এমন অন্তত ২০টি বিষধর সাপ মিটিয়ে মেরা ফেলা হয়েছে।
ভেড়ির দাপটে চাষের জমি নষ্ট হওয়া, নিকাশি বিপর্যয়ের অভিযোগ নতুন নয়। এ বার ভেড়ির জন্য সাপের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠল।
ভেড়ির কারণে কোলাঘাটের সাহাপুর গ্রামে সাপের উপদ্রব প্রচণ্ড বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর। বাড়ছে সাপের কামড়ে আক্রান্তের সংখ্যা। দিনে রাতে ঘরের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে চন্দ্রবোড়া, কেউটে, গোখরো, কালাচের মতো বিষধর সাপ। আতঙ্কে সাপ দেখলেই পিটিয়ে মেরে ফেলছেন এলাকার মানুষ। আতঙ্ক এতটাই যে, নির্বিষ সাপও মারা পড়ছে। এ ভাবে সাপ পিটিয়ে মারার ফলে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে বলে আশঙ্কা পরিবেশবিদদের।
কোলাঘাট ব্লকের কোলা-২ পঞ্চায়েত এলাকায় সাহাপুর গ্রাম। গত কয়েক মাস ধরে গ্রামের পশ্চিম পাড়ায় সাপের উপদ্রব বেড়েছে মারাত্মক। রীতিমতো বিষধর সাপ। সাহাপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ, কয়েক মাস ধরে ঘরের বিছানায়, রান্নাঘরে, শৌচাগারে ঘুরে বেড়াচ্ছে কেউটে, গোখরো, কালচিতি ও চন্দ্রবোড়ার মতো বিষধর সাপ। কয়েক বছর আগেও এলাকায় সাপের এমন উপদ্রব ছিল না। এমনকী বিষধর সাপও তেমন দেখা যেত না বলে দাবি এলাকার মানুষের। কিন্তু বছর খানেক ধরে শুধু রাত নয়, দিনের আলোতেও যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিষধর সাপ। গত দু’মাসে স্থানীয় দুই মহিলাকে সাপে কামড়েছে। বাসিন্দারা জানান, গত জানুয়ারি মাস থেকে বেশ কয়েকটি সাপে কামড়ানোর ঘটনা ঘটেছে।
কিন্তু হঠাৎ সাপের উপদ্রব বাড়ল কেন?
এলাকার মানুষের দাবি, ভেড়ির দাপটেই বেড়েছে সাপের উপদ্রব। কিন্তু কী ভাবে?
সাহাপুর গ্রামের বাসিন্দা রাজু বেরা বলেন, ‘‘সাহাপুর ও নোনাচক গ্রামের মাঝে প্রায় পাঁচশো বিঘা এলাকায় নিচু জমিতে কোনওদিন চাষ হত না। ফলে ঝোপজঙ্গলে ভরে গিয়েছিল ওই বিস্তীর্ণ অংশ। ক্রমে যা সাপেদের নিশ্চিন্ত আশ্রয় হয়ে উঠেছিল। গত জানুয়ারি মাসে ওই পতিত জমিতে বিশাল ভেড়ি তৈরি হয়। তার জন্য সাফ করে ফেলা হয় ঝোপঝাড় ও জঙ্গল। অভিযোগ, তারপর থেকেই এলাকায় সাপের উপদ্রব বেড়ে গিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। ফলে আতঙ্কে দিন কাটছে সাহাপুর গ্রামের পশ্চিম পাড়ার বাসিন্দাদের।
দুর্গাপুজোর অষ্টমীর দিন সন্ধ্যায় সাহাপুর গ্রামের নির্মলা মণ্ডলকে বাড়ির মধ্যেই কামড়ায় চন্দ্রবোড়া সাপ। স্থানীয় পাইকপাড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উপযুক্ত চিকিৎসা পরিষেবা না মেলায় তাঁকে তমলুক হাসপাতালে পাঠানো হয়। দীর্ঘদিন আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন নির্মলা। দিন দশেক আগে প্রতিমা কর নামে গ্রামের এক প্রৌঢ়াকে কামড়ায় একটি গোখরো। স্থানীয় বাসিন্দা রাজু বেরা বলেন, ‘‘আগে এত বড় সাপ এলাকায় দেখিনি। ঘরের ভিতর যখন তখন সাপ ঢুকে পড়ছে। খুব আতঙ্কে দিন কাটছে। প্রশাসনকে জানিয়েও লাভ হয়নি।’’ এই অবস্থায় আত্মরক্ষার জন্য এলাকার মানুষ সাপ দেখলেই পিটিয়ে মেরে ফেলছেন। যার জেরে বিষধর নয়, এমন সাপও মারা পড়ছে।
কিন্তু এ ভাবে সাপ মেরে ফেলা হলে তা বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি করবে বলে আশঙ্কা পরিবেশবিদদের। সর্প বিশেষজ্ঞ সুব্রত কুমার বুড়াই বলেন, ‘‘এ ভাবে সাপ মারা পড়লে নষ্ট হবে বাস্তুতন্ত্র। এলাকার মানুষকে বলব সাপ না মেরে বন দফতরে খবর দিন। কেউ মেঝেতে শোবেন না। মশারি টাঙিয়ে খাটে শোবেন। বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখুন ও ব্লিচিং ছড়ান। পাশাপাশি এলাকায় মানুষকে সচেতন করতে হবে।’’ তিনি জানান, ওই এলাকায় যাতে কেউ সাপ না মেরে ফেলে সে জন্য তিনি সচেতনতা শিবির করবেন।
এই বিষয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অতিরিক্ত বনাধিকারিক বলরাম পাঁজা বলেন, ‘‘এমন ঘটনা জানা ছিল না। ওই এলাকায় কেউ যাতে সাপ না মেরে ফেলে সে জন্য সচেতনার প্রচার করা হবে। পাশাপাশি সাপ বেরোলে তা ধরে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy