বিরবাহা হাঁসদা।
সঙ্কটে জোড়া ফুলের সহায় বনফুল। নাকি সে ফুলেই সঙ্কট বাড়ছে জোড়াফুলে!
তিনি প্রতিমন্ত্রী। অথচ রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর রাজ্য সফরে ‘মিনিস্টার ইন ওয়েটিং’ হিসেবে আগাগোড়া দেখা গেল জঙ্গলমহলের ভূমিকন্যা বিরবাহা হাঁসদাকে। অভ্যর্থনা জানানো থেকে রাষ্ট্রপতির প্রায় প্রতিটি কর্মসূচিতে তিনি ছিলেন। বিরবাহার এমন গুরুত্ব বাড়ায় শাসকদলের অন্দরেই শুরু হয়েছে জল্পনা। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, পঞ্চায়েত ভোটের আগে জোড়া ফুলের (পড়ুন তৃণমূলের) আদিবাসী জনিত সঙ্কটের মুহূর্তে বার বার সামনে আনা হচ্ছে বনফুলকে (পড়ুন বিরবাহা। সাঁওতালি ভাষায় বিরবাহার অর্থ বনফুল)। কারণ, আদিবাসী সামাজিক সংগঠনগুলির একাংশ নানা দাবিতে আন্দোলন করছে। কুড়মিরাও জনজাতি তালিকাভুক্তির দাবিতে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জঙ্গলমহলে শাসকদলের মুখ ও মুখ্যমন্ত্রীর সরাসরি প্রতিনিধি কি তাহলে বিরবাহাই? জঙ্গলমহলে এখন কান পাতলেই মোড়ে মোড়ে এমন আলোচনা ও জল্পনা। গুরুত্ব বাড়ায় প্রতিমন্ত্রীরও একক জায়গা তৈরি হচ্ছে। এমন আশঙ্কায় তৃণমূলের একাংশ নেতা-কর্মীর মধ্যে বাড়ছে অসন্তোষও। শাসকদলের এক নেতার কথায়, ‘‘ঝাড়খণ্ড পার্টি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া বিরবাহার এই দ্রুত উত্থান কেউ কেউ মেনে নিতে পারছেন না। মুখ্যমন্ত্রী বিরবাহাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। বিরবাহাকে যাঁরা মানতে পারবেন না সেটা তাঁদের সমস্যা।’’
রাষ্ট্রপতি আদিবাসী। সে ক্ষেত্রে শাসক দল যে ভাবে একজন আদিবাসী মুখকে তাঁর ছায়াসঙ্গী করে রাখল তা ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে শাসক শিবিরের ব্যাখ্যা, নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির সফরে একজন ‘মিনিস্টার ইন ওয়েটিং’-কে রাখতেই হত। তাই বিরবাহাকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু নেপথ্যে কি কোনও অন্য সমীকরণ নেই? শাসক শিবিরের অন্দরেই ভাসছে অন্য ব্যাখ্যা। মন্ত্রিসভায় আদিবাসী মুখ হিসেবে জ্যোৎস্না মান্ডি, সন্ধ্যারানি টুডুদেরও রাষ্ট্রপতির সফরসঙ্গী করা যেত। জ্যোৎস্না প্রতিমন্ত্রী। সন্ধ্যারানি স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। কিন্তু সকলকে ছেড়ে বিরবাহাকে বেছে নেওয়ার নেপথ্যে রয়েছে রাজনীতি। রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে মন্ত্রী অখিল গিরির কুমন্তব্যের পাল্টা হিসেবে তৃণমূল সামনে এনেছিল বিরবাহা সম্পর্কে শুভেন্দু অধিকারীর অশালীন মন্তব্যকে। সে ক্ষেত্রে বিরবাহাকে সামনে রাখলে তা পরোক্ষে বিজেপির অস্বস্তির কারণ হতে পারে। বিরবাহা বুধবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্নামঞ্চ এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর উপস্থিতিতে অভিষেক ফের শুভেন্দুর সেই অশালীন মন্তব্যের প্রসঙ্গ তুলেছেন।
সোমবার কলকাতা বিমানবন্দরে রাজ্যের তরফে বিরবাহা, পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানাতে যান। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালের সঙ্গে বিরবাহা বায়ুসেনার একই চপারে উড়ানসঙ্গী হয়ে নামেন রেসকোর্সের আরসিটিসি হেলিপ্যাডে। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী ফুলের তোড়া দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানান। এরপর এলগিন রোডে নেতাজির বাড়ি, জোড়াসাকো ঠাকুর বাড়ি সহ রাষ্ট্রপতির প্রতিটি কর্মসূচিতেই দেখা গিয়েছে বিরবাহাকে। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ঝাড়গ্রামের একটি আদিবাসী নৃত্যদলের মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন বিরবাহা। মুখ্যমন্ত্রীকে আদিবাসী প্রথার পাঞ্চি শাড়িও জড়িয়ে দেন প্রতিমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীও মধ্যমণি হয়ে বিরবাহার সঙ্গে আদিবাসী নাচের তালে পা মিলিয়েছিলেন। মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালের সঙ্গে একই চপারে শান্তিনিকেতনও গিয়েছিলেন বিরবাহা। মঙ্গলবার শান্তিনিকেতন থেকে চপারে রাষ্ট্রপতি কলকাতা বিমানবন্দরে যান। সেখান থেকে বায়ুসেনার বিমানে নয়াদিল্লি ফিরে যান। গোটা কর্মসূচিতে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে গোড়ায় ‘জোহার’ (সাঁওতালি ভাষায় নমস্কার) ছাড়া কোনও কথা হয়নি বিরবাহার। তবে সূত্রের খবর, বিদায়কালে প্লেনে ওঠার আগে দৌপদী সাঁওতালিতে বিরবাহার সঙ্গে কথা বলেন। বিরবাহা জানাচ্ছেন, দু’দিন সঙ্গে থাকার জন্য রাষ্ট্রপতি তাঁকে ধন্যবাদ জানান। প্রত্যুত্তরে বিরবাহাও রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এটা আমারও সৌভাগ্য।’
বিরবাহা বলছেন, ‘‘দেশের প্রথম আদিবাসী মহিলা রাষ্ট্রপতির প্রথম রাজ্য সফরে আমাকে সঙ্গে থাকার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আমি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞ।’’
ভোটপথ ফুলে ফুলে ঢাকা! নাকি ফুলে লুকিয়ে কাঁটা! দায়িত্বের পাশাপাশি দায় বাড়ছে বনফুলের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy