প্রতিবিধান শিবির। নিজস্ব চিত্র
খোদ জেলাশাসক আসছেন শুনে ভিড় করেছিলেন আশপাশের বহু গ্রামের মানুষ। আশা ছিল, জেলা শাসকের উপস্থিতিতে প্রতিবিধান শিবিরে অভাব-অভিযোগের কথা বললে সুরাহা হবে। যোলোআনা সুরাহা অবশ্য হল না। বার্ধক্য ভাতা চেয়ে মিলল একশো দিনের কাজে গাছ লাগিয়ে উপার্জনের পরামর্শ, আর বাড়ির বদলে জুটল ত্রিপল।
আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর বিদ্যাসাগরের জন্মদিনে তাঁর গ্রাম ঘাটালের বীরসিংহে আসার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তার আগে উন্নয়নের নানা দাবিতে সরব বীরসিংহের বাসিন্দারা। ক্ষোভে প্রলেপ দিতে গ্রামে এসেছেন মহকুমাশাসক, তড়িঘড়ি রাস্তা সারানো হয়েছে।
অবস্থা দেখে বৃহস্পতিবার ঘাটাল ব্লকের বীরসিংহ গ্রামে প্রতিবিধান শিবিরের আয়োজন করেছিল জেলা প্রশাসন। বীরসিংহ ভাগবতী হাইস্কুলে শিবিরে হাজার তিনেক মানুষ এসেছিলেন। অল্প সময়ের প্রচারেই সেখানে ভিড়ের বহর দেখে জেলা প্রশাসনোর আধিকারিকরাও কিছুটা অবাক হয়ে যান। এ দিন সকাল থেকে বীরসিংহ হাইস্কুলে ভিড় জমাতে শুরু করেন ব্লকের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। মহিলাদের উপস্থিতি ছিল নজরকাড়া। এ দিন সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি ভিজেই লাইনে অপেক্ষা করেন অনেকে। বিকেল তিনটেয় শিবির শুরু হয়। জেলাশাসক রশ্মি কমল ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসকেরা ও পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার।
ভিড় ঠেলে জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের কাছে পৌঁছেই বীরসিংহ গ্রামের গীতা মল্লিক বাড়ির আর্জি জানান। গীতার কথায়, “আমাকে বলা হয়েছিল শিবিরে যা চাইবেন তৎক্ষণাৎ সুরাহা হয়ে যাবে। আমরা তো থাকার ঘর নেই। তাই ঘর চেয়েছিলাম। পেলাম একটি ত্রিপল।” বরদা রথিপুরের লক্ষ্মীরানি বরদোলই বলেন, “আমি বার্ধক্য ভাতার জন্য বলেছিলাম। আমাকে গাছ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছেন বাবুরা। এমন জানলে আসতাম না।” গাছ লাগিয়ে মিলবে টাকা। শিবিরে আসা সিংহভাগেরই চাহিদা ছিল, আবাস যোজনায় বাড়ি, পেনশন। কেউ চান ছাগল, গরু, হাঁস, মুরগি। অনেকে সেচের জন্য পাম্প, ট্রাক্টরও চান। কেউ চান টোটো। বোয়ালিয়া গ্রামের এক প্রতিবন্ধী যুবক গৌতম সিংহ বললেন, “আমি টোটো চেয়েছিলাম। কিন্তু পেলাম কই!”
গত রবিবার এই ভগবতী হাইস্কুলেই উৎসবের প্রস্তুতিতে গ্রামবাসীর সঙ্গে তৃণমূলের বৈঠক ভেস্তে গিয়েছিল। বিধায়ক শঙ্কর দোলইয়ের অনুপস্থিতি, শাসক দলের নেতাদের দুর্নীতিতে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর একাংশ বিক্ষোভ দেখান। দখল হয়ে যায় শাসক দলের পার্টি অফিস।
মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগে বীরসিংহের ক্ষোভে প্রলেপ দিতেই এ দিনের প্রতিবিধান শিবির। রাত পর্যন্ত শিবির চলেছে। হাজার পাঁচেক মানুষ এসেছিলেন। বীরসিংহ গ্রাম কমিটি জেলাশাসকের হাতে গ্রামের উন্নয়নের ১৬ দফা দাবিপত্র তুলে দেয়। গ্রাম কমিটির সম্পাদক অসীম মণ্ডলের আক্ষেপ, “যেমন বলা হয়েছিল, তেমনটা হল না। আলাদা ভাবে কোনও কথাবার্তা হয়নি। শিবিরে গিয়েই দাবি জানিয়েছি।” জেলাশাসক বলছেন, ‘‘সব সমস্যার সমাধান তো আর সঙ্গে সঙ্গে হয় না। তবে সব সমস্যারই সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে। যে সব প্রবীণ মানুষ গাছ লাগাতে ইচ্ছুক তাঁদেরই আপাতত রোজগারের একটা বন্দোবস্ত করে দেওয়া হয়েছে।’’
আপাতত বন্দোবস্তে ক্ষোভে দাঁড়ি পড়বে তো! প্রশ্ন বিদ্যাসাগের গ্রামেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy