Advertisement
১০ জানুয়ারি ২০২৫
Tree Smuggling

দু’যুগ পরে ফের গাছ কেটে পাচার, প্রশ্ন

জঙ্গলের গাছ ‘ফেলিং’ (বন দফতরের নিয়ম মেনে গাছ কাটা) বাবদ লভ্যাংশের ২৫ শতাংশ যৌথ বন পরিচালন কমিটি পেত। মাওবাদী আন্দোলনের সময় জঙ্গল পাহারা দেওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

ভিতরের জঙ্গল ক্রমশ পাতলা হচ্ছে। সেখানেই রয়েছে দাঁতাল।

ভিতরের জঙ্গল ক্রমশ পাতলা হচ্ছে। সেখানেই রয়েছে দাঁতাল। নিজস্ব চিত্র।

রঞ্জন পাল
শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৫৬
Share: Save:

একের পর এক গাছ কেটে গাড়িতে নিয়ে পাচার। প্রায় দু’যুগ আগের এই প্রবণতা ফের ফিরে এসেছে জঙ্গলমহলে। কিন্তু কেন? তবে কি সর্ষের মধ্যেই ভূত লুকিয়ে রয়েছে? উঠছে প্রশ্ন। গত বছরের ডিসেম্বরে গাছ চুরির ঘটনার পর রাজ্যের দুই প্রধান মুখ্য বনপাল এ বিষয়ে তদন্ত করে গিয়েছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেউ ধরা পড়েনি।

বন দফতরের আধিকারিক থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ মানছেন, বহু বছর ঝাড়গ্রাম জেলায় জঙ্গলের গাছ কেটে এ ভাবে পাচার হয়নি। যৌথ বন পরিচালন কমিটির (আগের নাম বন সুরক্ষা কমিটি) মাধ্যমে লভ্যাংশ বাড়িয়েছে রাজ্য সরকার। তারপরও গাড়ি করে জঙ্গলে ঢুকে কাঠ পাচারের ঘটনা কেন ঘটছে তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

জঙ্গলের গাছ ‘ফেলিং’ (বন দফতরের নিয়ম মেনে গাছ কাটা) বাবদ লভ্যাংশের ২৫ শতাংশ যৌথ বন পরিচালন কমিটি পেত। মাওবাদী আন্দোলনের সময় জঙ্গল পাহারা দেওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে জঙ্গল ফেলিং শুরু হয়। এমনকি লভ্যাংশ বাবদ যৌথ বন পরিচালন কমিটির টাকাও বাড়ানো হয়। এখন কমিটি লভ্যাংশের ৪০ শতাংশ টাকা পায়। যৌথ বন পরিচালন কমিটির কাজ হল জঙ্গল পাহারা দেওয়া। তবে অনেক জায়গায় জঙ্গল লাগোয়া বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে সরু গাছ কাটার অভিযোগ রয়েছে। জেলার এক প্রাক্তন বনকর্তা বলছেন, ‘‘১৯৯৮ সালের পর জঙ্গলের গাছ কেটে পাচারের খবর সে ভাবে আসেনি। ২৪ বছর বাদে ফের আবার এরকম ঘটনা ঘটল। তবে লরি নিয়ে ঢোকা মানেই অনেকের ইন্ধন রয়েছে।’’ ওই কর্তা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এখন বন দফতরের পদ্ধতি অনেক পাল্টে গিয়েছে। আগে বন দফতরের লোকজন গ্রামেগঞ্জে যেত। গ্রামের লোকদের নিয়ে দফায় দফায় মিটিং হত। এখন সেই অর্থে গ্রামের লোককে নিয়ে মিটিং হয় না। ২০১১ সালের পর থেকে গ্রামের মানুষের যোগাযোগ কমে গিয়েছে। তবু অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে যে ভাবে প্রায়ই গাছ কাটা হয়েছে তাতে স্তম্ভিত বন দফতরে আধিকারিকেরা। প্রাক্তন এক বনকর্তা বলছেন, ‘‘পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রাম সীমানা এলাকায় আগেও গাছ চুরি হয়েছে। আগে হাতেনাতে ধরাও পড়েছে। বেলপাহাড়ির ভুলাভেদার জঙ্গলে গাছ কাটতে গিয়ে গাড়ি-সহ ধরা পড়েছিল। পুরুলিয়া সমীনা লাগোয়া এলাকায় এখনও অনেক সময় চুরি হয়।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘পরিকাঠামোর অভাবের সীমানা এলাকায় এলাকায় বন দফতর লোকজন গভীর রাতে পৌঁছতে পারেন না। কিন্তু শহরের এত কাছে গাছ লুটের ঘটনার নজির নেই।’’

দু’যুগ বাদে গাছ লুট নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য পার্থ যাদব বলেন, ‘‘শাসক দলের ইন্ধন ছাড়া এ ভাবে গাছ কাটা সম্ভব নয়। বালি ও মানুষের টাকা যে ভাবে লুট করছে, সে রকম জঙ্গল লুট করছে।’’ জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডু বলেন, ‘‘তৃণমূল নেতা-কর্মীরা যুক্ত না থাকলে গাছ পাচার করা যায় না। ঝাড়গ্রাম সংলগ্ন সামনের দিকে গভীর জঙ্গল দেখাচ্ছে। ভিতরের দিকে ঢুকলে দেখা যাবে মাইলের পর মাইল জঙ্গল ফাঁকা হয়ে গিয়েছে।’’ বন প্রতিমন্ত্রী তথা ঝাড়গ্রামের বিধায়ক বিরবাহা হাঁসদা বলেন, ‘‘ওদের (বিরোধী) কাজ সব সময় উল্টোপাল্টা কথা বলা। মানুষের পাশে থেকে কোনওদিন কাজ করে না। ওদের কাজ সবসময় কুৎসা করা।’’

(শেষ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jhargram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy