Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Smuggling of Trees

একলা হাতি থাকলেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে জঙ্গল

লোধাশুলি থেকে ঝাড়গ্রাম ঢোকার সময় ৫ নম্বর রাজ্য সড়কের ডান পাশে জঙ্গল রাস্তায় ঢুকলেই বরিয়ার জঙ্গল। ফলে জঙ্গল থেকে সহজেই রাজ্য সড়কের উঠে যাওয়া যায়।

বরিয়া জঙ্গলে কাটা শালগাছ।

বরিয়া জঙ্গলে কাটা শালগাছ। নিজস্ব চিত্র।

রঞ্জন পাল, কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:৩৫
Share: Save:

যখনই হাতির ভয় তখনই গাছ চুরি যায়!

গত বছরের ১৮ অক্টোবর, ২৯ নভেম্বর ঝাড়গ্রাম রেঞ্জের বরিয়ার জঙ্গল থেকে মোটা মোটা শাল গাছ পাচার হয়েছে। ১৯ ডিসেম্বরও একই জঙ্গল থেকে গাছ কাটা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলি নিয়ে পালাতে পারেনি পাচারকারীরা। হয়তো নেহাতই ঘটনাচক্র। কিন্তু বাস্তব হল এই যে, ওই তিনদিনই এলাকায় একটি রেসিডেন্সিয়াল দলছুট হাতি ছিল।

কিন্তু হাতির সঙ্গে গাছ চুরির সম্পর্ক কী? বন দফতরের নিয়ম হল, এলাকায় হাতি থাকলে সন্ধ্যা ৬টা থেকেই সকাল পর্যন্ত জঙ্গল রাস্তায় চলাচল করতে নিষেধ করা হয়। এ নিয়ে প্রচার করে বন দফতর। স্বাভাবিক ভাবে জঙ্গল দেখভালের দায়িত্বে থাকা যৌথ বন পরিচালন কমিটির সদস্যেরাও সূর্যাস্তের পরই ঢুকে যান ঘরে। তারপর পুরো অরক্ষিত জঙ্গল। বরিয়া যৌথ বন পরিচালন কমিটির অধীনে প্রায় ২১৯ হেক্টর জায়গা জুড়ে শাল জঙ্গল রয়েছে। জঙ্গল দেখভালের দায়িত্বে বরিয়া যৌথ বন পরিচালন কমিটির মোট ৬০ জন সদস্য। চারটি দলে ভাগ হয়ে ১৫ জন করে সদস্য প্রতিদিন জঙ্গল পাহারা দেন। বরিয়া গ্রামের বাসিন্দা তথা যৌথ বন পরিচালন কমিটির সদস্য প্রবোধকুমার মাহাতো ও শান্তি মাহাতোরা বলছেন, ‘‘হাতি গ্রামে ঢুকলেই সে দিনই আমরা ভয়ে ডিউটিতে যাচ্ছি না। আর সেদিনই শাল গাছ পাচার হচ্ছে এটা আমাদের কাছে একটু সন্দেহ লাগছে। আবার আমরা ডিউটি যেদিন করছি না, সেদিনই গাছ চুরি হওয়ায় আমাদের উপর সন্দেহ করে বন দফতরের একাংশ।’’ বরিয়া বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, গ্রামে হাতি ঢুকে পড়ার খবর নিশ্চয়ই আশেপাশের গ্রামের লোক বা বন দফতরের কেউ তথ্য পাচার করছে কাঠ মাফিয়াদের। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শাল গাছ রাতের অন্ধকারে মেশিনে কেটে পাচার করে দেওয়া হচ্ছে। মূলত মোটা শাল গাছগুলি বারে বারেই কাটছে মাফিয়ারা। প্রথম দু’টি ঘটনায় মোট ৩২ টি গাছ কাটা হয়েছিল। ১৯ ডিসেম্বর রাতে ১৭টি গাছ কেটেছিল পাচারকারীরা। তবে গাছ কেটে পাচার করার আগেই বন সুরক্ষা কমিটি গিয়ে সবকিছু বানচাল করে দেয়। সাত ফুট লম্বা মোট ৪৮টি শাল গাছের গুড়ি বাজেয়াপ্ত করেছিল বন দফতর। যার বাজার মূল্য কয়েক লক্ষ টাকা।

লোধাশুলি থেকে ঝাড়গ্রাম ঢোকার সময় ৫ নম্বর রাজ্য সড়কের ডান পাশে জঙ্গল রাস্তায় ঢুকলেই বরিয়ার জঙ্গল। ফলে জঙ্গল থেকে সহজেই রাজ্য সড়কের উঠে যাওয়া যায়। সেই সুযোগকে কাজে লাগান কাঠ মাফিয়ারা। যৌথ বন পরিচালন কমিটির সদস্যরা আরও বলছেন, গত ৩০ বছর ধরে ঝাড়গ্রাম রেঞ্জে এভাবে জঙ্গলে গাছ পাচার কোনওদিন হয়নি। কিন্তু জঙ্গলে হাতি থাকা অবস্থায় গাছ কাটা তো জীবনের ঝুঁকি? তা ছাড়া বন পরিচালন কমিটির লোকেরা না হয় ঘরের মধ্যে রইলেন। কিন্তু হুলা পার্টির সদস্যেরা বাইরেই থাকেন। তা হলে? স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ বলছেন, যে তিনদিন চুরি হয়েছে সে দিন একটি দলছুট হাতি ছিল। হাতির দল কিন্তু এলাকায় ছিল না। হাতির দল থাকলে হুলা পার্টির লোকজন বেশি থাকে। দলছুট হাতির ক্ষেত্রে তা অনেক কম থাকে, আবার কোনও সময় থাকে না। যারফলে জঙ্গলের ভিতরে গাড়ি ঢুকিয়ে মেশিনে কেটে রাতরাতি পাচার হয়ে গিয়েছে।

হাতির সঙ্গে গাছ কাটার সম্পর্ক কি বন দফতর জানে? ঝাড়গ্রামের ডিএফও পঙ্কজ সূর্যবংশী বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত চলেছ। যাঁরা চুরি করছে তাঁরাও হয়তো ভাবছে, এখন হাতি রয়েছে তার মানে যৌথ বন পরিচালন কমিটি বা বনদফতরের কেউ যাবে না। সেরকম পরিকল্পনা হয়েছিল হয়তো।’’ ডিএফও আর জুড়ছেন, গাছ চুরি করতে এসে জঙ্গলের ভিতরে হাতির হানায় মারা গেলে ক্ষতিপূরণ পাবে না।

জঙ্গল এলাকার বাসিন্দাদের কাছে গাছ হল জীবন ও জীবিকা। সে জীবনে জড়িয়ে থাকে হাতিও।থাকে ঝুঁকি। জীবনের বিনিময় মূল্য ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ। তাই ঝুঁকির মধ্যে উঁকি দেয় লোভ।

(চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

Jhargram Elephant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy