সকাল থেকে বৃষ্টি দিঘায়। নিজস্ব চিত্র
একই জেলা। অথচ দুই শহরে দুর্যোগের দুই ছবি।
এক দিকে প্রবল বর্ষণের জেরে তটস্থ হলদিয়া। কিন্তু উল্টো ছবি সেখান থেকে একশো কিলোমিটারের কিছুটা বেশি দূরে অবস্থিত দিঘায়। ইয়াসের সময় জল জমে পরিস্থিতি সঙ্গিন হয়েছিল হলদিয়ায়। সেই স্মৃতি তরতাজা বলে এ বারও সেই আশঙ্কা রয়েছে শিল্পশহরে। সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়নি এখনও। অথচ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে গভীর নিম্নচাপের যে বৃষ্টি বুধবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে তাকে ‘থোড়াই কেয়ার’ সৈকত শহরের। আমপান, ইয়াসের মতো দুর্যোগ দেখা দিঘার বুকের ছাতি যেন ফুলে হয়েছে ছাপ্পান্ন ইঞ্চি। পাত্তাই দিচ্ছে না প্রবল বৃষ্টিকে।
নিম্নচাপের জেরে বুধবার প্রবল বৃষ্টির সামনে পড়ে চোখের পাতা কাঁপছে না দিঘাবাসীর। নিউ দিঘার সৈকতের কাছাকাছি দোকান অমর জানার। অমর বলছেন, ‘‘এই বৃষ্টি এমন কিছু নয়। এখানে পর্যটকদের আসা-যাওয়া লেগেই আছে। এখনও এখানে অনেকে আছেন। তাই আমরাও দোকান খোলা রেখেছি বিক্রির আশায়।’’
ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’-এর হাত ধরে দক্ষিণবঙ্গে হাজির হয়েছে গভীর নিম্নচাপ। আবহাওয়া দফতরের আগাম সতর্কতা পেয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে প্রশাসন। দিঘায় মোতায়েন বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। তৈরি রাখা হয়েছে ‘ফ্লাড সেন্টার’ও। পরিস্থিতি তেমন হলে লক্ষাধিক মানুষকে রাতারাতি সরিয়ে ফেলার পরিকাঠামোও প্রস্তুত। কিন্তু আমপান, ইয়াসের মতো ভয়াবহ দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠা সৈকতনগরীর বাসিন্দারা এখন অনেক বেশি ‘সহনশীল’। গভীর নিম্নচাপের পূর্বাভাস পেলেও তাই ঘর ছেড়ে ‘ফ্লাড সেন্টার’-এ যাননি কেউই। এর কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সমুদ্র তীরবর্তী জুনপুটের বাসিন্দা তথা পূর্ব মেদিনীপুর মৎস্যজীবী ফোরামের সভাপতি দেবাশিস শ্যামল বলছেন, ‘‘আমপান, ইয়াসের সময় আমরা বিপর্যয়ের ভয়াবহ চেহারা দেখেছি। এ বার যখন বৃষ্টির খবর পেলাম তখন থেকে আবহাওয়ার খবরে নজর রেখেছিলাম। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এ বার ঝড় হবে ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগে। হাওয়ার এই গতিবেগে উপকুলের মানুষ অভ্যস্ত। সেইসঙ্গে প্রবল বৃষ্টিরও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা উপকূলবর্তী এলাকার মানুষ। এত সহজে ডরাই না।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমরা একাধিকবার ভারী বৃষ্টিপাতের সম্মুখীন হয়েছি। কিন্তু খুব বড় ক্ষতি হয়নি।’’
ইয়াসের সঙ্গে বুধবারের পরিস্থিতির তুলনা টেনে একই কথা বলছেন দিঘা হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চট্টোপাধ্যায়ও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমপান এবং ইয়াসের সময় বিপর্যয়ের অন্য চেহারা দেখেছেন মানুষ। তবে এ বার নিম্নচাপের পরিস্থিতি আলাদা। প্রশাসনের নির্দেশ মতো হোটেলগুলি পর্যটকদের ঘর ছেড়ে দিতে বলেছে। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ থাকলেও প্রতি দিনই দিঘায় পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই আছে। ইয়াসের মতো বিপজ্জনক পরিস্থিতি না হওয়ায় পর্যটকরাও হোটেলে থাকতে নাছোড়বান্দা।’’ দিঘার সৈকতে ব্যাপক নজরদারি চালাচ্ছে প্রশাসন। সমুদ্রে নামাও নিষিদ্ধ এখন। বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রশাসনিক তৎপরতার প্রশংসা করেছেন দেবাশিস এবং বিপ্রদাস দু’জনেই।
দুর্যোগের সামনে বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে সাগর তীরবর্তী দিঘা। বিকেল পাঁচটার পর থেকে আকাশও পরিষ্কার হতে শুরু করে দিঘায়। পর্যটকরাও হোটেলের বাইরে বার হন একে একে। তবে ইয়াসের মতো জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কা তাড়া করে বেড়াচ্ছে নদী তীরবর্তী হলদিয়া শহরকে। নিম্নচাপের কেন্দ্রবিন্দুও বটে হলদিয়া। মঙ্গলবার থেকে প্রলবর বৃষ্টি শুরু হয়েছে ওই শিল্পশহরে। এর মধ্যেই হলদিয়ার চিরঞ্জীবপুর, রানিচক আপণিকা বাজার, ১৫নম্বর ওয়ার্ডে পুরসভার দফতরের আশপাশের এলাকা, ডিঘাসিপুর-সহ হলদিয়া বন্দরের ভিতরেও জল জমেছে। তবে ইয়াস-পর্ব থেকে শিক্ষা নিয়ে শহরের সমস্ত নিকাশি নালা খোলা রাখা হয়েছে। তা ছাড়া নদীতে জোয়ারের সময় না হওয়ায় শহর জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কাও কমেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy