শিকলবন্দি শাহজাহান নিজস্ব চিত্র
দেখতে দেখতে ২২টি বছর কেটে গেল। কখন যে একরত্তি শাহজাহান বড় হয়ে গিয়েছে প্রতিবেশীরা বুঝতে পারেননি। বুঝবেন কী করে! তার শৈশব থেকে কৈশোর ছিল উঠানে শিকলবন্দি। আর পাঁচটি কিশোরের মতো মাঠে-ঘাটে খেলে বেড়ালে হয়তো শাহজাহানের বেড়ে ওঠা নজর করতে পারতেন। কিন্তু, সাহস করে বাবা-মা ছেড়ে তাকে ছেড়ে দিতে পারেননি। ছাড়লেই তো মানসিক ভারসম্যহীন শাহজাহান কোথায় চলে যাবেন, আর হয়তো বাড়ি-ই ফিরবেন না।
মেদিনীপুর শহর লাগোয়া কালগাং সুকান্ত পল্লির বাসিন্দা পেশায় রিক্সাচালক বাবুয়া মোল্লা ও মর্জিনা বিবির দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলেই বড়। আগে রিক্সা চালিয়ে কোনও মতে সংসার চলে যেত বাবুয়া মোল্লার। কিন্তু, লকডাউনের পর থেকে আর সে ভাবে আয় হয় না রিক্সা চালিয়ে। ফলে, রিক্সা চালানোর পাশাপাশি এটা-ওটা কাজ করে রোজগার করতে হয়। পেট চালানোর জন্য স্ত্রী মর্জিনা বিবিকেও কাজে বেরোতে হয়। সমস্যা মানসিক ভারসাম্যহীন শাহজাহানকে নিয়ে, সুযোগ পেলেই তিনি এদিক-ওদিক ছুটে পালিয়ে যেতে চান। তাই তাকে শিকল দিয়ে বেঁধেই কাজে বেরোতে হয় বাবুয়া মোল্লা ও তাঁর স্ত্রীকে।
ছোটবেলায় একবার আঘাত লাগার ফলেই শাহজাহানের মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন বাবুয়া মোল্লা। তিনি বলেন, ‘‘তখন ওর এক কী দুই বছর বয়স হবে। খেলতে গিয়ে মাথায় আঘাত লাগে। তখন আমরা ওকে হাসপাতালে ভর্তি করাই। দু’দিন হাসপাতালেও ভর্তি ছিল। কিন্তু, তার পর আর চিকিৎসা করাইনি।’’ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আস্তে আস্তে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে শাহজাহান। সুযোগ পেলেই ছুটে পালিয়ে যান। বাধ্য হয়ে তাঁকে বেঁধে রাখতে হয় বলে জানিয়েছেন তাঁর বাবা। বাবুয়ার কথায়,‘‘ওকে সারাদিন নজরে রাখতে হবে। কিন্তু কাজে না গেলে পেট চলবে কী করে!’’ তাই বাধ্য হয়েই শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে কাজে যান।
এ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে মহকুমাশাসক সদর কৌশিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই যুবকের ঠিক কি হয়েছে তা জানার জন্য টিম পাঠানো হয়েছে। ব্লক অফিস থেকে আধিকারিক, স্বাস্থ্য দফতর ও পুলিশকে পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy