শিশির অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
গত বছর জেলায় পা রেখে ২৪ ঘন্টার মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরে দলের এক গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ও উপপ্রধানকে সরিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে 'নবজোয়ার' কর্মসূচিতে এসে ফের অভিষেক সরিয়ে দেন তমলুকের আরেক পঞ্চায়েত প্রধানকে।
নীচুতলায় এমন ব্যবস্থা নিলেও একের পর এক দলবিরোধী মন্তব্য, কার্যকলাপের পরেও খাতায়কলমে তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ শিশির অধিকারীর বিরুদ্ধে কার্যত চুপ দল। অধিকারীদের ক্ষেত্রে কেন এই ব্যতিক্রম, দলের অন্দরে সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
গত শনিবার দিঘায় কালীপুজোর উদ্বোধনে গিয়ে প্রকাশ্য মঞ্চেই কাঁথির সাংসদ শিশির বলেছেন, ‘‘এই সরকার (তৃণমূলের) যত তাড়াতাড়ি বিদায় নেবে, ততই মঙ্গল।’’ গত সেপ্টেম্বরে খেজুরি -২ পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতির নির্বাচনেও শিশির বিজেপিকে সমর্থন করেছেন বলে রাজ্যের করেছেন বলে তৃণমূলের তরফেই অভিযোগ করা হয়েছে। তাতে সিলমোহর দিয়ে শিশিরও তখন বলেছিলেন, ‘‘দল কোনও হুইপ দেয়নি। তাই যারা উন্নয়ন করতে পারবে তাদেরকেই ভোট দিয়েছি।’’ এত কিছুর পরেও কেন দল সাসপেন্ড বা বহিষ্কারের মতো পদক্ষেপ করছে নাস তৃণমূলের অন্দরে প্রশ্ন তা নিয়েই।
গত বছর ডিসেম্বরে কাঁথিতে সভা করতে যাওয়ার পথে মারিশদায় গ্রামবাসীদের অভাব-অভিযোগ শুনেই অভিষেক স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ঝুনুরানি মণ্ডল, উপপ্রধান রামকৃষ্ণ মণ্ডল এবং অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি গৌতম মিশ্রকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। তারপর চলতি বছরে দলের নবজোয়ার কর্মসূচিতে পূর্ব মেদিনীপুরে পা রেখে তমলুকের এক গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানকে সরিয়ে দেন ‘তৃণমূলের সেকেন্ড ইন-কমান্ড’।
অথচ খাতায়-কলমে শিশির তৃণমূলের সাংসদ হয়েও ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যাওয়ার পর থেকেই প্রকাশ্যে গেরুয়া শিবিরকে সমর্থন শুরু করেন। পরে পদ্মে যান শিশিরের ছোট ছেলে সৌমেন্দুও। ক্রমে কালীঘাটের সঙ্গে ক্রমশ দূরত্ব বাড়ে কাঁথির 'শান্তি কুঞ্জের'। শিশিরের আরেক ছেলে দিব্যেন্দুও বাবার মতোই তৃণমূলে থেকেও নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছেন। তবে শিশিরের মতো প্রকাশ্যে গেরুয়া মঞ্চে জেখা যায়নি দিব্যেন্দুকে।
গত বিধানসভা ভোটের আগে এগরায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং কাঁথিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী জনসভায় মঞ্চে হাজির ছিলেন শিশির। উত্তর কাঁথি বিধানসভা এলাকায় বিজেপি প্রার্থীক সমর্থনে প্রচার করতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখেও পড়েছিলেন। এ সবের পরে শিশিরের সাংসদ পদ বাতিলের দাবিতে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে একাধিকবার লিখিত আবেদন জানিয়েছে তৃণমূলের সংসদীয় দল। তারপরেও শিশির এবং দিব্যেন্দু দলের নির্দেশ অমান্য করে দিল্লিতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নেন।
এতকিছু সত্ত্বেও দল কোনও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ না নেওয়ায় নীচুতলার তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে। মারিশদা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া তৃণমূলের নেতা রামকৃষ্ণ মণ্ডলের আক্ষোপ, ‘‘আমরা সবাই চুনোপুঁটি। আমাদের যে কোনও সময় সাজা হতেই পারে। কিন্তু ওঁরা তো হচ্ছেন বড় মানুষ।’’ তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক তরুণ মাইতির দাবি, ‘‘শিশির অধিকারী যেহেতু বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে আর দলগত পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে তার সাংসদ পদ খারিজের দাবিতে দলের তরফে অভিযোগ জানানো হয়েছে। তার সুবিচার মেলেনি।’’ তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিন্তু বিজেপিতে যাননি শিশির। পদ্ম-পতাকাও ধরেননি। তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা পূর্ব মেদিনীপুরের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘জেলায় অভিষেক যাঁদের সরিয়েছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মানুষের অভিযোগ ছিল। আর শিশির অধিকারীর বিষয়টি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy