বনধে পঠনপাঠন হল নন্দকুমারের এক স্কুলে। — নিজস্ব চিত্র।
বকেয়া মহার্ঘ ভাতার (ডিএ) দাবিতে সরকারি কর্মী ও স্কুলের শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীদের ধর্মঘটে মিশ্র সাড়া পড়ল জেলায়। প্রাথমিক স্কুলগুলিতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাজিরা প্রায় স্বাভাবিক হলেও হাইস্কুলগুলিতে শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীদের অনেকেই এদিন উপস্থিত হননি। অন্যদিকে, সরকারি অফিসগুলিতে কর্মীদের হাজিরা ছিল অন্যদিনের তুলনায় কিছুটা কম। এদিন ধর্মঘট পালন ঘিরে জেলায় বড় কোনও অশান্তি না ঘটলেও ধর্মঘট সমর্থকদের একাংশ বিভিন্ন সরকারি অফিস, তমলুকে জেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখান।
ধর্মঘট ঠেকাতে কড়া নির্দেশিকা জারি করেছিল রাজ্য সরকার। অন্যদিকে, ধর্মঘট পালনে অনড় ছিলেন যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের সমর্থক সরকারি কর্মী ও শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীরা। এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ জেলা মাধ্যমিক পরিদর্শক অফিসে কাজে যোগ দিতে চাওয়া কর্মীরা প্রবেশ করতে গেলে বাধা দেওয়া হয়। তা কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশের সঙ্গে ধর্মঘট সমর্থক শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীদের ধস্তাধস্তি বাঁধে। পুলিশের হস্তক্ষেপে কাজে যোগ দিতে চাওয়া ওই অফিসের কর্মীরা ভিতরে ঢোকেন। নন্দকুমার ব্লকের ঠেকুয়াচক চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অফিসের প্রবেশ পথ আটকে ছিলেন ধর্মঘট সমর্থকেরা। সেখানেও পুলিশের হস্তক্ষেপে অফিসে ঢোকেন।
স্কুলের শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীদের একাংশ ধর্মঘটের সমর্থনে এদিন স্কুলে হাজির হননি। আবার একাংশ অন্য দিনের মত স্কুলে হাজির হয়ে পড়ুয়াদের ক্লাস নিয়েছেন। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অধিকাংশই অবশ্য এদিন স্কুলে উপস্থিত হয়ে ক্লাস নিয়েছেন। হাইস্কুলগুলিতে শিক্ষকশিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মীদের অনেকেই অনুপস্থিত ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। জেলা সদর তমলুক শহরে হ্যামিল্টন হাইস্কুল, তমলুকের বিডিও অফিস সংলগ্ন নাইকুড়ি ঠাকুরদাস ইনস্টিটিউশন, কেলোমাল সন্তোষিনী হাইস্কুল, চংরা কালাগন্ডা রজনী বিদ্যাভবন প্রভৃতি পুরোপুরি বন্ধ ছিল। জেলাশাসকের অফিস, তমলুক মহকুমাশাসকের অফিস, জেলার বিডিও অফিস ও গ্রামপঞ্চায়েত অফিসগুলিতে অধিকাংশ কর্মীরা এদিন উপস্থিত হয়ে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। তমলুক পুরসভা অফিসে কর্মীদের অধিকাংশই কাজে যোগ দিয়েছিলেন। তবে জেলা আদালতের কর্মীরা উপস্থিত হননি। এতে আদালতের কাজকর্ম ব্যহত হয়েছে।
যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক শম্ভু মান্না এদিন বলেন, ‘‘বকেয়া মহার্ঘ ভাতার দাবিতে ডাকা ধর্মঘটের ব্যপক প্রভাব পড়েছে জেলার হাইস্কুলগুলিতে। সরকারি হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও প্রাথমিক স্কুল এবং সরকারি বিভিন্ন অফিসেও ভাল প্রভাব পড়েছে।’’ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেস’এর জেলা সম্পাদক মৃণ্ময় মাজির দাবি, ‘‘ধর্মঘটের সমর্থনে জেলার অধিকাংশ হাইস্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকিরা সামিল হয়েছিলেন। জেলার ৮০ শতাংশ হাইস্কুল বন্ধ ছিল। বাকি ২০ শতাংশ স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপস্থিত অনেকটা কম ছিল।’’ যদিও তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সেলের জেলা সভাপতি নীলকান্ত অধিকারীর দাবি, ‘‘ধর্মঘটে জেলার প্রাথমিক স্কুলগুলিতে প্রভাব পড়েনি। দুই একটি স্কুল বন্ধ থাকলেও জেলার প্রায় সমস্ত স্কুলে এদিন শিক্ষকশিক্ষিকাদের উপস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। পঠনপাঠন স্বাভাবিকভাবে হয়েছে।’’
সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের ডাকা সাধারণ ধর্মঘটের ব্যাপক প্রভাব পড়ে পাঁশকুড়া এবং কোলাঘাটেও। এদিন সকাল সাড়ে ১০ টা নাগাদ পাঁশকুড়া ব্লক অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখান ধর্মঘটকারীরা। পাঁশকুড়া ব্লক অফিসে এদিন কর্মচারীদের হাজিরা ছিল ৫০ শতাংশের কিছু বেশি। ব্লকের পঞ্চায়তে অফিসগুলিতে কর্মচারীদের হাজিরা ছিল ৫০ শতাংশের কম। কিছু কিছু স্কুল আগের দিনই ছুটি ঘোষণা করে দেয়। কোলাঘাট ব্লক অফিসে এদিন কর্মচারীদের হাজিরা ছিল ৯০ শতাংশ। ব্লকের পঞ্চায়েত অফিসগুলিতে ৩০ শতাংশ কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। সেই ধর্মঘটে মিশ্র প্রভাব পড়ল কাঁথি মহকুমা এলাকায়।
ধর্মঘটে মিশ্র প্রভাব পড়েছে কাঁথি মহকুমা এলাকায়। কাঁথি শহরের বেশিরভাগ স্কুল খোলা ছিল। তবে পঠন-পাঠন হয়নি। কাঁথি শহর লাগোয়া নামাল কালী প্রসাদ বিদ্যাপীঠে ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। ধর্মঘটের সমর্থনে স্কুলের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় লোকজনেরা গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। তারপর স্কুলের গেট খুলে দেওয়া হয়। ধর্মঘট এবং সরকারি দফতরে হাজিরা প্রসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, ‘‘সরকারি অফিসগুলিতে এদিন কর্মীদের হাজিরা ছিল ৯৯ শতাংশ। সব অফিসে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy