নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র
সামান্য জ্বর-জ্বালা বাদ দিলে অন্য রকম কিছু হলে তমলুক জেলা হাসপাতাল ছাড়া গত্যন্তর ছিল না নন্দীগ্রামের মানুষের। চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তাই ক্ষোভও ছিল এলাকায়। রাজ্যে পালা বদলের পরে আশার আলো দেখেছিলেন। কারণ নন্দীগ্রামের মানুষকে উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। প্রতিশ্রুতি রাখতে তৈরি হয়েছে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। রাজ্যের অন্যতম স্বাস্থ্য জেলা হিসাবে ঘোষিত নন্দীগ্রাম। তবে এত সবের মধ্যেও বেহুলা-লখিন্দরের লৌহবাসরে ছিদ্রের মতো ফাঁক থেকেই গিয়েছে চিকিৎসা পরিষেবায়।
২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতার আসে তৃণমূল। ২০১৩ সালে নন্দীগ্রামকে স্বাস্থ্যজেলা হিসাবে ঘোষণা করা হয়। নন্দীগ্রামের মানুষ ভেবেছিলেন তাঁদের কথা ভেবেছে নতুন সরকার। এর পর ২০১৫ সালের অগস্টে নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের উদ্বোধনের পর তাঁরা ভাবলেন চিকিৎসার জন্য আর হুট করে তমলুক জেলা হাসপাতাল কিংবা কলকাতায় ছুটতে হবে না। কিন্তু ভুল ভেঙেছে নন্দীগ্রামের মানুষের। প্রায় ৫৫ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি ঝকঝকে হাসপাতালের বাইরের চাকচিক্যই সার! ভিতরের ছবিটা বড়ই করুণ। নামে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হলেও প্রাথমিক চিকিৎসা পরিষেবাটুকুও এখানে মেলে না বলে অভিযোগ। ফলে ভরসা হারানো মানুষজনকে ছুটতে হয় জেলা সদরে। জানা গিয়েছে, আমপানের পর থেকে এই হাসপাতালে এক্স-রে বন্ধ। ছোটখাট দুর্ঘটনায় বা অন্য কারণে এক্স-রে করাতে হলে ছুটতে হবে তমলুক হাসপাতালে। নয়তো কোনও নার্সিংহোমের শরণাপন্ন হতে হবে।
সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে রয়েছে চার-চারটি অপারেশন থিয়েটার। অথচ ব্যবহার হয় মাত্র একটি। কারণ শল্য চিকিৎসকের বড়ই অভাব। সোম-মঙ্গল এই দু’দিন সিজার হয়। সপ্তাহে মাত্র দু’দিন আসেন অ্যানাস্থেটিস্ট ও সোনোলজিস্ট। তবে কোন দিন তা হাসপাতালের কেউ বলতে পারলেন না। কোভিড পরিস্থিতির জন্য আলট্রাসনোগ্রাফি পরিষেবা চালু হয়েছে। তবে আল্ট্রাসনোগ্রাফি যিনি করেন তিনি সপ্তাহে ক’দিন আসেন সে খবরও হাসপাতালের কোনও কর্মীর কাছে থাকে না বলে অভিযোগ। ফলে অনেক নেই-এর মধ্যে যে টুকু রয়েছে তাও অনিয়মিত।
সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, এত বড় পরিকাঠামো গড়ার পরেও ন্যূনতম প্রাথমিক চিকিৎসা থেকে তাঁরা বঞ্চিত হবেন কেন! যখন সবকিছুই অনিয়মিত তা হলে সুপার স্পেশালিটি তকমায় লাভ কী? স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘এক আত্মীয়ের হাত ভেঙে যাওয়ায় মাঝরাতে তাঁকে নিয়ে ছুটতে হয়েছিল তমলুকে সদর হাসপাতালে। কারণ এখানে পরিষেবা পাওয়া যায়নি। সুপার স্পেশালিটি নাম না দিয়ে ওটাকে শুধুমাত্র মাতৃসদন বললেই হয়।’’
নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এখানকার অসুবিধাগুলি নিয়ে বহুবার ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর থেকে নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের জন্য এখনও কোনও নতুন স্থায়ী চিকিৎসক পাঠানো হয়নি।’’
বিজেপির তমলুক জেলা সাংগঠনিক সহ-সভাপতি প্রলয় পালের কটাক্ষ, ‘‘৫৫ কোটির মধ্যে কত কোটি তৃণমূল নেতা নেত্রীদের পকেটে ঢুকেছে সেটা খোঁজ নিন। এত বড় হাসপাতালের বিল্ডিং অথচ পরিষেবা শূন্য। বর্তমান সরকারের জন্য যন্ত্রণা ভোগ করছেন এখানকার মানুষ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy