Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
খড়্গপুরের পুজোয় পুলিশের না

ছোট হয়েও সঙ্কট সেই বড়ই

৬০ থেকে কমে ৩৯ ফুট। কিন্তু তাতেও লাভ হল না খড়্গপুরের ‘বড় পুজো’র। প্রতিমার উচ্চতা কমালেও পুলিশের অনুমতি মিলছে না। ফলে, ফাঁপরে তালবাগিচা নেতাজি ব্যায়ামাগার। মণ্ডপ ও প্রতিমা গড়ার কাজ এগোচ্ছে না। পুজোর মাঠে মোতায়েন পুলিশ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, কোনও কাজই আর এগোনো যাবে না।

ঢেকে রাখা হয়েছে তালবাগিচার বড় দুর্গা। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

ঢেকে রাখা হয়েছে তালবাগিচার বড় দুর্গা। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:২৮
Share: Save:

৬০ থেকে কমে ৩৯ ফুট। কিন্তু তাতেও লাভ হল না খড়্গপুরের ‘বড় পুজো’র। প্রতিমার উচ্চতা কমালেও পুলিশের অনুমতি মিলছে না। ফলে, ফাঁপরে তালবাগিচা নেতাজি ব্যায়ামাগার। মণ্ডপ ও প্রতিমা গড়ার কাজ এগোচ্ছে না। পুজোর মাঠে মোতায়েন পুলিশ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, কোনও কাজই আর এগোনো যাবে না।

কিন্তু কেন পুলিশ রেলশহরের এই পুজোর অনুমতি দিচ্ছে না? পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের জবাব, “কোনও রকম অনুমতি না নিয়েই ওখানে পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। দেশপ্রিয় পার্কের মতো ঘটনা এখানে ঘটতে দেওয়া যায় না।’’ পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা শুভ্রা হালদারের অবশ্য দাবি, ‘‘আমরা কোনও নিয়ম ভাঙিনি।’’

গত বছর ৮৮ ফুটের দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে চমক দিয়েছিল কলকাতার দেশপ্রিয় পার্ক সর্বজনীন। ‘বড়’ দুর্গা নিয়ে পুজোর অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল প্রচার। ‘সত্যি এত বড়’ টিজার শুধু কলকাতা নয়, ছড়িয়ে পড়েছিল জেলায় জেলায়। পরিণাম, পুজো শুরুর আগেই ভিড়ের চাপে ল্যাজেগোবরে উদ্যোক্তা থেকে পুলিশ। ১১ জন দর্শনার্থী পদপিষ্ট পর্যন্ত হন। শেষমেশ, পঞ্চমীর দিন পুজো বন্ধই করে দেয় পুলিশ। পুলিশের নির্দেশে ঢেকে দেওয়া হয় গোটা প্রতিমা।

তারপরেও ৪৭তম বর্ষে এ বার বড় দুর্গা প্রতিমার পরিকল্পনা করে তালবাগিচা নেতাজি ব্যায়ামাগার। উদ্যোক্তারা প্রথমে ঠিক করেছিলেন, ৬০ ফুটের প্রতিমা করবেন। সেই মতো কাজও শুরু হয়েছিল। তা নিয়ে রীতিমতো আলোচনা শুরু হয়েছিল রেলশহরের আনাচকানাচে। খড়্গপুরে বড় ঠাকুরের একটা ট্র্যাডিশন আছেই। কখনও বড় গণেশ হয়েছে তো কখনও বড় বিশ্বকর্মা। তবে ৬০ ফুটের দুর্গা নিয়ে সমস্যা হতে পারে আঁচ করেই সিদ্ধান্তে কিছুটা রদবদল আনেন উদ্যোক্তারা। ঠিক হয় ৬০ নয়, দুর্গা প্রতিমা হবে ৩৯ ফুটের।

কেন এই মত বদল? এক উদ্যোক্তার কথায়, “প্রশাসনের এক সূত্রে জানতে পারি, জেলায় ৪০-৪২ ফুটের বেশি উঁচু প্রতিমা করা যায় না। তাই উচ্চতা কমানো হয়।” কিন্তু আগাম অনুমতি না নেওয়ায় তাতেও বাধ সেধেছে পুলিশ। এ প্রসঙ্গে পুজো উদ্যোক্তাদের ব্যাখ্যা, জেলার পুজোর লিখিত অনুমতি আগে থেকে দেওয়া হয় না। তবে প্রস্তুতি আগেই শুরু করে দিতে হয়। এ বারও তাই হয়েছিল। তবে তাঁরা মৌখিক ভাবে অনুমতি নিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন। এক উদ্যোক্তার আবার দাবি, “কয়েক দিন আগে মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে পুজো কমিটিগুলোকে নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে আমাদের প্রতিনিধি ছিলেন। তখন পুজো নিয়ে কেউ কোনও আপত্তি করেননি।’’

পুজো উদ্যোক্তাদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছিল বলে মানছে খড়্গপুর মহকুমা প্রশাসন। তবে মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, “পুজোর অনুমতি নেওয়ার ক্ষেত্রে এ বার ‘এক জানলা পদ্ধতি’ চালু হয়েছে খড়্গপুরে। এক জায়গাতেই পুলিশ, দমকল, বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারা বসছেন। বৈঠকে সেটুকুই জানানো হয়েছিল।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, , “পুলিশ অনুমতি না- দিলে কিছু করার নেই।’’

জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে পুজো উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ। তখনই জানিয়ে দেওয়া হয়, তালবাগিচার এই পুজো করা যাবে না। কাজ যাতে আর না- এগোয়, সেই জন্য পুজোর মাঠে পুলিশও মোতায়েন করা হয়। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “আমরা জানতাম না, খড়্গপুরে এত বড় প্রতিমা হবে। যখন জানতে পারি, তখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’ কিন্তু এখানে তো খুব বড় দুর্গা হচ্ছে না? জেলা পুলিশের ওই কর্তার জবাব, ‘‘উদ্যোক্তাদের উচিত ছিল, পুলিশ-প্রশাসনকে আগে থেকে সব জানানো। বড় প্রতিমা হলে ভিড় কে সামলাবে!’’ রবিবার ওই পুজো উদ্যোক্তাদের নোটিস পাঠিয়েছেন খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত। তাতে প্রতিমার উচ্চতা ১৫ ফুট করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শেষমেশ প্রতিমার উচ্চতা কমিয়ে পুজো হয়, নাকি পুজোয় দাঁড়ি পড়ে, সে দিকেই তাকিয়ে খড়্গপুরবাসী।

অন্য বিষয়গুলি:

police permit Talbagicha Durga Pujo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy