নজর নেই: শঙ্করপুরের কাছে একদিকে চলছে বোল্ডার, খুঁটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ। তার পাশে এভাবেই খুঁটি চুরি হচ্ছে বলে নালিশ। নিজস্ব চিত্র
সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাস থেকে লাগোয়া সৈকত লাগোয়া গ্রামগুলিকে রক্ষা করতে বাঁধ তৈরিতে শালখুঁটি ব্যবহার করেছিল সেচ দফতর। কিন্তু যাঁদের রক্ষা করতে বাঁধ নির্মাণ সেই গ্রামবাসীদের একাংশের বিরুদ্ধেই বাঁধের গা থেকে শালখুঁটি খুলে চুরি করার অভিযোগ উঠল।
শঙ্করপুর থেকে তাজপুর পর্যন্ত সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় দিনেদুপুরে প্রকাশ্যেই এই চুরি হলেও স্থানীয় প্রশাসন কিংবা সেচ দফতর কারও ভ্রূক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ। এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, তাজপুর থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের গা ঘেঁষে উপকূপ এলাকায় বহু পরিবারের বাস। সমুদ্র লাগোয়া এলাকায় বসবাসকারী এই সব পরিবারের অনেকের বাড়িতেই দেখা গেল থরে থরে সাজানো রয়েছে শাল কাঠের বল্লা। তাজপুরের এক চায়ের দোকানদার জানান, উপকূল বরাবর সমুদ্রের ঢেউ ও জলোচ্ছ্বাস আটকাতে শাল কাঠের বল্লা দিয়ে পাথর ফেলা হয়েছিল। কিন্তু ওই এলাকা থেকেই ওই সব শালবল্লা তুলে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় লোকজন। এই প্রতিবেদকের সামনেই দেখা গেল কয়েক জন শালবল্লা খুলে নিয়ে যাচ্ছেন কয়েকজন বাসিন্দা।
এক স্থানীয় প্রবীণ জানান, মূলত এই সব কাঠ তাঁরা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেন। তবে অপেক্ষাকৃত ভাল কাঠ হলে তা দিয়ে বাড়ির খুঁটি হিসেবে লাগানো হয়। কিন্তু, এ ভাবে তাঁরা তো নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে আনছেন জানালে ওই প্রবীণ জানান, তাঁর মতো অনেকেই এমন কাজ করছেন।
প্রশাসন ও সেচ দফতর সূত্রে খবর, চলতি বছর শঙ্করপুর থেকে কাঁচপুর এলাকায় একাধিক জায়গায় সমুদ্রের বাঁধে ভাঙনে পরিস্থিতি খুবই বিপজ্জনক। যে কোনও মুহূর্তে বড় বিপদ ঘটতে পারে। তাই জামড়া শঙ্করপুর থেকে তাজপুর পর্যন্ত বড় বড় পাথর ফেলে বাঁধ নির্মাণ শুরু হয়েছে। সেচ দফতরের উদ্যোগে এই কাজ চলছে পুরোদমে। নিয়মিত সেই কাজ পরিদর্শনে যাচ্ছেন ব্লক প্রশাসন ও সেচ দফতরের আধিকারিকেরা। কিন্তু তারপরেও কী ভাবে বাঁধ থেকে শালখুঁটি চুরি হয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শঙ্করপুরের ধাঁচে চাঁদপুর থেকে জলধা পর্যন্ত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। তার জন্য গ্লোবাল টেন্ডার ডাকা হয়েছে। তবে চলতি বছরে সমুদ্র বাঁধ যাতে আর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তার জন্য সাময়িকভাবে বড় বড় বোল্ডার দিয়ে বাঁধ সংস্কার করছে সেচ দফতর। সেই কাজ চলার ফাঁকে পুরনো বাঁধ স্থানীয় লোকজন নষ্ট করছে বলে অভিযোগ। এর বিরুদ্ধে সেচ দফতর কী পদক্ষেপ করছে জানার জন্য ফোন করা হয়েছিল কাঁথি মহকুমা সেচ দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার স্বপন কুমার পণ্ডিতকে। কিন্তু একাধিক বার ফোন করা সত্ত্বেও তিনি ফোন ধরেননি।
তবে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন রামনগর-১ এর বিডিও অনুপম বাগ। তিনি বলেন, ‘‘যাঁদের সুরক্ষার জন্য বাঁধ তৈরি করা হয়েছিল, তাঁদের এ ধরনের কাজ কখনওই মেনে নেওয়া যায় না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এ ব্যাপারে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে পুলিশকে পদক্ষেপ করার কথা বলব।’’
এ ব্যাপারে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘এ ধরনের ঘটনা জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে প্রশাসনিক ভাবে পদক্ষেপ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy