Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Potato

হিমঘরে মজুত আলু, তবু বাজারে ছেঁকা

জেলা কৃষি বিপণন দফতরের আধিকারিক উত্তম হেমব্রম অবশ্য বলছেন, ‘‘বাজারে আলুর দর কী দাঁড়াচ্ছে, তার উপরে আমরা কড়া নজর রাখছি। দর নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’ দফতর সূত্রে খবর, দিন কয়েকের মধ্যে দাম না- কমলে, বাজারে ব্যাপক অভিযান হতে পারে।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২০ ০২:৩৫
Share: Save:

জোগান যে খুব কম তা নয়। জেলার হিমঘরগুলিতে প্রচুর আলু মজুত রয়েছে। তাও বাজারে আলুর দাম বাড়ছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের বাজারগুলিতে এখন আলু বিকোচ্ছে কেজি প্রতি কমবেশি ২৮-৩০ টাকা দরে। আলুর দামে ছেঁকা লাগছে মধ্যবিত্ত গৃহস্থের। অনেকেরই দাবি, খোলাবাজারে আলুর দাম বেঁধে দিক প্রশাসন। না হলে দাম কমবে না।

জেলা কৃষি বিপণন দফতরের আধিকারিক উত্তম হেমব্রম অবশ্য বলছেন, ‘‘বাজারে আলুর দর কী দাঁড়াচ্ছে, তার উপরে আমরা কড়া নজর রাখছি। দর নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’ দফতর সূত্রে খবর, দিন কয়েকের মধ্যে দাম না- কমলে, বাজারে ব্যাপক অভিযান হতে পারে। এনফোর্সমেন্ট শাখাও অভিযানে নামতে পারে। জেলা কৃষি কর্মাধ্যক্ষ রমাপ্রসাদ গিরি বলেন, ‘‘আমাদের সরকার মনে করে, মানুষের স্বার্থে এই আপৎকালীন পরিস্থিতিতে আলুর মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম এতটা চড়া হওয়া উচিত নয়। কেউ কেউ (ফড়েরা) অতিলাভ করছেন।’’ তাঁর আশ্বাস, আলুর দরের বিষয়টির দিকে নজর রয়েছে। কৃত্রিম সঙ্কট তৈরির চেষ্টা করা হলে তা বরদাস্ত করা হবে না।

জেলা কৃষি বিপণন দফতরের এক সূত্রে খবর, জেলার হিমঘরগুলিতে এ বার ১১ লক্ষ ৮৪ হাজার ৫৪৭ মেট্রিক টন আলু ঢুকেছিল। এর মধ্যে ২৮ জুলাই পর্যন্ত ৪ লক্ষ ১৪ হাজার ৫৯২ মেট্রিক টন আলু বেরিয়েছে। অর্থাৎ, মজুতের মাত্র ৩৫ শতাংশ আলু হিমঘরগুলি থেকে বেরিয়ে বাজারে পৌঁছেছে। এখনও ৭ লক্ষ ৬৯ হাজার ৯৫৫ মেট্রিক টন আলু মজুত রয়েছে, শতাংশের নিরিখে যা ৬৫ শতাংশ। হিমঘরগুলি থেকে বেরনোর সময় আলুর দাম থাকছে কেজি প্রতি ২২- ২৩ টাকা। এক বা একাধিক হাত ঘুরে তা-ই খোলাবাজারে হয়ে যাচ্ছে ২৮- ৩০ টাকা। অথচ চাষিরা দাম পেয়েছিলেন কুইন্টাল প্রতি ১,০০০- ১,২০০ টাকা, অর্থাৎ কেজি প্রতি ১০-১২ টাকা।

আলু উৎপাদনে পশ্চিম মেদিনীপুর স্বাবলম্বী। ভিন্ রাজ্যেও এখান থেকে আলু যায়। মাঠ থেকে সরাসরি হিমঘরে (কোল্ড স্টোরেজ) মজুত হয় আলু। ছোট চাষিদের আলু ফড়েরা কিনে নিয়ে যায়। বড় আলু চাষিরা নিজেরাই স্টোরে আলু রাখেন। বাজার বুঝে বিক্রি করেন। ছোট চাষিদের থেকে যে ব্যবসায়ীরা আলু কেনেন, তাঁরাই আলুর বাজার ‘নিয়ন্ত্রণ’ করেন, ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠান।

এ বার আলুর দাম কেন চড়া?

আলু ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এ বার ফলন কম হয়েছে। অনেকে এখনই হিমঘর থেকে আলু বের করতে চাইছেন না। তাই এই পরিস্থিতি। পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির অন্যতম কর্তা বরেন মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক দুর্যোগে তুলনায় আলুর ফলন এ বার কম হয়েছে। চাহিদা ও জোগানের অসঙ্গতির জন্য একটা সমস্যা রয়েছে।’’ এক ব্যবসায়ীর মতে, ‘‘গত দু’- তিন বছর আলুতে লোকসান হয়েছে। তাই অনেকে কোল্ড স্টোরেজ থেকে এখনই আলু ছাড়তে চাইছেন না। বাজার বুঝে ছাড়বেন।’’

খোলাবাজারে আলুর দাম না কমায় ব্যবসায়ীদের একাংশ আবার সরকারকেই দুষছেন। মিড ডে মিলে বিলির জন্য স্কুলগুলিকে আলু কেনার দর আগে কেজি প্রতি ২২ টাকা দর বেঁধে দিয়েছিল সরকার। এ বার কেজি প্রতি ২৮ টাকা দর বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এক আলু ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘প্রশাসন যেখানে কেজি প্রতি ২৮ টাকা দাম বেঁধে দেয়, সেখানে খোলাবাজারে আলুর দর তার চেয়ে কম হবে, এটা আশা করাই বৃথা।’’

অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এখনও আলু কেনা-বেচা, মজুতদারির উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। গত কয়েক বছরে একবারও আলুর উপর অত্যাবশ্যক পণ্য আইন প্রয়োগ করতে হয়নি। শুধুমাত্র হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে ২০১৪ সালে প্রশাসনিক আদেশে ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানো নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। করোনা-কালে আলুর দরে রাশ টানতে সরকারি নজরদারি চাইছেন ক্রেতা সাধারণ।

অন্য বিষয়গুলি:

Potato Market Price Hike
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy