দিন ছাড়াও এডিসের একটা ‘পপুলেশন’ রাতেও সক্রিয়।
পুরসভা জানাচ্ছে, মশা মারতে নিয়মিত অভিযান চলছে। তারপরেও রাশ টানা যাচ্ছে না ডেঙ্গিতে। পশ্চিম মেদিনীপুরের সাতটি পুরসভা এলাকার মধ্যে খড়্গপুরে ডেঙ্গি আক্রান্ত সবথেকে বেশি। মেদিনীপুরেও সংখ্যাটা খুব কম নয়। নভেম্বর-ডিসেম্বরেও যে ভাবে একের পর এক এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মিলছে তাতে চিন্তা বাড়ছে। তবে এখনও পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গিতে কোনও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, ‘‘মশা মারতে পুরসভাগুলিকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পুরসভাগুলি সেই ব্যবস্থা নিচ্ছেও।’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার পশ্চিম মেদিনীপুরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ৮০০ ছাড়িয়েছে। এরমধ্যে ১০০-র বেশি ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে খড়্গপুরে। মেদিনীপুরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৫০-এর সামান্য কম। নতুন করে কয়েকটি এলাকাতেও ডেঙ্গির প্রবণতা বেড়েছে। পুর-কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, যেখানে ডেঙ্গি বাড়ছে সেখানে সচেতনতা বাড়াতে আরও পদক্ষেপ করা হচ্ছে। তবে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জল আর আবর্জনা জমেই বিপদ ঘনাচ্ছে। মশার লার্ভা নিধন, জঞ্জাল সাফাই, বাড়ি বাড়ি পরিদর্শনের উপরে জোর দিতে বলা হলেও বেশিরভাগ পুর-এলাকায় সেই কাজ ঠিক ভাবে হচ্ছে না। যদিও পুর-বিধি অনুসারে নির্মাণ কাজের জায়গায় ড্রাম, চৌবাচ্চায় জল জমে থাকলে তা অপরাধ। জল যাতে জমে না থাকে তার জন্য সংশ্লিষ্ট নির্মাণ সংস্থাকেই ব্যবস্থা নিতে হয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই নিয়ম মানা হয় না।
জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি মশার চরিত্র বদলাচ্ছে। আগে জানা ছিল, এই মশা সকালে কামড়ায়। এখন রাতেও কামড়াচ্ছে। জমে থাকা খুব সামান্য জলেই এরা ডিম পাড়ে। তাই এ ক্ষেত্রে সচেতনতা জরুরি। দেখা যাচ্ছে, পুর-এলাকায় সচেতনতার অভাব রয়েছে। খড়্গপুরের এক পুর-আধিকারিক মানছেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর থেকে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ খানিক বেড়েছে। বাড়ির আশেপাশে জল যাতে না জমে থাকে তা নিয়ে বাসিন্দাদেরও সতর্ক করা হচ্ছে। ওই আধিকারিকের স্বীকারোক্তি, ‘‘শহরের কিছু নিকাশি নালা মজে যাচ্ছে। নালা দিয়ে জল যাচ্ছে না। এ সব থেকেই ডেঙ্গির মশা ছড়াচ্ছে।’’
খড়্গপুরে ডেঙ্গি প্রতিরোধে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় করে মশা প্রতিরোধের কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে সেই সিদ্ধান্ত কাগজে-কলমেই রয়ে গিয়েছে বলেই অভিযোগ। খড়্গপুরের পুরপ্রধান তথা বিধায়ক প্রদীপ সরকার অবশ্য বলেন, ‘‘পুর-এলাকার যাতে কোথাও জল, জঞ্জাল জমে না থাকে সে জন্য পুরকর্মীদের বলা হয়েছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘তবে শহরবাসীকেও আরও সচেতন হতে হবে। মানুষ সচেতন হলেই ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।’’
মেদিনীপুরের পুর-প্রশাসক দীননারায়ণ ঘোষ জানান, কোথাও জল বা আবর্জনা জমে জমে থাকলে পরিষ্কারের ব্যবস্থা করা হয়। শহরে এখন আরও বেশি করে মশা মারার ধোঁয়া দেওয়া হচ্ছে। মেদিনীপুরের এক পুর-আধিকারিক জানান, ডেঙ্গির লার্ভার খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চলছে। কিছু ক্ষেত্রে বাড়ির ভিতরে জমে থাকা জলে মশার লার্ভাও মিলছে।
জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, আক্রান্তের সংখ্যা আগের থেকে বেড়েছে ঠিকই, তবে তার সব যে এখান থেকেই জেলা থেকেই ছড়িয়েছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। দেখা গিয়েছে, অনেকে জ্বর নিয়ে জেলায় এসেছেন। তাঁর পরামর্শ, খুব ঠান্ডা না পড়া পর্যন্ত এ নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। জ্বরে আক্রান্তদের বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। জেলার উপ- মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গি বলেন, ‘‘সচেতনতা বৃদ্ধি, ডেঙ্গির মশা নিধন ও উপযুক্ত চিকিৎসার দিকটি গুরুত্ব দিয়েই দেখা হচ্ছে। হাসপাতালগুলিকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy