দিঘার সৈকতে ও রাস্তার ধারে এ ভাবেই বিক্রি হতে দেখা যায় সামুদ্রিক মাছ। কাঁকড়া খেয়ে এক পর্যটকের মৃত্যুর পর যার গুণমান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নিজস্ব চিত্র।
বেড়াতে গিয়ে বেড়ানোর পাশাপাশি নানা রকম খাবারের স্বাদের খোঁজে মুখও চলে অবিরাম। বিশেষ করে কোনও সৈকতে বেড়াতে গেলে সেখানে সামুদ্রিক মাছের নানা পদের খোঁজ করেন না এমন পর্যটক মেলা ভার। এ রাজ্যের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র সৈকত শহর দিঘা, মন্দারমণি থেকে পাশের রাজ্য ওড়িশার পুরী—সবর্ত্রই নজরে পড়ে এক ছবি। রসনার আশ মেটানোর সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার খাবারের গুণগত মান কেমন তা নিয়ে সে ভাবে কেউ মাথা ঘামান না। কিন্তু দিন দুয়েক আগেই দিঘা বেড়াতে গিয়ে কাঁকড়া খেয়ে দীপিকা ভগত (১৭) নামে এক কিশোরীর মৃত্যু কিংবা তারও আগে কলকাতার বেহালার এক বাসিন্দার একই ভাবে মৃত্যু সেই প্রশ্নই তুলে দিয়েছে। রাজ্যের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র দিঘার স্ট্রিট ফুড কিংবা হোটেল, রেঁস্তোরায় যে সব খাবার মেলে তার গুণগত মান নিয়ে এই ঘটনার পর অনেক পর্যটকই প্রশ্ন তুলেছেন।
দিঘায় বেড়াতে গিয়ে রাস্তার ধারে কোনও হোটেল কিংবা রেঁস্তোরায় খাওয়া দাওয়া করেন বহু পর্যটক। এ ছাড়া সৈকতে বিভিন্ন স্বাদের সামুদ্রিক মাছ চটজলদি ভেজে পাতে দেওয়ার মোহে বহু পর্যটকই সে দিকে পা বাড়ান। কিন্তু সেই সব খাবারের উপকরণ কতটা নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যসম্মত তা জানা থাকে না কারও। এমনকী রাস্তার ধারে হোটেল কিংবা রেঁস্তরার খাবারের মানও নিয়মিত যাচাই করা হয় কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন একাধিক পর্যটকর। কয়েক বছর আগের ঘটনা। দিঘায় সৈকতের ধারে নানা রকমের সামুদ্রিক মাছ এবং কাঁকড়া ভেজে বিক্রি করা হয়। পর্যটকদের চোখে সেই সব সামুদ্রিক মাছের আকর্ষণ বজায় রাখতে তাতে ফরমালিন নামে এক ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হত বলে অভিযোগ। বিষয়টি জানতে পেরে তা নিষিদ্ধ করেছিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। সেই সময় নিয়মিত নজরদারির ব্যবস্থাও হয়েছিল।
তবে কিছুদিনের মধ্যে নজরদারি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এখনও সৈকতে সে ভাবে সামুদ্রিক মাচ বিক্রি করা হয় তা খাওয়ার পক্ষে কতটা নিরাপদ তা স্বাভাবিক ভাবেই সন্দেহের অবকাশ রাখে। দিঘায় বেশ কিছু হোটেল এবং রেঁস্তোরায় বাসি মাছ এবং অন্যান্য খাবার বিক্রির অভিযোগও রয়েছে বহু পর্যটকের। যার জেরে মাঝেমধ্যেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ। দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপার সন্দীপ কুমার বাগ বলেন, ‘‘ইতিপূর্বে খাবার থেকে সংক্রমিত হয়ে চারজন মারা গিয়েছেন। নথি ঘেঁটে দেখা গিয়েছে তাঁরা সকলেই পর্যটক। প্রত্যেকে হাসপাতালে আসার পথে রাস্তায় মারা গিয়েছেন। তবে মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রতি ক্ষেত্রেই দাবি করা হয়েছে কাঁকড়া জাতীয় খাবার খাওয়ার পরেই তাঁরা অসুস্থ হয়েছিলেন।’’ বড়দিনে দিঘায় বেড়াতে আসা এক পর্যটকের কথায়, ‘‘দিঘা শুধু এ রাজ্যের নয়, দেশেরও অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। মুখ্যমন্ত্রী দিঘাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে নানা পদক্ষেপ করেছেন। তবে পর্যটকদের স্বার্থে এই বিষয়টিতেও রাজ্য সরকারের গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’’
নিয়ম অনুযায়ী রাস্তার ধারে হোটেল এবং রেঁস্তোরাগুলিতে খাবারের মান যাচাই করে দেখে খাদ্য সুরক্ষা দফতর। কিন্তু সেই দফতরের হাল রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রে অত্যন্ত করুণ। দিঘা এবং মন্দারমণি দুটি পর্যটন কেন্দ্রে এই সব খাবারের গুণগত মান যাচাই করে দেখার জন্য একজন মাত্র খাদ্য সুরক্ষা আধিকারিক রয়েছেন। তিনি রামনগর-২ ব্লকের স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে কাজ করেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই খাদ্য সুরক্ষা আধিকারিক রনিতা সরকারের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। মোবাইলে মেসেজ পাঠানো হলেও জবাব মেলেনি।
এ প্রসঙ্গে রামনগর-১ এর বিডিও বিষ্ণুপদ রায় বলেন, ‘‘সমস্ত হোটেল এবং রেস্তোরাঁর পাশাপাশি রাস্তার ধারে যে সব দোকানে খাবার বিক্রি করা হয় সেই সব খাবারের নমুনা সংগ্রহ করে তার গুণগতমান যাচাই করার জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy