Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Kanthi

ঐতিহাসিক ‘নিমকমহল’কে হেরিটেজ ঘোষণার দাবি

আঞ্চলিক ইতিহাসের নথি বলছে, ডররনিথন নামে এক লবণ এজেন্ট ওই জমিতে তিনতলা বাড়ি বানিয়েছিলেন।

 জরাজীর্ণ নিমকমহল। হেরিটেজের আশায়। নিজস্ব চিত্র

 জরাজীর্ণ নিমকমহল। হেরিটেজের আশায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁথি শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২০ ০০:৪৯
Share: Save:

উদাসীনতা আর অবহেলার শিকার হয়ে জরাজীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে ঐতিহাসিক ‘নিমকহল’ বা বড়কুঠি। ক্রমশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে বসেছে পরাধীন ভারতবর্ষের এই স্মৃতিচিহ্ন। নানা ইতিহাসের সাক্ষী নিমকমহল এখন সাপখোপের নিশ্চিন্ত ঠাঁই।

একদা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লবণ ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র ছিল এই নিমকমহল বা বড়কুঠি। কাঁথি মহকুমা গঠনের পর সর্বপ্রথম এই বাড়িতেই মহকুমাশাসকের কাজকর্ম চলত। বর্তমান যেখানে মহকুমা শাসকের নতুন প্রশাসনিক ভবন তৈরু হচ্ছে, সেখান থেকে কয়েক পা দূরেই ঝোপঝাড়ে ঢাকা পড়ে আছে কাঁথির গৌরবময় অতীতের এই স্থাপত্য।

পুরনো নথি ঘেঁটে জানা যায়, ১৭৮৮ সালে তখনও কাঁথি শহরের নামকরণ হয়নি। পূর্ব কুমারপুর মৌজায় লবণ ব্যবসার কেন্দ্র হিসেবে এজেন্ট অফিস খুলেছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ধীরে ধীরে গোটা এলাকা ইংরেজদের নজরে চলে আসে। তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লবণ এজেন্ট হিসেবে এন ডব্লিউ হিউয়েট নিযুক্ত হওয়ার পর এখানে লবণ ব্যবসার স্থায়ী কেন্দ্র হিসেবে ‘নিমকমহল’ গড়ে তুলে কাঁথি ও হিজলি জেলার মধ্যে লবণ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হন। সেসময় হিজলি পরগনার মাজনামুঠার রানি সুগন্ধা দেবীর কাছ থেকে বার্ষিক এক টাকা খাজনার বিনিময়ে ৩০৫ বিঘা সম্পত্তি নিয়েছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ওই জায়গাগুলি মূলত পূর্ব ও পশ্চিম কুমারপুর এবং আঠিলাগড়ি মৌজার। এর মধ্যে কুমারপুর মৌজায় এজেন্ট অফিস হিসেবে তৈরি হয়েছিল তিনতলা ভবন। যা ইতিহাসে প্রসিদ্ধ নিমকমহল বা বড়কুঠি হিসাবে।

আঞ্চলিক ইতিহাসের নথি বলছে, ডররনিথন নামে এক লবণ এজেন্ট ওই জমিতে তিনতলা বাড়ি বানিয়েছিলেন। নীচের তলায় লবণ ব্যবসার কাজকর্ম চলত। দোতলা এবং তিনতলায় লবণ ব্যবসায়ী উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের থাকার ব্যবস্থা ছিল। কাঁথি মহকুমা গঠনের পর লবণ এজেন্টদের কাছ থেকে তৎকালীন ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে পুরো নিমকমহল এবং জমি কিনে নেয় ইংরেজ সরকার। সেখানেই তৈরি করা হয়েছিল কাঁথি মহকুমা শাসকের কাছারি, বাসভবন এবং বাগান। ১৯৪২সালে প্রবল ঘূর্ণিঝড় এবং সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে নিমকমহলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। স্বাধীনতা উত্তর কালেও ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত নিমকমহলেই কাঁথি মহকুমা ফৌজদারি আদালত এবং মহকুমাশাসকের দফতরের কিছু কিছু কাজ হত। কিন্তু বহু বছর ধরে সংরক্ষণের অভাবে প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত নিমকমহল। ইংরেজ আমলে দুটি কামান রাখা হয়েছিল নিমকমহলের সামনে। কামানদু’টি এখন আগাছায় ঢেকে গিয়েছে।

কাঁথির আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষণার সঙ্গে যুক্ত শিক্ষাবিদ হরিপদ মাইতি বলেন, ‘‘নিমকমহল স্বাধীনতার আগে বহু আন্দোলনের সাক্ষী। জেলার অন্যতম ঐতিহাসিক গৌরব। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে বিলুপ্ত হতে বসেছে। সরকার এই ভবনকে সংরক্ষণের পাশাপাশি একে হেরিটেজ হিসাবে ঘোষণা করুক হেরিটেজ কমিশন।’’

কাঁথি র সাংসদ শিশির অধিকারী বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার হেরিটেজ ঘোষণার জন্য একাধিকবার হেরিটেজ কমিশনকে চিঠি দিয়েছে। তারপরেও নিমকমহল একই অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অতীতের এই নিদর্শন সংরক্ষণে স্থানীয়ভাবে কোনও পদক্ষেপ করা যায় কিনা সে ব্যাপারে আমরা ভাবনা চিন্তা করছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Kanthi Nimak Mahal Heritage Building
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy