Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
State Highway

জোড়া সড়কে নিত্য দুর্ঘটনা থেকে কবে মিলবে নিষ্কৃতি!

স্থানীয়দের অভিযোগ— কোনও রাস্তা ঝাঁ চকচকে, দ্রুতগতিতে দৌড়চ্ছে গাড়ি, বাস, লরি। আবার কোনও রাস্তায় সম্প্রসারণের কাজ চলছে। দিনের শেষে দুই রাস্তাতেই ঘটছে দুর্ঘটনা।

রাধানগরের সুন্দরপুকুর (বাঁ দিকে), দাসপুরের লাউদা-পীরতলা। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।

রাধানগরের সুন্দরপুকুর (বাঁ দিকে), দাসপুরের লাউদা-পীরতলা। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।

  অভিজিৎ চক্রবর্তী
ঘাটাল শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:৫০
Share: Save:

এলাকার দুই রাজ্য সড়ক। একটি ঘাটাল-পাঁশকুড়া, অন্যটি ঘাটাল-চন্দ্রকোনা। ঘাটাল শহর তথা মহকুমাটি রেলপথ সংযুক্ত না হওয়ায়, যোগাযোগ ব্যবস্থার নিরিখে এই রাজ্য সড়ক দু’টিকে এলাকার ‘মেরুদণ্ড’ও বলা যায়। আর সমস্যাটা সেখানেই! সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য সড়কে বাড়ছে বাইক, গাড়ি, বাস, লরির চলাচল। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুর্ঘটনা। ঘটছে মৃত্যুও। দুর্ঘটনা এড়াতে তৎপর পুলিশ-প্রশাসন। চলছে সচেতনতা প্রচার, দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলি চিহ্নিতকরণের কাজ। কিন্তু দিনের শেষে দুই রাস্তায় দুর্ঘটনা কমছে কই— প্রশ্নটা ঘাটালবাসীর!

স্থানীয়দের অভিযোগ— কোনও রাস্তা ঝাঁ চকচকে, দ্রুতগতিতে দৌড়চ্ছে গাড়ি, বাস, লরি। আবার কোনও রাস্তায় সম্প্রসারণের কাজ চলছে। দিনের শেষে দুই রাস্তাতেই ঘটছে দুর্ঘটনা। পুলিশের তথ্য বলছে, গত ছ’মাসে ঘাটাল মহকুমার তিনটি থানা এলাকায় ওই সড়ক দু’টিতে ছোট-বড় মিলিয়ে ১০০’রও বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যেও অনেক ক্ষেত্রেই মৃত্যু হয়েছে সাধারণ মানুষের। ঘাটাল-চন্দ্রকোনা এবং ঘাটাল-পাঁশকুড়া— জোড়া ফলায় বিদ্ধ ঘাটালবাসীর সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নাজেহাল অবস্থা পুলিশের। ঘাটালের ওই মূল সড়ক দু’টিতে ঘটা দুর্ঘটনার সম্পর্কে খোঁজ করলে দেখা যাচ্ছে, সড়কগুলির কয়েকটি জায়গা দুর্ঘটনার ‘হটস্পট’ হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিততে ঘাটাল-পাঁশকুড়া এবং ঘাটাল-চন্দ্রকোনা সড়ক দু’টিতেই একাধিক জায়গাকে ‘দুর্ঘটনাপ্রবণ’ এলাকা বলে চিহ্নিতও করেছে পুলিশ।

কেন একই জায়গায় কিংবা নির্দিষ্ট একটা জায়গার আশপাশে বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে, সেই তদন্তে নেমে পুলিশের কাছে উঠে আসছে একাধিক কারণ। প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার জন্য সংশ্লিষ্ট মহলে আবেদন জানাচ্ছে পুলিশ। দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলি পরিদর্শনে পূর্ত দফতরের (রোড) ‘সেফটি টিম’এর পদস্থ আধিকারিকেরা আসছেন। সরকারি উদ্যোগেই এলাকায় ঘুরে গিয়েছেন খড়্গপুর আইআইটির বিশেষজ্ঞরাও। পূর্ত দফতরের সহকারি বাস্তুকার গোকুলদাস অধিকারী বলছেন, ‘‘দুর্ঘটনা এড়াতে রাস্তা আরও চওড়া করা হচ্ছে। ফুটপাত চওড়া করা হচ্ছে। রাস্তায় নানা নির্দেশিকাও দেওয়া থাকে। প্রয়োজনে হাম্প,ডিভাইডার,স্পিড ব্রেকার বসানো হয়।’’ কিন্তু সব প্রচেষ্টাই সার, ছেদ পড়ছে না দুর্ঘটনায়।

দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে গিয়ে পুলিশ এবং বিশেষজ্ঞদের হাতে উঠে এসেছে একাধিক কারণ। তার মধ্যে রয়েছে— বিভিন্ন অংশে রাস্তা উঁচু-নিচু এবং হঠাৎ সরু হয়ে যাওয়াও। এ ছাড়া রাস্তার নির্মাণ সংক্রান্ত সমস্যা, তীক্ষ্ণ বাঁক, রাতে রাস্তায় পর্যাপ্ত আলোর অভাব, রাস্তার উপরে অত্যধিক গাছপালার অবস্থান ইত্যাদি। সর্বোপরি, চালক ও পথচারীদের অসাবধানতা তো রয়েইছে। সূত্রের খবর, পরিদর্শক দলের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনা এড়াতে নানা রকমের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তার মধ্যে রয়েছে— রাস্তায় মার্কিং, স্পিড-ব্রেকার বসানো, রাস্তা সংস্কার, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ, পথচারীদের সতর্কতা বাড়াতে প্রচার ইত্যাদি। ঘাটালবাসীর অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসনের তৎপরতা থাকলেও পরিদর্শক দলের পরামর্শ মতো উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে ব্যর্থ প্রশাসন। ফলে রাস্তাগুলি সংস্কার কিংবা গাডির গতি নিয়ন্ত্রণ— হয়নি কোনওটাই। প্রাথমিক ভাবে রাস্তার কোথাও কোথাও মার্কিং করা হলেও, দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানের কাছাকাছি স্পিড-ব্রেকার বসানো হয়নি। দু’টি সড়কের প্রয়োজনীয় স্থানগুলিতে সে ভাবে ট্রাফিকের ব্যবস্থাও নেই। এলাকায় সিভিক ভলান্টিয়ারেরাই নজরদারির দায়িত্বে থাকেন। ঘাটালের বাসিন্দা মৌমিতা পালের অভিযোগ, ‘‘বারবার দুর্ঘটনা ঘটলেও পুলিশ কার্যত নীরব দর্শক। চওড়া রাস্তা ও সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে ট্রাফিক ব্যবস্থাও ঢেলে সাজানো উচিত।’’ সড়ক নিরাপদ হবে কবে, আপাতত সেই অপেক্ষায় সকলে।

অন্য বিষয়গুলি:

State Highway midnapore Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy