দাঁতনে বিজেপির প্রস্তুতি সভা। নিজস্ব চিত্র।
রেলশহরে বিজেপির প্রভাব ছিলই। গত বিধানসভা উপ-নির্বাচনে যাঁর নেতৃত্বে শহরে জিতেছিল তৃণমূল, সেই শুভেন্দু অধিকারীও এখন বিজেপিতে। দলবদলের পরে এ বার গেরুয়া মঞ্চে সভা করতে রেলশহরে আসছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও এই কর্মসূচি যে কার্যত নিশ্চিত তা মানছেন বিজেপি নেতৃত্ব। সেখানে শুভেন্দুর হাত ধরে রেলশহরের বেশ কয়েকজন নেতা-নেত্রীর বিজেপিতে যোগদানের সম্ভাবনাও বাড়ছে।
বিজেপি সূত্রে খবর, প্রাথমিকভাবে ২৬ ডিসেম্বর শুভেন্দুর সেই সভার পরিকল্পনা ছিল। যা আপাতত বাতিল হচ্ছে। তবে নতুন বছরের শুরুতেই সেই সভা হওয়ার কথা। ওই সভাতেই ‘মেগা’ যোগদান হতে পারে বলেও বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। খড়্গপুরের এক বিজেপি নেতার দাবি, বিভিন্ন দলের বিদায়ী কাউন্সিলর, নেতা-নেত্রী সেই সভায় পদ্ম পতাকা হাতে নেবেন। তালিকায় আছেন, তৃণমূলের এক জেলা নেতা ও মুসলিম নেতাও। দু’জনেই প্রাক্তন কাউন্সিলর। এছাড়াও শহরের বর্তমান তৃণমূল বিধায়ক প্রদীপ সরকারের ঘনিষ্ঠ একদল যুবকও শুভেন্দুর হাত ধরে বিজেপি আসার জন্য যোগাযোগ করেছেন।
বিজেপির রাজ্য নেতা তথা রাঢ়বঙ্গের মুখপাত্র তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “শুভেন্দু যে দিন চাইবেন খড়্গপুর শহরে সেদিনই সভা হবে। সেটা দু’-একদিনের মধ্যে চূড়ান্ত হয়ে যাবে। খড়্গপুরে তৃণমূল-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বহু নেতৃত্ব ও কাউন্সিলর বিজেপিতে যোগ দেবে। শুভেন্দু নিজেই সেই দায়িত্ব নিয়েছেন। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই আমরা এটা দেখতে পাব।”
খড়্গপুর শহরের বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা ঘনিষ্ঠ মহলে শুভেন্দুর মন্ত্রীত্ব ত্যাগের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ তথা তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি তথা বিদায়ী কাউন্সিলর জহরলাল পাল তো প্রকাশ্যেই শুভেন্দুকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। তাঁর ছেলে যুব তৃণমূলের শহর সভাপতি অসিত পালের মুখেও শোনা গিয়েছে শুভেন্দু বন্দনা। অসিত বলছেন, ‘‘আমাদের হয়তো দলের প্রতি ক্ষোভ-বিক্ষোভ রয়েছে। দলে থেকেই তাঁর বিচার চাইব। কিন্তু শুভেন্দুদার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বরাবর থাকবে। প্রয়োজনে দাদার জন্য জীবন দিতেও রাজি আছি। দাদার দলবদলে শহরে প্রভাব পড়বে কি না সেটা সময় বলবে।” আরেক বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর শ্যামল রায়ের কথায়, ‘‘শুভেন্দুদাকে বহু মানুষ ভালবাসে। উনি যদি খড়্গপুরে নজর দেন তবে প্রভাব তো পড়বেই।” একই কথা বলছেন শহরের বাসিন্দা কংগ্রেসের জেলা কার্যকরী সভাপতি দেবাশিস ঘোষও।
রেলশহরের আগেই দাঁতনে আসবেন তিনি। বিজেপি সূত্রে খবর, ২৪ ডিসেম্বর কাঁথিতে সভা করার কথা আছে শুভেন্দুর। তারপরে ২৭ ডিসেম্বর দাঁতনে মিছিল ও সভার কর্মসূচি আছে বিজেপির। সেখানে থাকার কথা শুভেন্দুর। গত শনিবার মেদিনীপুরের সভায় শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরের দিন দাঁতনের কালীচণ্ডীহাট থেকে সরাইবাজার পর্যন্ত মিছিল করেছিল তৃণমূল। কেন্দ্রের কৃষি আইনের বিরুদ্ধে হওয়া সেই মিছিল থেকে রাস্তার দুপাশে থাকা শুভেন্দুর ছবি লাগানো ফ্লেক্স ছিঁড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। ভেঙে দেওয়া হয়েছিল শুভেন্দু অনুগামীদের অস্থায়ী কার্যালয়। ২৭ ডিসেম্বর বিজেপির কর্মসূচি তারই পাল্টা হতে চলেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
তার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে গেরুয়া শিবিরে। সোমবার রাতে দাঁতন দক্ষিণ মণ্ডলের কার্যালয়ে জেলা সভাপতি শমিত দাশের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়। বিজেপি সূত্রে খবর, মিছিল ও সভা আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের দাঁতন উত্তর ও দক্ষিণ মণ্ডলকে।
বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশ বলেন, ‘‘উনি (শুভেন্দু) কর্মসূচি নিয়েছেন। সব জায়গাতেই যাবেন। দাঁতনে যেহেতু ঘৃণ্য কাজ করেছে তৃণমূল তাই আমরা মনে করেছি দাঁতনেই প্রথমে এর প্রতিবাদ হওয়া উচিত। মিছিল এবং সভা হবে।’’
শুভেন্দুর কর্মসূচি নিয়ে ভাবতে রাজি নয় তৃণমূল। দলের দাঁতন ১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি প্রতুল দাসের দাবি, ‘‘শুভেন্দু অনুগামীরাই তার ফ্লেক্স ছিঁড়েছে। আর উনি দাঁতনে আসতেই পারেন। তবে শুভেন্দু অধিকারী কেন, প্রধানমন্ত্রী এলেও দাঁতনের তৃণমূলের কোনও ক্ষতি করতে পারবেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy