ফাইল চিত্র।
প্রায় দু’দশক ধরে পূর্ব মেদিনীপুরে দায়িত্ব সামলেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতির। দলের জেলার নেতাদের অনেকেই তাঁকে অভিভাবক হিসাবে সম্বোধন এবং শ্রদ্ধা করেন। তৃণমূলের সেই প্রবীণ সাংসদ শিশির অধিকারীর জেলা সভাপতির পদ থেকে অপসারণে কার্যত বিস্মিত তাঁর এক সময়ের সহযোদ্ধারা। কেউ রাজনৈতিক মতাদর্শে তাঁর বিরোধী ছিলেন, তো কেউ দলে পাশে থেকেই রাজনীতির ময়দানে লড়াই করেছেন।
আবার, শাসকদল তৃণমূলের একাংশের আশঙ্কা, এমন পোড় খাওয়া রাজনীতিককে এভাবে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জেলায় ব্যুমেরাং হবে না তো দলের কাছে!
মঙ্গলবারই ‘দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদে’র চেয়ারম্যান পদ থেকে শিশিরবাবুকে অপসারিত করা হয়েছে। সেই দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁর বিরোধীগোষ্ঠীর নেতা অখিল গিরিকে। আর বুধবার শিশিরবাবুকে জেলা সভাপতির পদ থেকেও সরিয়ে সেখানে বসানো হয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রকে। এতে জেলার রাজনীতিতে ফের এক নতুন অধ্যায় শুরু হল বলে মনে করছেন শাসক ও বিরোধী দলের নেতারা।
১৯৯৯ সালে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর ২০০১ সাল থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা তৃণমূল সভাপতি ছিলেন শিশির অধিকারী। ২০০৬ সালের ভোটে তিনি এগরা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে লড়ে রাজ্যের তৎকালীন পরিষদীয় মন্ত্রী প্রবোধচন্দ্র সিংহকে হারিয়েছিলেন। শিশিরবাবু জেলা সভাপতি থাকাকালীন ২০০৮ সালে রাজ্যের মধ্যে প্রথম পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের ক্ষমতা দখল করেছিল তৃণমূল। ২০১১ সালে জেলার ১৬ বিধানসভার সবক’টিতেই জয়ী হয় সবুজ শিবির। ২০১৯ সালেও জেলার ২৫ পঞ্চায়েত সমিতি দখল করে তারা। ফলে জেলার রাজনীতিতে তৃণমূলে তাঁর অবদানের কথা স্বীকার করছেন সকলেই।
এক সময় শিশিরবাবুর সাথে রাজনীতি করা কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা ও দক্ষিণকাঁথির প্রাক্তন বিধায়ক শৈলজা দাস বলেন, ‘‘আমি যখন গ্রাম থেকে কাঁথি প্রভাতকুমার কলেজে পড়তে এসেছিলাম, তখন থেকেই শিশিরবাবুকে দেখেছি। উনি কলেজে আমার এক বছরের সিনিয়ার ছিলেন। পরবর্তী সময়ে আমরা একসঙ্গে কংগ্রেসের রাজনীতি করেছি। পুরসভার চেয়ারম্যান হিসাবে কাঁথি শহরে কাজ করেছেন। কংগ্রেসে থাকার সময় আমার সঙ্গে সঙ্ঘাত হয়েছিল। তবে ব্যক্তিগত সম্পর্ক এখনও ভাল রয়েছে।’’ শিশিরের দক্ষতা প্রসঙ্গে শৈলজা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক নেতা হিসাবে শিশিরবাবু ভাল সংগঠক। মানুষ হিসাবেও উনি ভাল। তবে তৃণমূলের জেলা সভাপতির পদ থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত দলের আভ্যন্তরীণ বিষয়।’’
আবার, সিপিএমের জেলা সম্পাদক তথা প্রাক্তন জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিরঞ্জন সিহির কথায়, ‘‘প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা হিসাবে শিশিরবাবুকে শ্রদ্ধা করি। রাজনৈতিক নেতা হিসাবে উনি যোগ্য ছিলেন। আমি যখন সভাধিপতি ছিলাম, উনি বিধায়ক ছিলেন। উন্নয়নের কাজে উনি সহযোগিতা করেছেন। ফোন করলেই ধরতেন। কোনও দিন খারাপ ব্যবহার করেননি। ওঁর ছেলে শুভেন্দু অধিকারীর জন্য তৃণমূলের নেতৃত্ব হয়তো তাঁকে অবিশ্বাস করেছেন। তবে দলের জেলা সভাপতি হিসাবে উনি যোগ্য ছিলেন।’’ পশ্চিম পাঁশকুড়ার প্রাক্তন বিধায়ক তথা সিপিআই রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য চিত্তরঞ্জন দাশঠাকুর বলছেন, ‘‘রাজনৈতিক দিক থেকে সম্পর্ক ভাল ছিল না। তবে শিশিরবাবু কোনও দিন খারাপ ব্যবহার করেননি। ফোন করলেই ধরতেন। প্রবীণ রাজনীতিক হিসাবে ওঁকে সম্মান করি। তাঁকে দলের জেলা সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া অবশ্য তৃণমূলের দলীয় সিদ্ধান্ত।’’
এক সময় শিশিরবাবুর সঙ্গে কংগ্রেসে রাজনীতি করেছেন প্রাক্তন বিজেপি জেলা সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় পানিগ্রাহী। তিনি স্পষ্টই বলছেন তৃণমূলের এই সিদ্ধান্ত ভুল। মৃত্যুঞ্জয়ের কথায়, ‘‘শিশিরবাবু বরাবরই দাপুটে রাজনীতিবিদ। জেদি মানুষ। যা করতেন তা নিষ্ঠার সঙ্গে করেন। শিশিরবাবুকে জেলা সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। তৃণমূল হয়তো ওঁর উপর আস্থা রাখতে পারছে না।’’ তৃণমূলের একটি অংশও দলের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহমত নন। যদিও এ ব্যাপারে তাঁরা কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি নন। তৃণমূলের প্রবীণ নেতা তথা জেলা সহ-সভাপতি চিত্তরঞ্জন মাইতি বলছেন, ‘‘শিশিরদা ভাল মানুষ। দীর্ঘদিনের লড়াকু নেতা, দক্ষ সংগঠক। তবে শারীরিক অসুস্থ হওয়ার কারণে আসন্ন কঠিন লড়াইয়ের দিকে লক্ষ্য রেখে দল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy