—প্রতীকী ছবি।
নন্দীগ্রামে আরও দু’টি নতুন থানা তৈরির প্রস্তাব নিয়ে জল্পনা চলছে। আইনশৃঙ্খলার স্বার্থেই এই উদ্যোগ বলে পুলিশ-প্রশাসন সূত্রে খবর। তবে রাজনৈতিক মহলে চর্চা, নন্দীগ্রামে হারানো মাটি ফিরে পাওয়াই তৃণমূল সরকারের মূল লক্ষ্য। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপিও।
বর্তমানে নন্দীগ্রামের দু’টি ব্লক নিয়ে একটি থানা। মাথায় রয়েছেন আইসি পদমর্যাদার আধিকারিক। পাশাপাশি নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের তেখালিতে আউটপোস্ট আর নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের রেয়াপাড়ায় পুলিশ ফাঁড়ি। বছর দুয়েক আগে হলদিয়ার এসডিপিও-র থেকে দায়িত্ব নিয়ে ডিএসপি পদমর্যাদার এক আধিকারিককে নন্দীগ্রাম থানার নিয়ন্ত্রক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তারপরেও কেন দু’টি নতুন থানা করতে হচ্ছে, প্রশ্ন উঠেছে।
সূত্রের খবর, রেয়াপাড়া ও তেখালিতে থানা তৈরির পাশাপাশি সোনাচূড়া ও রামচকে তৈরি করা হবে দু’টি পুলিশ ফাঁড়ি। হলদিয়ার এসডিপিও অরিন্দম অধিকারী অবশ্য বলেন, ‘‘নতুন থানা নিয়ে সরকারি নির্দেশিকা আসেনি।’’ তবে পুলিশ-প্রশাসন সূত্রে দাবি, থানা হলে বাহিনী বাড়বে। গোলমালের খবর পেলে দ্রুত পৌঁছে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে।
২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের অশান্তি পর্বে তেখালি এবং রেয়াপাড়ায় দু’টি ফাঁড়ি তৈরি করেছিল তৎকালীন বাম সরকার। নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের গোকুলনগর, সোনাচূড়া এবং কালীচরণপুর পঞ্চায়েত এলাকায় নজরদারি চালায় তেখালি ফাঁড়ি। আর নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের বিরুলিয়া থেকে তেরপেখ্যা এলাকা নিয়ন্ত্রণের ভার রেয়াপাড়া ফাঁড়ির হাতে। মূলত হিজলি টাইডাল ক্যানালের ধারে নন্দীগ্রাম ২ ব্লক। সেখানে রেয়াপাড়ায় নতুন থানা হলে সুবিধা হবে মানছেন স্থানীয়রা। কিন্তু তেখালিতে নতুন থানা কতটা কাজে লাগবে তা নিয়ে তাঁরা সংশয়ে।
তবে স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, এ বারও লোকসভা ভোটের আগে-পরে নন্দীগ্রাম অনেক গোলমাল হয়েছে। জেলায় সব থেকে বেশি এফআইআর হয়েছে নন্দীগ্রাম থানায়। দু’টি ফাঁড়ি থেকেও বিশেষ লাভ হয়নি। কারণ গোলমাল হলে নন্দীগ্রাম থানা থেকে পুলিশ না আসা পর্যন্ত ফাঁড়ির কেউ সাহস দেখান না। আর নিখোঁজের অভিযোগ জানানো ছাড়া বাকি সব কাজেই ছুটতে হয় নন্দীগ্রাম থানায়। সে দিক থেকে নতুন থানা হলে সুবিধাই হওয়ার কথা।
বিজেপি অবশ্য গোটা বিষয়টিতে রাজনীতিই দেখছে। তাদের দাবি, গত বিধানসভা, তারপর পঞ্চায়েত এবং সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটে এঁটে উঠতে না পেরে এখন পুলিশ দিয়ে নন্দীগ্রাম দখল করতে চাইছে তৃণমূল। গেরুয়া শিবির মনে করাচ্ছে, নন্দীগ্রাম একসময় অশান্তির ভরকেন্দ্র হলেও পূর্ব মেদিনীপুরে এখন অনেক বেশি সন্ত্রস্ত ময়নার বাকচা, ভূপতিনগরের বরজ, অর্জুননগরের মতো এলাকা। অথচ সেখানে নতুন থানা হচ্ছে না।
উল্টো দিকে, মালদহের কালিয়াচকে ফাঁড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার পরে সেখানে নতুন থানা হয়েছে। আবার ভাঙড়ে যখন তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের দাপট ছিল, তখন সেখানে কোনও রদবদল করা না হলেও আইএসএফের উত্থানের পরে ভাঙড়কে কলকাতা পুলিশের অধীনে আনা হয়েছে।
বিজেপির তমলুক সংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ পালের মতে, ‘‘এ সবই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে। নন্দীগ্রামেও সেই চেষ্টা করতে চাইছে তৃণমূল সরকার।’’ বৃহস্পতিবার রায়গঞ্জে নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য, ‘‘ ১৯৫৬ ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হেরেছিলেন। এ বারে মার্জিন বেড়ে হয়েছে ৮,২০০। নন্দীগ্রামে ১১টা গ্রাম পঞ্চায়েতে আমি প্রধান করেছি। দু'টো পঞ্চায়েত সমিতি দখল করেছি। ওটা হাতের বাইরে।’’ বিরোধী দলনেতার মতে, ‘‘অধিকারীমুক্ত পূর্ব মেদিনীপুর করতে গিয়ে পিসিমুক্ত পূর্ব মেদিনীপুর হয়েছে। ১৬টি বিধানসভার মধ্যে ১৫টায় বিজেপি ‘লিড’ করেছে। ২৬-এ নরেন্দ্র মোদীকে ১৬-য় ১৬-ই দেব।’’
তৃণমূলের রাজ্য নেতা কুণাল ঘোষ পাল্টা বলছেন, ‘‘পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পরিষদ কাদের? নন্দীগ্রামে জেলা পরিষদ আসনগুলোও তো আমরাই জিতেছি। বিজেপি বহিরাগতদের এনে যাতে অশান্তি না পাকাতে পারে তার জন্য একটা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এতে আপত্তি কিসের!’’ তৃণমূলের নেতা শেখ সুফিয়ান জুড়ছেন, ‘‘দুটো থানা হলে প্রশাসনিক নজরদারি বাড়বে। এতে মানুষ অনেকটা শান্তিতে থাকতে পারবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy