Advertisement
১৮ জানুয়ারি ২০২৫
Suvendu Adhikari

‘দাদা’র মঞ্চে দলবদলে বিতর্ক

নন্দীগ্রামের একাধিক তৃণমূল নেতার দাবি, না জানিয়েই শুক্রবার বিজেপি’র সভায় দলবদলু হিসাবে তাঁদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। 

শহিদ মঞ্চে মনীষা। নিজস্ব চিত্র।

শহিদ মঞ্চে মনীষা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২১ ০২:৩১
Share: Save:

সভায় পড়েছিল ‘ঢিল’। তাতে তাল কেটেছিল শুভেন্দু অধিকারীর নন্দীগ্রামের সভার। ওই সভার চর্চা পরদিনও থামছে না। শনিবার সভায় হাজির হওয়া শহিদ পরিবারের পরিচয় এবং দলবদলের তালিকা ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

নন্দীগ্রামের একাধিক তৃণমূল নেতার দাবি, না জানিয়েই শুক্রবার বিজেপি’র সভায় দলবদলু হিসাবে তাঁদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আর ২০১৬ সালে মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবারকেও শহিদ হিসাবে মঞ্চে হাজির করা হয়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের। তাদের দাবি, এভাবে শহিদ পরিবারের আবেগ-অনুভূতি নিয়ে খেলা করছেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু।

শুক্রবার নন্দীগ্রামের স্টেট ব্যাঙ্ক সংলগ্ন মাঠে বিজেপি’র মহা যোগদান কর্মসূচি তথা শুভেন্দুর জনসভা ছিল। সভায় যাঁরা বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন তাঁদের নাম মাইকে ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই তালিকা ঘিরেই বিতর্ক। তালিকায় উল্লেখ ছিল নন্দীগ্রাম- ২ ব্লকের আমদাবাদ-১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের। ওই পঞ্চায়েত প্রধানের নাম শ্রাবণী হাজরা গায়েন। তবে বিজেপি’র তালিকায় ওই পঞ্চায়েতের প্রধান হিসাবে নাম ছিল ‘শ্যামলী’।

এদিকে, শ্রাবণীর দাবি, শুক্রবার সারাদিন তিনি পঞ্চায়েত অফিসে বসেই কাজকর্ম করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কে বা কারা ওই তালিকাতে আমার নাম দিয়েছেন, জানি না। আমি তৃণমূলেই রয়েছি। অন্য কোনও দলে যাব না। দলবদলের প্রস্তাবও আসেনি আমার কাছে। শুক্রবার সারাদিন পঞ্চায়েত অফিসেই ছিলাম।’’

আবার, তালিকায় নাম রয়েছে নন্দীগ্রাম-১ নম্বর ব্লকের ২৮ নম্বর জেলা পরিষদ সদস্য নাসিমা খাতুনের। তাঁর দাবি, সভার দিন তিনি বাড়িতেই ছিলেন। নাসিমার কথায়, ‘‘শুভেন্দুবাবু নন্দীগ্রামবাসীর ভোটে জিতে নেতা হয়েছেন। উনি এখন নন্দীগ্রামের মানুষকে জেহাদি বলেছেন। এর পরেও ওই দলে আমি নাম লেখাব! বিজেপির উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এই নোংরা খেলা খেলছে। তালিকায় নাম তুলে তারা মনে করেছে আমরা তৃণমূলের কাছে আস্থা হারাব। আমার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’

আবার তৃণমূল ছেড়ে যাঁরা শুক্রবার বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের একাংশের মধ্যেও ক্ষোভ রয়েছে। তাঁদের দাবি, তাঁরা ভেবেছিলেন বিজেপি’র রাজ্যে সভা দিলীপ ঘোষের হাতে বিজেপির দলীয় পতাকা তুলে নেবেন। কিন্তু অনুষ্ঠান মঞ্চ আলাদা থাকায় তা সম্ভব হয়নি। নন্দীগ্রাম ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির কর্মদক্ষ তারাপদ খাটুয়া বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম বিজেপির রাজ্য সভাপতি হাত থেকে পতাকা নেব। কিন্তু সেই পরিস্থিতি ছিল না। তাই খারাপ লেগেছে।’’

দলবদলের তালিকা ঘিরে যেমন বিতর্ক হচ্ছে, তেমনই বিভ্রান্তি রয়েছে সভায় হাজির শহিদ পরিবারদের নিয়েও। বিজেপি’র তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, ৩০টি শহিদ পরিবার মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সেই তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, চণ্ডীপুর, নন্দীগ্রাম এবং খেজুরি থেকে কিছু পরিবারকে এনে ‘শহিদ পরিবার’ আখ্যা দিয়েছে বিজেপি। যার উদাহরণ হিসাবে শহিদ পরিবারের মঞ্চে একদম সামনে সারিতে বসা নন্দীগ্রাম-২ ব্লকে ঘোলপুকুর এলাকার বাসিন্দা মনীষা দাসের কথা উল্লেখ করেছেন তাঁরা। অভিযোগ, মনীষার পরিবারের কেউ জমি আন্দোলনের সময় নিহত হননি।

এ কথা কার্যত স্বীকারও করেছেন মনীষা। তাঁর কথায়, ‘‘বাবা (বাস্তবে তাঁর দাদু) বিভূতিভূষণ দাসকে ২০১৬ সালে ২৬ অগস্ট খুন করা হয়। সেই জন্য শহিদ পরিবারের মঞ্চে বসেছিলাম।’’ মনীষার কাকু বিপুলানন্দ দাস বলেন, ‘‘মনীষা কী করে শহিদ পরিবারের মঞ্চে চলে গেল, তা বুঝতে পারলাম না। আমার বাবা প্রাক্তন শিক্ষক ছিলেন। বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছিল।’’ এমন বিতর্ক প্রসঙ্গে নন্দীগ্রাম১ তৃণমূল ব্লক সভাপতি স্বদেশ রঞ্জন দাস বলেন, ‘‘শহীদ পরিবারদের নিয়ে নাটক নন্দীগ্রামের মানুষ ধরে ফেলেছেন।’’

বিতর্ক এবং বিভ্রান্তি প্রসঙ্গে বিজেপি’র ওই সভার আয়োজক তথা জেলা (তমলুক) সভাপতি নবারুণ নায়েক বলেন, ‘‘ওঁরা সম্মতি দিয়েছিলেন বলেই দলবদলের তালিকায় নাম ছিল। এখন কেন অন্য কথা বলছেন, জানি না। মনীষার মাথার সমস্যা রয়েছে। ও এসে বসে গিয়েছিল। আর সরানো যায়নি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Suvendu Adhikari TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy