পাটাশিমূলের বিক্ষোভে দেখা গিয়েছিল এই পোস্টার। ফাইল চিত্র
দলের অন্দরের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। নাকি ছত্রধর মাহাতোকে ঘিরে বিক্ষোভের নেপথ্যে রয়েছে শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামীদের ইন্ধন। আলোচনা চলছে শাসক দলের অন্দরে। তবে কারণ, যাই হোক না কেন জঙ্গলমহলে তৃণমূলের মুখকে ঘিরে বিক্ষোভের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই দেখছেন জেলা তৃণমূলের নেতারা। তাঁরা চাইছেন, নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হোক ছত্রধরের।
তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ছত্রধর অবশ্য সোমবার বঙ্গধ্বনি যাত্রায় বিক্ষোভের বিষয়টিকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিতে নারাজ। তিনি নিজে বলছেন, ‘‘জনগণই আমার রক্ষাকবচ। বাড়তি নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই।’’ তবে তৃণমূল সূত্রের খবর, সোমবার ঝাড়গ্রামের পাটাশিমূলে বিক্ষোভের বিষয়টি মঙ্গলবার কলকাতায় গিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরে বিষয়টি জানিয়েছেন ছত্রধর। অভিষেকের দফতরে তিনি কী জানিয়েছেন, তা প্রকাশ্যে আনতে রাজি নন ছত্রধর। তবে ছত্রধর-ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, ছত্রধর জানিয়ে আসেন, তাঁকে আটকাতে বিজেপি ও সিপিএমের লোকজনই পাটাশিমূলে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। যদিও তৃণমূলের একাংশ মনে করছেন, ওই বিক্ষোভে শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামীদেরও ইন্ধন থাকতে পারে।
গত কয়েকদিন ধরে ঝাড়গ্রাম জেলার বিভিন্ন প্রান্তে বঙ্গধ্বনি যাত্রায় গিয়ে কখনও স্থানীয় মহিলাদের সঙ্গে বসে শালপাতা গেঁথে গোলপাতা বানিয়েছেন ছত্রধর। কখনও পা-চালিত মেশিনে গ্রামবাসীর সঙ্গে হাত লাগিয়ে ধান ঝেড়েছেন। এলাকার যুবকদের ফুটবল খেলতে দেখে গাড়ি থামিয়ে মাঠে নেমে ফুটবলও খেলেছেন। ছত্রধর রাজ্য সম্পাদকের পদ পাওয়ার পর থেকে দলে ক্রমাগত গুরুত্ব বেড়েছে তাঁর। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ছত্রধরকে ডেকে নিয়েছেন সভায়। শুভেন্দুর অনুপস্থিতিতে ছত্রধরই যে জঙ্গলমহলের মুখ হতে চলেছেন তা ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছে তৃণমূল। দলের অন্দরে চাপা ক্ষোভ থাকলেও তা এথনও পর্যন্ত সে ভাবে প্রকাশ্যে আসেনি। কিন্তু সোমবার পাটাশিমূলে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ ‘খুনি ছত্রধরের ফাঁসি চাই, ‘খুনি ছত্রধর দূর হটো’ লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ দেখান। এতেই চিন্তা বেড়েছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের।
মাওবাদী সন্ত্রাস পর্বে পাটাশিমূল ও লাগোয়া এলাকায় ১৩ জন খুন হন। স্বজন হারানো পরিবারের লোকজনও সোমবারের ওই বিক্ষোভে শামিল হন। তাঁরা জানিয়ে দেন তৃণমূলের অন্য যে কেউ এলাকায় স্বাগত, তবে ছত্রধরকে তাঁরা এলাকায় ঢুকতে দেবেন না। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পাটাশিমূলে মিনিট দশেক কর্মসূচি করে ফিরে যান ছত্রধর। হাইকোর্ট ইউএপি মামলায় সাজার মেয়াদ কমানোয় জেলমুক্ত হন ছত্রধর। রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে লালগড়ের আমলিয়া গ্রামে ফেরেন তিনি। রাজ্য প্রশাসনের নির্দেশে ছত্রধরের সর্বক্ষণের নিরাপত্তার জন্য তিন জন সশস্ত্র রক্ষী মোতায়েন করা হয়। কিন্তু সোমবার কয়েকশো গ্রামবাসীর বিক্ষোভে ছত্রধরের গাড়ি আটকে থাকাকালীন ওই তিন নিরাপত্তা রক্ষী ছত্রধরকে আগলে গাড়িতেই বসেছিলেন।
ছত্রধরের আইনজীবী কৌশিক সিংহ বলেন, ‘‘বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ছত্রধরের নিরাপত্তা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।’’ জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলেন, ‘‘ছত্রধর মাহাতোর দলীয় কর্মসূচিতে জনজোয়ার দেখে ভয় পেয়েছে বিজেপি ও সিপিএম। তাই তাঁর কর্মসূচি বানচাল করার জন্য বিরোধীরা চক্রান্ত করছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি রাজ্য সম্পাদকের নিরাপত্তা বাড়ানো প্রয়োজন।’’ এ প্রসঙ্গে জেলা পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠৌর খোলসা করে কিছু বলতে চাননি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘এখনও কিছু জানা নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy