Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

বিকল লঞ্চ, সাঁতরে প্রাণ বাঁচালেন তিন

স্থানীয় সূত্রের খবর, শনিবার রাত তিনটে নাগাদ পূর্ব মেদিনীপুরের শঙ্করপুর মৎস্য বন্দর থেকে একটি লঞ্চে করে সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন ছয় মৎস্যজীবী। দিঘা মোহনা থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে তাঁরা মাছ ধরছিলেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শঙ্করপুর শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:৩৭
Share: Save:

মাঝসমুদ্রে হঠাৎ বিকল লঞ্চের ইঞ্জিন। খোলের ফুটো দিয়ে ঢুকছিল জল। প্রাণে বাঁচতে তেলের ব্যারেল নিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়েছিলেন ছয় মৎস্যজীবী। তিন জনকে উদ্ধার করেছিলেন অন্য লঞ্চের মৎস্যজীবীরা। বাকি তিন জনের সে সুযোগ হয়নি। প্রায় ১০ ঘণ্টা সাঁতরে কোনও রকমে তাঁরা ফিরেছেন পাড়ে।

সাঁতরে ফেরা ওই তিন মৎস্যজীবী হলেন, শুকদেব মণ্ডল, বিকাশ দাস এবং নন্দকুমার নন্দ। এঁদের মধ্যে শুকদেব এবং বিকাশ ভূপতিনগরের বাসিন্দা। নন্দকুমারের বাড়ি কাঁথির ডিহি বাড় গ্রামে।

স্থানীয় সূত্রের খবর, শনিবার রাত তিনটে নাগাদ পূর্ব মেদিনীপুরের শঙ্করপুর মৎস্য বন্দর থেকে একটি লঞ্চে করে সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন ছয় মৎস্যজীবী। দিঘা মোহনা থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে তাঁরা মাছ ধরছিলেন। বিকাশ জানান, সকাল ৮টার দিকে তালসারির কাছে তাঁদের লঞ্চের ইঞ্জিন বিকল হয়ে গিয়েছিল। ইঞ্জিন সারানোর সময় লঞ্চের খোলের ফুটো দিয়ে জল ঢুকতে শুরু করে। ওই মৎস্যজীবী জানাচ্ছেন, ছোট লঞ্চ হওয়ায় তাঁদের কাছে কোনও রেডিয়ো ছিল না। ফলে বিপদের কথা তাঁরা অন্যদের জানাতে পারেননি। শেষে কোনও উপায় না দেখে লঞ্চে থাকা তেলের একটি ব্যারেল এবং কয়েকটি বাঁশ নিয়ে ছয় মৎস্যজীবী সমুদ্রে ঝাঁপ দেন।

কিছুক্ষণ পরে পাশ দিয়ে যাওয়া একটি ট্রলারে উঠতে পেরেছিলেন তিনজন মৎস্যজীবী। বাকি শুকদেব, বিকাশ এবং নন্দ সাঁতরে পাড়ে আসার চেষ্টা চালিয়ে যান। শেষে প্রায় ১০ ঘণ্টার বেশি সাঁতার কেটে ওই তিন জন রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিউ দিঘার ক্ষণিকা ঘাটের কাছে পৌঁছন। নন্দকুমার বলেন, ‘‘বাঁশ আর তেলের ব্যারল আঁকড়ে যখন এগোচ্ছি, তখন পুলিশ এবং নুলিয়ারা চিৎকার শুরু করে। তাঁরা উদ্ধার করে সৈকতে তোলে।’’ পরে পুলিশ এবং স্থানীয়েরা ওই তিন জনকে উদ্ধার করে দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করান। হাসপাতাল সূত্রের খবর, প্রাথমিক চিকিৎসার পর তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

গত জুলাইয়ে সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে এ রাজ্যের একটি ট্রলার ডুবে গিয়েছিল। কোনও লাইফ জ্যাকেট বা অবলম্বন ছাড়াই শুধু মনের জোরে প্রায় পাঁচ দিন সমুদ্রে ভেসে ছিলেন নামখানার মৎস্যজীবী রবীন্দ্রনাথ দাস। পরে বাংলাদেশের একটি জাহাজ তাঁকে উদ্ধার করেছিল। রবিবারের ঘটনার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ঘটনার মিল রয়েছে বলে জানাচ্ছেন অন্য মৎস্যজীবীরা।

‘দিঘা ফিশারম্যান অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনে’র সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাস বলেন, ‘‘সমুদ্রে বিপদে পড়লে সাধারণত রেডিয়োয় আমাদের কাছে বার্তা আসে। কিন্তু এক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হয়নি। ওই মৎস্যজীবীরা একটানা ১০ ঘণ্টার বেশি যেভাবে লড়াই করেছেন, তার প্রশংসা করার ভাষা নেই। তবে ওই সব মাছ ধরার লঞ্চে যাতে যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়, সে জন্য রাজ্য সরকারের কাছে সুপারিশ করব।’’

সহ-মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) সুরজিৎ বাগের বক্তব্য, ‘‘সব মৎস্যজীবীই নিরাপদে ফিরে এসেছেন। এখন সমুদ্রে আটকে থাকা লঞ্চটি উদ্ধার করে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Trawler Shankarpur Digha Boat Sink
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy