Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

গ্রেফতার শ্রীনু, ষড়যন্ত্রের নালিশ বিজেপির

খড়্গপুরের রেল মাফিয়া শ্রীনু নায়ডুকে গ্রেফতার করল পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে সিআইডি-র সহযোগিতায় মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে কলকাতার এ জেসি বোস রোড থেকে শ্রীনুকে ধরে পুলিশ। বুধবার ধৃতকে মেদিনীপুর জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। গত মার্চ মাসে খড়্গপুরের খড়িদায় বোমাবাজির ঘটনায় নাম জড়ায় শ্রীনুর। ওই ঘটনায় শ্রীনু-সহ মোট ৬ জনের নামে অভিযোগ দায়ের হয়। তাঁদের মধ্যে আগেই দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মেদিনীপুর আদালতে শ্রীনু নায়ডু।— নিজস্ব চিত্র।

মেদিনীপুর আদালতে শ্রীনু নায়ডু।— নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৫ ০০:১৪
Share: Save:

খড়্গপুরের রেল মাফিয়া শ্রীনু নায়ডুকে গ্রেফতার করল পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে সিআইডি-র সহযোগিতায় মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে কলকাতার এ জেসি বোস রোড থেকে শ্রীনুকে ধরে পুলিশ। বুধবার ধৃতকে মেদিনীপুর জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। গত মার্চ মাসে খড়্গপুরের খড়িদায় বোমাবাজির ঘটনায় নাম জড়ায় শ্রীনুর। ওই ঘটনায় শ্রীনু-সহ মোট ৬ জনের নামে অভিযোগ দায়ের হয়। তাঁদের মধ্যে আগেই দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিল শ্রীনু। বেআইনি অস্ত্র রাখা, খুনের চেষ্টা-সহ একাধিক অভিযোগে শ্রীনুর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সূপার ভারতী ঘোষ বলেন, “নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে কলকাতা থেকে মঙ্গলবার শ্রীনু নায়ডুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” উল্লেখ্য, পুরভোটে খড়্গপুর পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি-র প্রার্থী হয়েছেন শ্রীনু নায়ডুর স্ত্রী পূজা নায়ডু। বিজেপি-র দাবি, ভোটের আগে শাসক দলের চাপেই শ্রীনুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২০ মার্চ খড়্গপুরের খরিদার কুমোরপাড়া এলাকায় স্থানীয় দুষ্কৃতীদের দুই গোষ্ঠীর গোলমাল বাধে। শঙ্কর রাওয়ের গোষ্ঠীর সঙ্গে দীপঙ্কর শুক্লর গোষ্ঠীর সংঘর্ষে বোমাবাজির ঘটনাও ঘটে। জখম হন শঙ্কর। পরে পুলিশে শ্রীনু নায়ডু, দীপঙ্কর শুক্ল-সহ ৬ জনের নামে ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ দায়ের করেন জখম যুবক শঙ্করের মা জে উমা রাও। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ আগেই দীপঙ্কর শুক্ল ও সুমিত শর্মাকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের দাবি, ঘটনার পর থেকই শ্রীনু অধরা ছিল। কয়েকদিন আগে রাতে শ্রীনুর খোঁজে তাঁর বাড়িতেও হানা দেয় পুলিশ। যদিও শ্রীনুর স্ত্রী পূজা নায়ডুর দাবি, ওই বোমাবাজির ঘটনার দিন শ্রীনু দিল্লিতে ছিল। ভোটের আগে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করতেই পুলিশ এ সব করছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রীনুকে ধরতে কলকাতায় যান খড়্গপুরের এসডিপিও সন্তোষ মণ্ডল, আইসি দীপক সরকার-সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী। সিআইডি-র সহযোগিতায় শ্রীনুর মোবাইল টাওয়ারের অবস্থান দেখে কলকাতার নিজাম প্যালেস সংলগ্ন এজেসি বোস রোড থেকে শ্রীনুকে ধরে খড়্গপুর পুলিশ। বুধবার সকালে শ্রীনুর গ্রেফতার হওয়ার খবর পেয়ে বিজেপি প্রার্থী পূজা নায়ডু দাবি করেন, পুলিশ তৃণমূলের চাপেই ওঁকে গ্রেফতার করেছে। তবে মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছেন।

ভোটের আগে শ্রীনুর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে চাইছে বিজেপিও। বিজেপি-র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “তৃণমূলই শ্রীনুকে তৈরি করেছিল। আর তৃণমূল নিজেদের স্বার্থেই পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশ করে শ্রীনুকে গ্রেফতার করিয়েছে। তাই ওরাই এই গ্রেফতারের কারণ বলতে পারবে। আমাদের সঙ্গে শ্রীনুর কোনও সম্পর্ক নেই।’’ তুষারবাবুর অভিযোগ, ‘‘ভোটের আগে শ্রীনুকে গ্রেফতার করে ওঁর স্ত্রীর মনোবল ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। তবে এই চেষ্টা সফল হবে না। আমরা পূজার সঙ্গে আছি।’’ তাঁর দাবি, এই ঘটনায় পূজার বিপুল ভোটে জয় নিশ্চিত হল। যদিও বিজেপির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী বলেন, ‘‘পুলিশ নিজের কাজ করেছে। যাঁরা আমাদের নামে অভিযোগ তুলছে, তাঁদের আসল পরিচয় মানুষ জানে।’’ যদিও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারণা, শ্রীনুর স্ত্রী বিজেপির হয়ে ভোটে লড়ছেন। তাই পুরভোটেও বিজেপির হয়ে প্রভাব খাটাতে পারে শ্রীনু। এই আশঙ্কা থেকেই বিভিন্ন ঘটনায় অভিযুক্ত শ্রীনুকে গ্রেফতারে চাপ দিয়েছে শাসকদল।

খড়্গপুরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নিউ সেটলমেন্ট সংলগ্ন রেলবস্তি এলাকার বাসিন্দা শ্রীনু পেশায় খড়্গপুর রেল কারখানার কর্মী। ন’য়ের দশকে রেলের বিভিন্ন কাজে আধিপত্য ছিল রেল মাফিয়া বাসব রামবাবুর ঠিকাদার সংস্থার। উদয় মাইতি, মানস চৌবে, গৌতম চৌবে-সহ একাধিক ব্যক্তিকে খুনের অভিযোগে রামবাবু ৭ বছর জেল বন্দি ছিলেন। রামবাবু জেলে থাকার সময় তাঁর সাম্রাজ্যে ভাগ বসিয়ে উত্থান হয় শ্রীনুর। রেলের ওয়াগন শপ, আর ইয়ার্ড, ওয়ার্ক শপ, জেনারেল স্টোরে এখনও শ্রীনুর ঠিকাদারি সংস্থার একচেটিয়া রাজত্ব।

এর আগেও একাধিক অপরাধের ঘটনায় নাম জড়ায় শ্রীনুর। ২০১০ সালে খড়্গপুরের এক শপিং মলে ডাকাতি, ২০১১ সালে রামবাবুর কনভয়ে হামলা, ২০১২ সালের ২৯ জুলাই রাধেশ্যাম গুপ্ত খুনের ঘটনায় অভিযোগ ওঠে শ্রীনুর বিরুদ্ধে। এর আগেও একাধিক বার শ্রীনুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যদিও প্রতিবারই জামিন পেয়ে যান শ্রীনু। কয়েকদিন আগে শ্রীনুর স্ত্রী পূজা নায়়়ডু বিজেপিতে যোগ দেন। শ্রীনু নিজে বিজেপিতে যোগ না দিলেও পৃথক মঞ্চ গড়েন। মঞ্চের নাম দেন ‘ভগত অ্যান্টি পলিটিক্যাল ফেডারেশন’।

শ্রীনুর গ্রেফতারির খবর পেয়ে এ দিন সকালেই ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে যান বিজেপির শহর কমিটির সভাপতি প্রেমচাঁদ ঝা। এ দিন প্রেমচাঁদ ঝা বলেন, “শ্রীনু নায়ডু যদি অপরাধীও হয় তবে তার স্ত্রীতো দোষী নয়। ওঁর স্ত্রী আমাদের প্রার্থী। আমাদের মনে হচ্ছে পূজার মনোবল ভেঙে দিতে তৃণমূলের চক্রান্তে পুলিশ এ সব করেছে। তবে শ্রীনুর গ্রেফতারের পরেও পূজার জয় নিশ্চিত।” এ দিনই সাংবাদিক বৈঠক করে পূজা বলেন, “এলাকার মানুষের আমার প্রতি অনেক প্রত্যাশা। সেই প্রত্যাশা আমি কাউন্সিলর হয়ে পূরণ করতে চাই। পুলিশ শাসকদলের চাপে বাধ্য হয়ে ওঁকে মিথ্যে মামলায় গ্রেফতার করেছে। তাই নির্বাচনেও রিগিংয়ের আশঙ্কা করছি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE