ছবি সংগৃহীত।
সাঁওতালি সাহিত্যের মহাকবি তিনি। তবুও জন্মদিনে উপেক্ষিত সাধু রামচাঁদ মুর্মু। সরকারি তরফে তাঁর জন্মদিন পালনের কোনও উদ্যোগ নেই। উদ্যোগ নেই অবহেলায় থাকা তাঁর সমাধিস্থল সংরক্ষণের। নষ্ট হওয়ার হাত থেকে তাঁর পাণ্ডুলিপি বাঁচানোর। এই উপেক্ষার মধ্যেই আজ, শুক্রবার তাঁর গুণগ্রাহী কয়েকজন নিজেদের উদ্যোগে মহাকবির ১২৫তম জন্মজয়ন্তী পালন করছেন কামারবান্দি গ্রামে। সাধু রামচাঁদের জন্ম বেলপাহাড়ি ব্লকের শিলদা অঞ্চলের এই গ্রামেই।
সাধু রামচাঁদ মুর্মুর জন্ম ১৩০৫ বঙ্গাব্দের ১৬ বৈশাখ। ইংরেজির ১৮৯৭ সালে। তাঁর লেখা গান ‘দেবন তিঙ্গুন আদিবাসী বীর’ (এসো জাগি আদিবাসী বীর) পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহার, অসমে সাঁওতালদের কাছে এখনও জনপ্রিয়। জীবদ্দশায় সাধু রামচাঁদের কোনও লেখা মুদ্রিত হয়নি। তাঁর মৃত্যুর পরে বিভিন্ন বেসরকারি উদ্যোগে প্রকাশিত হয় পাঁচটি বই।
সরকারি উদ্যোগে সাঁওতালি সাহিত্যের মহাকবির জন্মদিন পালন করা হত বাম আমলে। তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগও করা হয়েছিল সেই সময়ে। স্থানীয়েরা জানালেন, ১৯৯৭ সালে সাধু রামচাঁদের জন্মশতবর্ষে বাম সরকারের আদিবাসী কল্যাণ বিভাগের উদ্যোগে তাঁর ভিটের সামনে আবক্ষ মূর্তি বসানো হয়। মহাকবির জন্মশতবার্ষিকীতে সরকারি ভাবে ‘সাধু রামচাঁদ অনলমালা’ (রচনা সমগ্র) প্রকাশ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। ২০০২ সালে সাধু রামচাঁদের নামে রাজ্য সরকার পুরস্কার চালু করে। ২০০৮ সাল পর্যন্ত তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের উদ্যোগে কামারবান্দি গ্রামে সরকারি ভাবে মহাকবির জন্মদিন পালন হয়েছিল। মাওবাদী অশান্তি পর্বে আর সরকারি ভাবে জন্মদিন পালন করা হয়নি। রাজ্য তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের এক কর্তা জানালেন, ২০০৯ সাল থেকে রামচাঁদের জন্মদিন পালনের জন্য সরকারি বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যায়। ২০১১ সালে তৃণমূলের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে আর নতুন করে জন্মদিন পালনের বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন বাম সাংসদ পুলিনবিহারী বাস্কে বলেন, ‘‘রামচাঁদ মুর্মুকে প্রকৃত সম্মান দিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার মহাকবির স্মরণে তো কিছুই করেনি। সাধু রামচাঁদের নামাঙ্কিত পুরস্কারও আমাদের সময়েই চালু হয়।’’ পশ্চিমবঙ্গ সাঁওতালি অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান দুলাল মুর্মু বলেন, ‘‘সাঁওতালি শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রসারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকার দশ বছরে অভূতপূর্ব কাজ করেছে। বাম আমলে চালু হলেও প্রতি বছর মহাকবির নামাঙ্কিত পুরস্কারও দেওয়া হচ্ছে। ঝাড়গ্রামের সাধু রামচাঁদ মুর্মু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন তৈরির কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। উপাচার্য নিয়োগ করেছে রাজ্য সরকার।’’
সরকারের মুখাপেক্ষী না থেকেই মহাকবির স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে বেসরকারি উদ্যোগে গঠিত ‘সাধু রামচাঁদ মুর্মু উইহার বাথান’ (সাধু রামচাঁদ মুর্মু স্মৃতিরক্ষা কমিটি)। প্রতি বছর কামারবান্দি গ্রামে মহাকবির ভিটে চত্বরে তাঁর জন্মজয়ন্তী পালন করে কমিটি। এ বছরও তারা জন্মদিন পালনের আয়োজন করেছে। সংগঠনের সম্পাদক সঞ্জয় হাঁসদা বলেন, ‘‘সরকারি ভাবে সাধু রামচাঁদের সমাধিস্থল সংরক্ষণের কাজ হয়নি। এমনকী দর্শনীয় স্থান হিসেবে কামারবান্দি গ্রামটি জেলার পর্যটন মানচিত্রেও অন্তর্ভুক্ত হয়নি।’’ সাধু রামচাঁদ মুর্মু উইহার বাথানের প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক পূর্ণচন্দ্র সরেনের আক্ষেপ, ‘‘সাঁওতালি ভাষা গবেষণার কাজে অনেকেই গ্রামে আসেন। অথচ সাঁওতালি সাহিত্যের ‘ভগীরথ’ রামচাঁদের কোনও সংগ্রহশালাও আজ পর্যন্ত হল না।’’
মহাকবির সমাধিস্থল এবং বাস্তুভিটের অবস্থা নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে গ্রামবাসী ও আত্মীয়দের। এখনও মহাকবির কিছু পাণ্ডুলিপি রয়েছে তাঁর উত্তরসূরিদের কাছে। কবির সাবেক ভিটেয় থাকেন তাঁর পৌত্র ও প্রপৌত্ররা। সাধু রামচাঁদের প্রপৌত্র অনিল মুর্মু বলেন, ‘‘কেউ কেউ মহাকবির বাড়ি ও সমাধিস্থল দেখতে আসেন। তাঁদের বিশ্রামাগারেরও ব্যবস্থা নেই। শিলদা থেকে কামারবান্দি পর্যন্ত পিচ রাস্তাটাও খারাপ হয়ে গিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy