৭ অগস্ট ঝাড়গ্রামে নাটকের কর্মশালা শেষে শ্রাবন্তী চক্রবর্তী (চিহ্নিত)। নিজস্ব চিত্র।
নিয়মিত নাটকের চর্চা করতেন শ্রাবন্তী চক্রবর্তী। শনিবার অপমৃত্যুর রাতেও গিয়েছিলেন নাট্য সংস্থায়।
ঝাড়গ্রাম শহরের ‘প্রয়াস শিল্পচর্চা নিকেতন ও নাট্য সংস্থা’র সঙ্গে বছর দশেক ধরে যুক্ত ছিলেন শ্রাবন্তী। সম্প্রতি ঝাড়গ্রামে নাটকের এক কর্মশালায় কলকাতার বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব কল্পনা বরুয়ার কাছে অভিনয়ের প্রশিক্ষণও নেন শ্রাবন্তী। সেই কর্মশালার উদ্দেশ্য ছিল নাটক দিয়ে আরও বেঁধে বেঁধে থাকার মাধ্যমে প্রশান্তিলাভ। কিন্তু শ্রাবন্তীর সেই স্বপ্ন অধরাই থাকল।
ওই নাট্য সংস্থার সম্পাদক তথা শহরের বিশিষ্ট নাট্যকর্মী প্রদীপ চক্রবর্তীর কাছেই শ্রাবন্তীর নাটকে হাতেখড়ি। প্রদীপ জানাচ্ছেন, কলেজে পড়ার সময় থেকে শ্রাবন্তী তাঁর সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ‘জাতীয় বীর’, ‘মুনিয়া’, ‘কক্ষপথ’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন। সংস্থার মহড়া কক্ষ সাফ করা, নথিপত্র রক্ষণাবেক্ষণের কাজও করতেন। প্রদীপ বলছেন, ‘‘বড্ড আবেগপ্রবণ ছিল মেয়েটা। বাইরে থেকে যতটা বোল্ড মনে হত, ঠিক ততটাই ভিতরে-ভিতরে ভালবাসার অভাব বোধ করত। দুই সন্তানের জন্য ওর মধ্যে বেঁচে থাকার অসম্ভব স্পৃহা ছিল।’’ সহশিল্পীরা জানালেন, মাসির কাছেই শ্রাবন্তী বড় হন। হাসপাতালের কর্মী মাসি এখন প্রয়াত। যে বাড়িতে শ্রাবন্তী থাকতেন, সেটি মাসিরই। কেব্ল টিভি সংস্থার কর্মী বাপি চক্রবর্তীকে ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন শ্রাবন্তী। পরে বাপির ব্রেন টিউমার ঘরা পড়ে। তবে অস্ত্রোপচারের পরে সুস্থই ছিলেন।। পরে ফের অসুস্থ হয়ে বাপির মৃত্যু হয়।
তবে শ্রাবন্তীকে খুনের অভিযোগে ধৃত ঝাড়গ্রাম থানার কনস্টেবল প্রতাপ নস্করের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা নাট্যদলের কেউই জানতেন না। প্রদীপ বলছেন, ‘‘বাপির মৃত্যুর পরে জানতে চেয়েছিলাম দু’টো বাচ্চাকে নিয়ে একা থাকবি কী করে? শ্রাবন্তী বলেছিল, ‘আমাকে কেউ ভালবেসে আর বিয়ে করবে না’।’’ সহশিল্পীরা জানাচ্ছেন, স্বামীর মৃত্যুর পরে ওষুধের দোকানে কাজ করতেন শ্রাবন্তী। রাত পর্যন্ত দোকানের কাজ চলায় নাটকের সংস্থায় আসা অনিয়মিত হয়ে গিয়েছিল। সম্ভবত ওই সময়ই প্রতাপের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান শ্রাবন্তী। অনলাইন সংস্থার সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরুর পরে ফের নাটকের দলে নিয়মিত আসা যাওয়া শুরু করেন শ্রাবন্তী। শনিবারও সন্ধ্যায় গিয়েছিলেন। প্রদীপ বলেন, ‘‘নাটক নিয়ে নানা আলোচনা সেরে রাতে বাড়ি ফিরল মেয়েটা। সেই শেষ দেখা, কেউই ভাবিনি।’’
এ দিকে, শ্রাবন্তীর মামা খুনের অভিযোগ দায়ের করলেও, তদন্তকারীরা এটি আত্মহত্যা বলেই মনে করছে। এতে ক্ষোভও ছড়িয়েছে অরণ্যশহরে। মঙ্গলবার রবীন্দ্র পার্কে আলোচনায় বসেন বিভিন্ন স্তরের নাগরিকরা। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, উপযুক্ত তদন্ত করে অভিযুক্ত পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে কড়া আইনি পদক্ষেপের দাবিতে আজ, বুধবার জেলা পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা অবশ্য বলেন, ‘‘তদন্ত যথাযথ ভাবেই হচ্ছে। মৃতার মোবাইলের গত এক বছরের কল-রেকর্ড পরীক্ষা করা হচ্ছে। ওই কনস্টেবল ছাড়া ঘটনায় আর কেউ জড়িত কিনা, তা-ও দেখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy