি— তিনদিনের জেলা জঙ্গলমহল উৎসব হবে মেদিনীপুরের কলেজ-কলেজিয়েট স্কুল মাঠে। আজ, বুধবার বিকেলে উৎসবের উদ্বোধন। আমন্ত্রণপত্র জেলায় ছাপানো হয়নি। পাঠিয়েছে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিষয়ক দফতর। সেখানে স্বাক্ষর রয়েছে দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব সুব্রত বিশ্বাসের। প্রশাসনের এক সূত্রের ব্যাখ্যা, উৎসবের উদ্বোধনে স্থানীয় (জেলার) বিধায়কগণও আমন্ত্রিত। সেই সূত্রে আমন্ত্রিত শালবনির বিধায়কও। তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তৃণমূলের এক সূত্রে খবর, শুরুতে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিষয়ক দফতরের এক নির্দেশিকা জেলায় এসেছিল। সেখানে অতিথি হিসেবে ৫ জনের নাম ছিল। মন্ত্রী মানসের নাম ছিল না। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়। ছাপানো আমন্ত্রণপত্রে অবশ্য এ জেলার উৎসবের অতিথি- তালিকায় শুরুতেই অবশ্য মানসের নাম রয়েছে। কিন্তু শ্রীকান্তের নাম এবারেও নেই।
ক’মাস আগে পাড়া বৈঠকে শ্রীকান্তের মন্তব্য ছিল, ‘‘জুন মালিয়া, সায়নী, সায়ন্তিকা, মিমি, নুসরতরা লুটেপুটে খাচ্ছে। এঁরা যদি সম্পদ (দলের) হয়, তাহলে তো আর পার্টি করা যাবে না!’’ দাবি করেছিলেন, দল এখন ‘খারাপ’ লোকেদের কথা শুনছে। শ্রীকান্তর বক্তব্যের ভিডিয়ো ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তাঁকে শো-কজ় করেছিলেন দলের জেলা নেতৃত্ব। শ্রীকান্তের নিরাপত্তারক্ষী তুলে নেওয়া হয়। যা তাৎপর্যপূর্ণ কারণ তৃণমূলের অন্দরে অনেকেই বলেন, মন্ত্রীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক সময়ে দলে তাঁর অবস্থান নির্ণয়ে সহায়ক হয়ে ওঠে।
শ্রীকান্ত অবশ্য দলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন। ওই মন্তব্যে বেজায় ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীও। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জুনের কাছেও ভুল স্বীকার করেছিলেন শ্রীকান্ত। এরপর জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের ঘোষণা ছিল, ‘ও সব ক্লোজড চ্যাপ্টার!’ কিন্তু সত্যিই কি তাই! এই ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠছেই।
বেফাঁস মন্তব্যের খেসারত দিচ্ছেন শ্রীকান্ত? জেলা পরিষদের সহ- সভাধিপতি তথা তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুরের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতির জবাব, ‘‘দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে বলে অতিথি-তালিকায় ওঁর নাম নেই, আমি এটা বিশ্বাস করি না। এটা একটা ভুল হতে পারে! এটা নিয়ে অহেতুক চর্চা করার কোনও মানে আছে বলে আমার মনে হয় না!’’ কিন্তু বিরোধীদের তো তাই অনুমান? অজিতের মন্তব্য, ‘‘বেল পাকলে কাকের কী!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy