পুলিশের মুখোমুখি বিজেপি বিধায়ক অশোক দিন্দা ও অন্যরা। নিজস্ব চিত্র।
নন্দীগ্রামের জেলায় রাজনৈতিক উত্তেজনার ভরকেন্দ্র এখন ময়নার বাকচা। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোট থেকেই কার্যত ‘বধ্যভূমি’তে পরিণত হচ্ছে পূর্ব মেদিনীপুরের এই এলাকা।
গত পাঁচ বছরে তৃণমূল ও বিজেপির এলাকা দখল ঘিরে বোমা, গুলি, বন্দুকের লড়াইয়ে উত্তপ্ত রয়েছে বাকচা। সোমবার বিকালে বাকচার গোড়ামহল গ্রামেই বিজেপির বুথ সভাপতি বিজয় ভুঁইয়াকে (৬০) অপহরণ করে খুনের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদে পদ্মের বিধায়ক অশোক দিন্দার নেতৃত্বে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের অবরোধ-বিক্ষোভ চলে। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ অবরোধস্থলে যান রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি ওই খুনে সিবিআই তদন্ত এবং কেন্দ্রীয় হাসপাতালে মৃতদেহ ময়নাতদন্তের দাবি জানান। নিহতের ছেলে কলকাতা হাই কোর্টে আবেদন করেছেন বলেও জানান শুভেন্দু। তিনি জেলা পুলিশ সুপার-সহ তিন পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে ঘটনায় ষড়যন্ত্রের অভিযোগও তুলেছেন।
বাকচায় অশান্তির শুরু ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে পর থেকেই। সে বার বাকচা পঞ্চায়েতের ২১টি আসনের মধ্যে ১৫টিতে জেতে তৃণমূল। তিনটি আসন পায় বিজেপি। তিনটি আসনে জেতেন নির্দলরা। প্রধান কে হবেন, তা নিয়ে তৃণমূলের কোন্দল বাধে। প্রধান নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী সুখলাল মণ্ডলের বিরুদ্ধে দলের বিক্ষুদ্ধ শিবিরকে সমর্থন করে বিজেপি। শেষে সুখলাল প্রধান হলেও তৃণমূলের কোন্দলের সুযোগ নেয় বিজেপি। এলাকায় বিজেপির প্রভাব বাড়ে। পরিস্থিতি এমন হয় যে বাকচায় তৃণমূলের বহু কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া হন। এই আবহে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর বাকচার বরুনা গ্রামে তৃণমূলের বুথ সভাপতি তথা প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য বসুদেব মণ্ডলকে প্রকাশ্য রাস্তায় খুন করা হয়। ২০ জন বিজেপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের হয়।
এরপর বাকচা, গোড়ামহল-সহ কয়েকটি জায়গায় পুলিশ শিবির চালু করে। পুলিশ বাহিনীর নিয়মিত টহল চলে। তাও গত সাড়ে তিন বছরে বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষে বারবার উত্তপ্ত হয়েছে বাকচা। গত বছর মে মাসে গোড়ামহলে হোগলাবাগানে একদিনে উদ্ধার হয়েছিল এক হাজারের বেশি বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম। এর পরেও বোমাবাজি, মারধরে বারবারে শিরোনামে এসেছে বাকচা। জেলা রাজনীতির পর্দেযবেক্ষকদের মতে, বাকচায় দখলদারির রাজনীতিই রক্তক্ষয়ী পথে পৌঁছেছে। ফের আসছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে সেই এলাকা দখলের যুদ্ধেই আবারও প্রাণ গেল এক জনের।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এ দিন বলেন, ‘‘এই ময়নায় ২০১৮ সাল থেকে প্রায় ২৫০ মামলা করেছে বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে। এক হাজারের বেশি কর্মী জেল খেটেছেন। বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্য প্রসেনজিৎ ভৌমিক জেলে রয়েছেন।’’ কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে তাঁর আশ্বাস, ‘‘আপনারা আমার উপর ভরসা রাখুন। বাকচাকে স্থায়ী সমাধান দেব। আজ ময়নার বিজয় ভুঁইয়ার রক্তকে সাক্ষী রেখে বলে গেলাম, আপনারা স্থায়ী শান্তি পাবেন।’’ তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্রের পাল্টা দাবি, ‘‘তৃণমূল খুনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না।" আজ, বুধবার ময়না ব্লকে ১২ ঘন্টার ধর্মঘট পালন করবে বিজেপি। জেলার ১০০টি জায়গায় সকাল ১০টা থেকে ১১টা সড়ক অবরোধও হবে। নিহতের স্মরণে বৃহস্পতিবার ময়নায় মিছিল হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy