আদিবাসী সংগঠনের ডাকে বাংলা বনধের সমর্থনে মেদিনীপুরের কেরানিচটিতে মহিলাদের মিছিল। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
স্তব্ধ একটা গোটা দিন। শুনসান গোটা জেলা। মাওবাদী পর্বে এমন বন্ধ হত জঙ্গলমহলে। কুড়মিদের জনজাতি তালিকাভুক্তি দাবির বিরোধিতায় ২৪টি আদিবাসী সংগঠনের ডাকা বাংলা বন্ধে সর্বাত্মক প্রভাব ঝাড়গ্রামে। বৃহস্পতিবার এই বন্ধের জেরে দুর্ভোগে পড়লেন সাধারণ মানুষ।
এ দিন সকাল থেকেই ঝাড়গ্রাম জেলার ১৮টি জায়গায় পথ অবরোধ করেন আদিবাসী মানুষজন। রাজ্য সড়কের পাশাপাশি গাজশিমূল ও ফেকো হাটে জাতীয় সড়কেও অবরোধ চলে। দূরপাল্লার বহু পণ্যবাহী লরি থমকে যায়। ঝাড়গ্রাম শহর ঢোকার মুখে সারদাপীঠ মোড়ে ব্যারিকেড রেখে রাস্তা অবরোধ করা হয়। সকাল থেকে ঝাড়গ্রাম শহরের জুবিলি বাজার, কোর্ট রোড, আনাজ বাজার,মাছ বাজার ও মেন রোডের সব দোকান বন্ধ ছিল। দুপুরে রাস্তাঘাট শুনশান হয়ে যাওয়ার পরে কিছু ওষুধের দোকান বন্ধ হয়ে যায় সকাল থেকে আদিবাসী সংগঠনের মানুষজন পোস্ট অফিস, বিভিন্ন ব্যাঙ্ক, জেলাশাসকের কার্যালয়-সহ বিভিন্ন অফিসের গেটে পতাকা বেঁধে দেন। জেলাশাসক সুনীল আগরওয়াল বলেন, ‘‘মানুষজনও আসেনি। সে জন্য গেট খোলা হয়নি। তবে অফিসে আমরা রয়েছি। ভিডিয়ো কনফারেন্স চলছে।’’
ঝাড়গ্রাম আদালত চত্বর খোলা ছিল। তবে জেলাজুড়ে বেসরকারি বাস চলেনি। সকালে দু’-একটি সরকারি বাস চললেও বেলা গড়ালেই তা বন্ধ হয়ে যায়। বাসের জন্য পাঁচমাথা মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা সুমিতা জানা বললেন, ‘‘খড়্গপুর যাব। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করছি। কিন্তু বাস নেই।’’ গোপীবল্লভপুরের এক ব্যক্তি ঝাড়গ্রাম মেডিক্যালে আসবেন বলে হাতিবাড়ি মোড়ে অপেক্ষা করছিলেন। বাস না পেয়ে ফিরতে হয়। শহরে হোটেল বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েন মেডিক্যালের রোগীর পরিজনেরা। মেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন এক রোগীর দাদা বলেন, ‘‘ভাত খেতে আশেপাশে অনেকটা গিয়েছিলাম। হোটেল খোলা নেই।’’
মানিকপাড়া এলাকায় কিছু দোকানপাট খোলা ছিল। সেগুলি বন্ধ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ে আদিবাসী সংগঠন। বচসা হয়েছে জামবনির গোদরাশোলেও। পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী কল্যাণ সমিতির ঝাড়গ্রাম শাখার চেয়ারপার্সন মনোজকুমার মান্ডি বলেন, "ক্ষত্রিয় কুড়মিদের সরকার চক্রান্ত করে এসটি করতে চাইছে। তার প্রতিবাদে সব আদিবাসী সংগঠন একত্রিত হয়ে ১২ ঘন্টা বাংলা বন্ধ জেকেছিলাম। জরুরি পরিষেবাগুলিকে আমরা ছাড় দিয়েছি।’’ বাদল কিস্কুর নেতৃত্বাধীন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের জেলা পারগানা ঢেঙা হাঁসদাও বলেন, ‘‘অ-আদিবাসীরা যাতে আদিবাসী হতে না পারে, তাই বন্ধ। এ ছাড়াও শিক্ষা ও জল-জঙ্গল-জমি অধিকারের দাবিতে জেলায় ১৮টি জায়গায় বন্ধ হচ্ছে। ব্যাপক সাড়া পেয়েছি।’’ আর মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে ঢেঙার বক্তব্য, ‘‘বন্ধের কথা আগেই জানানো হয়েছিল।’’ আদিবাসী কুড়মি সামজের মূল মানতা (মুখ্য উপদেষ্টা) অজিতপ্রসাদ মাহাতোর মতে, ‘‘বন্ধ ডাকলে মানুষজন ঝামেলা করতে চায় না। মানিকপাড়া ও গিধনিতে বিরোধিতা করেছে আমাদের লোকজন। তবে কুড়মি ও সাঁওতালদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি যেন না হয়। এটা প্রশাসনকে বুঝতে হবে। প্রয়োজনে দু’পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করা প্রয়োজন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy