Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

স্কুলের পোশাকে ‘দুর্নীতি’, হাইকোর্টে গেল বিজেপি

জেলা প্রশাসনের নির্দেশ ‘অমান্য’ করে জেলা পরিষদের এহেন সিদ্ধান্তে সমস্ত স্কুলের শিক্ষক মহলে অসন্তোষ ছড়িয়েছে।

কলকাতা হাইকোর্ট। —ফাইল চিত্র

কলকাতা হাইকোর্ট। —ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মহিষাদল শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:২৪
Share: Save:

শিক্ষাবর্ষ শেষ হতে আর মাত্র কয়েকদিন। কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুরে সিংহভাগ প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারা এখনও পোশাকই পায়নি বলে অভিযোগ। পোশাক তৈরির বরাত নিয়ে তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদের ভূমিকায় আগেই একাধিক স্বনির্ভর গোষ্ঠী জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিল। এ বার আর এক ধাপ এগিয়ে জেলা পরিষদের সেই ‘হস্তক্ষেপ’কে বেআইনি বলে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা করলেন জেলা বিজেপি নেতৃত্ব।

গত সপ্তাহে জেলার সাংগঠনিক জেলার (তমলুক) প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপ দাস ও স্থানীয় বিজেপির প্রাক্তন মণ্ডল সভাপতি স্বপন দাস জেলা পরিষদের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করেন। ২০১৯-!২০ শিক্ষাবর্ষে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সমস্ত প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদের বিনামূল্যে পোশাক দেওয়ার জন্য সর্বশিক্ষা মিশন থেকে একটি নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছিল। সেখানে সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক তথা পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসককে প্রতিটি ব্লকের স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির মাধ্যমে পোশাক তৈরির বরাত দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ওই নির্দেশ ‘অমান্য’ করে পছন্দ মাফিক প্রতিটি ব্লক থেকে মোট ২৫ স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে নিযুক্ত করে তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদ। প্রতিটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে প্রায় এক কোটি টাকা মূল্যের পোশাক তৈরির বরাত দেয় জেলা পরিষদ। তারপর থেকে শুধু মহিষাদল নয়, বরাত না পাওয়ার জন্য জেলা জুড়ে বিভিন্ন এলাকায় স্কুলে স্কুলে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাযন বহু স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। এমনকী মহিষাদলের বিডিওকে ঘেরাও করে বিক্ষোভও হয়। পরে জেলা পরিষদের নিযুক্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা সদস্যরা বিভিন্ন স্কুলের পোশাক তৈরির জন্য মাপজোক করতে গিয়ে হয়রান হন।

জেলা প্রশাসনের নির্দেশ ‘অমান্য’ করে জেলা পরিষদের এহেন সিদ্ধান্তে সমস্ত স্কুলের শিক্ষক মহলে অসন্তোষ ছড়িয়েছে। একাধিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা জানান, জেলা পরিষদ নিযুক্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে তাঁরা পোশাক তৈরির জন্য পড়ুয়াদের কাছ থেকে মাপজোক নিতে দেননি। বরং তাঁরা নিজেরাই স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে টেন্ডারের মাধ্যমে পড়ুয়াদের পোশাক তৈরির বরাত দিয়েছেন। এই অবস্থায় জেলা প্রশাসন নাকি জেলা পরিষদ—কার নির্দেশ মানা হবে এই টালবাহানায় অধিকাংশ স্কুলে এখনও পর্যন্ত পোশাক পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ। আবার পোশাক পাওয়ার পর কাঁথি শহরের মডেল ইনস্টিটিউশনের এক পড়ুয়ার অভিভাবকের অভিযোগ, স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা চলাকালীন ছেলে পোশাক পেয়েছে ঠিকই। তবে তা অত্যন্ত নিম্নমানের।

জেলা পরিষদের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলাকারীদের অন্যতম প্রদীপ দাসের অভিযোগ, জেলার প্রায় ৮০ হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে। জেলা পরিষদ মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা কাটমানি নেওয়ার জন্য সবকটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী বঞ্চিত করেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশমতো প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিকের পড়ুয়াদের প্রসাদ বিতরণের ক্ষেত্রে কোনও অবস্থায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েত হস্তক্ষেপ করতে পারে না। কেন জেলা পরিষদ নিজেদের মতো স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে নিয়োগ করেছে, সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিলাম। আবেদন মামলা হিসেবে গৃহীত হয়েছে।’’

এ ব্যাপারে জেলা সভাধিপতি দেবব্রত দাসের দাবি, ‘‘বেশ কিছু স্কুলের পড়ুয়া ইতিমধ্যেই পোশাক পেয়ে গিয়েছে। বাকিরাও দ্রুত পোশাক পেয়ে যাবে। আগের তুলনায় যাতে পড়ুয়ারা ভাল মানের পোশাক পেতে পারে, তার জন্য এ বার জেলা পরিষদ নিজে তদারকি করে পড়ুয়াদের হাতে পোশাক তুলে দেবে। তবে হাইকোর্টে মামলার বিষয়টি এখনও আমাদের নজরে আসেনি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

High Court Purba Medinipur School Dress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy