মারমুখী: রেয়াপাড়ায় পুলিশের লাঠিচার্জ। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
জাতীয় নাগরকি পঞ্জি ও নতুন নাগরিকত্ব আইনের সমর্থনে নন্দীগ্রামে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অভিনন্দন কর্মসূচি নিয়ে উত্তেজনার পারদ চড়ছিল কয়েক দিন ধরেই। পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর খাসতালুকে দিলীপের এই কর্মসূচিতে পুলিশের অনুমতি ছিল না। শনিবার সকালে নন্দীগ্রামে যাওয়ার পথে তাই পুলিশের বাধায় আটকে গেল দিলীপের কনভয়। পুলিশের বিরুদ্ধে উঠল লাঠিচার্জের অভিযোগও।
নন্দীগ্রামের টেঙ্গুয়া বাজার থেকে নন্দীগ্রাম বাজারের কাছে জানকিনাথ মন্দির পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার রাস্তা ধরে এ দিন অভিনন্দন যাত্রার প্রস্তুতি নিয়েছিল জেলা বিজেপি। কলকাতা থেকে কোলাঘাট হয়ে বেলা ১২টা নাগাদ চণ্ডীপুর বাজারে পৌঁছান দিলীপ ও সায়ন্তন। চণ্ডীপুর বাজার থেকে নন্দীগ্রামগামী রাজ্য সড়ক ধরে কয়েকশো মিটার এগনোর পরেই খোলা গাড়িতে উঠে যাত্রা শুরু করেন তাঁরা। কনভয়ের সামনে ও পিছনে বিজেপি কর্মীরা মোটরবাইকে ছিলেন। চণ্ডীপুরের হাঁসচড়া বাজার, ফুলনি মোড়, ক্ষুদিরামমোড় হয়ে দুপুর ১২টা ৫০ মিনিট নাগাদ নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের রেয়াপড়া বাজারে পৌঁছনোর পরেই পুলিশের ব্যারিকেডের সামনে পড়েন দিলীপরা। হলদিয়ার এসডিপিও তন্ময় মুখোপাধ্যায় ও তমলুকের এসডিপিও অতীশ বিশ্বাসের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী কর্মসূচির অনুমতি না থাকায় তাঁদের আর এগোতে নিষেধ করেন। বিজেপির তমলুক জেলা সভাপতি নবারুণ নায়েক ও কিছু বিজেপি কর্মী ব্যারিকেড সরানোর চেষ্টা করলে বাধে সংঘাত।
অভিযোগ, পুলিশ নবারুণের কলার ধরে ঠেলে সরিয়ে দেয়, বিজেপি কর্মীদের হটতে লাঠিচার্জও করে। উত্তেজনা ছড়ায়। এরপরেই কনভয়ে থাকা বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙতে নিষেধ করেন। ক্রমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পুলিশের ব্যারিকেডের সামনেই দিলীপ-সায়ন্তনরা বক্তৃতা করেন। দিলীপ বলেন, ‘‘১৫ দিন আগে ই-মেলে পুলিশের কাছে আমরা আবেদন করেছিলাম। তাও পুলিশ আমাদের কর্মসূচির অনুমতি দেয়নি। অনুমতি দেবে না, আবার এলে পুলিশ দিয়ে আটকানো হবে।’’
এ দিন নাম না করে শুভেন্দুকে বেঁধেন দিলীপ। বলেন, ‘‘এখানকার এমএলএ, মন্ত্রী, যিনি নিজেকে এখানকার জমিদার মনে করছেন, তিনি কিন্তু বিজেপিকে দেখে ভয় পাচ্ছেন। বিজেপি হেঁটে চলে গেলে নাকি এখানে সব বিজেপি হয়ে যাবে। তৃণমূল থাকবে না। তাই পুলিশ দিয়ে আমাদের আটকানোর চেষ্টা করছেন।’’
নন্দীগ্রাম আন্দোলনেরও স্মৃতিও উস্কে দিয়েছেন দিলীপ। তিনি বলেন, ‘‘আমি সেই দিনের কথা মনে করছি, যে দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিপিএমের অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন গণতন্ত্রের জন্য। আমরাও তাঁর সঙ্গে ছিলাম। নন্দীগ্রামে ঢুকতে পারেতন না। সুষমাজি ও রাজনাথ সিংহ এসেছিলেন। আডবাণীজি তাঁকে সঙ্গে করে নন্দীগ্রামে নিয়ে গিয়েছিলেন।’’
এ দিন নন্দীগ্রামে বিজেপি-র কর্মসূচিতে পুলিশের অনুমতি না দেওয়া নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিজেপি-র দাবি, ই-মেল ও চিঠিতে অনুমতির আবেদন পাঠানো হয়েছিল থানা এবং মহকুমাশাসকের দফতরে। যদিও থানা এবং মহকুমাশাসকের দফতর থেকে দাবি করা হয়েছে, এমন কোনও আবেদন আসেনি। তাই অনুমতি না থাকায় এ দিন কর্মসূচি শুরুর আগেই বিজেপির মাইক খুলে নেয় পুলিশ। কর্মসূচির প্রচার চালানোয় কয়েকজন বিজেপি কর্মীকে পুলিশ সাময়িকভাবে আটকও করে।
তবে নাগরিকত্ব আইন এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জির প্রতিবাদে এ দিন নন্দীগ্রামেই পাল্টা কর্মসূচি ছিল তৃণমূলের। ১০ জানুয়ারি তার অনুমতি চেয়ে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছিল নন্দীগ্রাম ১ ব্লক তৃণমূলের পক্ষ থেকে। সেই অনুমতিও মেলেনি। তবে টেঙ্গুয়া মোড়ে তৃণমূলের মঞ্চ তৈরি হয়েছিল। নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা মেঘনাদ পাল মানছেন, ‘‘পুলিশ আমাদের বাধা দেয়নি। তাই মঞ্চ তৈরি হয়েছে। তবে পথসভার অনুমতি পুলিশ দেয়নি। তাই সভাও হয়নি।’’
শাসকদলের কথা মতো পুলিশ বিজেপি-র কর্মসূচিতে দেয়নি, এই অভিযোগ উড়িয়ে দেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী। তিনি বলেন, ‘’পুলিশ আমাদের কথায় কেন ওদের কর্মসূচি বন্ধ করে দেবে! এ সব অবান্তর কথা।’’ এ প্রসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ইন্দিরা মুখোপাধ্যার বক্তব্য, ‘‘ওখানে একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের কর্মসূচি থাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া হয়নি। দিলীপ ঘোষরা আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন। ওঁরা রেয়াপাড়া থেকেই ফিরে গিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy