Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
সচেতনতার বালাই নেই

নীচে তেলের পাইপ, উপরে দিব্যি মাছচাষ

হলদিয়া থেকে দুর্গাপুর, পারাদ্বীপ, বারাউনি শোধনাগারে তেল নিয়ে যেতে হলদিয়া, তমলুকে চাষের জমির নীচে পাতা রয়েছে পাইপ লাইন। কিন্তু বেশি লাভের জন্য ওই সব জমিতে যথেচ্ছ ভেড়ির খননে শুধু লাইনের ক্ষতি নয়, পাইপ ফেটে বিপদের আশঙ্কায় ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন। এলাকায় ঘুরে খোঁজ নিল আনন্দবাজার।তেল সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ওই সব জমিতে পাইপ লাইন পাতা হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। ইদানীং জমির মালিকেরা তাঁদের কিছু না জানিয়েই জমিতে বড় বড় পুকুর কেটে চিংড়ি চাষ শুরু করেছেন।

ভেড়ির নীচেই রয়েছে পাইপ লাইন। নন্দকুমারের টিকারামপুরে।

ভেড়ির নীচেই রয়েছে পাইপ লাইন। নন্দকুমারের টিকারামপুরে।

কেশব মান্না
হলদিয়া শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:২৫
Share: Save:

চাষের জমিতে পুকুর কেটে মাছের ভেড়ি তৈরির রেওয়াজ দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। গত কয়েক বছরে পূর্ব মেদিনীপুরে সেই প্রবণতা অনেক বেড়ে গিয়েছে। আর তাতেই প্রমাদ গুনতে শুরু করেছে হলদিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন। কারণ ভেড়ির জন্য খননের ফলে মাটির নীচ দিয়ে পাতা পাইপ লাইন ‘অরক্ষিত’ হয়ে পড়ছে বলে ওই তেল সংস্থার অভিযোগ। জমি মালিকদের অসাবধানতায় ভেড়ি তৈরি করতে গিয়ে শুধু পাইপ লাইনের মারাত্মক ক্ষতিই নয়, পাইপ ফেটে বড় ধরনের বিপদের আশঙ্কা করছে ওই তেল সংস্থা।

তেল সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ওই সব জমিতে পাইপ লাইন পাতা হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। ইদানীং জমির মালিকেরা তাঁদের কিছু না জানিয়েই জমিতে বড় বড় পুকুর কেটে চিংড়ি চাষ শুরু করেছেন। হলদিয়ার মহিষাদলের কিছু এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে এটা দেখা গেলেও তমলুক এলাকায় পাইপ লাইন পাতা রয়েছে এমন জমিতে ব্যাপক ভাবে মাছের ভেড়ি বানানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। জানা গিয়েছে, তমলুক ব্লকের নীলকুন্ঠিয়া, সাদিচক, পুয়াদা, বাহারপোতা এবং নন্দকুমার ব্লকের টিকারামপুরে একের পর এক জমিতে পাইপ লাইনের উপর তৈরি হয়েছে মাছের ভেড়ি।

ইন্ডিয়ান অয়েল এর সার্ভে অফিসার (পাইপ লাইন) অশোক কুমার ঢালি জানিয়েছেন, সাধারণত মাটির উপরের তল থেকে অনন্ত দেড় মিটার নীচে পাতা হয় তেল সরবরাহের পাইপ। ফলে ভেড়ি বা পুকুরের জন্য জমি খুঁড়তে গিয়ে সামান্য আঘাতেই পাইপ লাইন ফুটো হয়ে যাওয়ার বিপদ রয়েছে।’’

তেল শোধনকারী সংস্থার তরফে জানা গিয়েছে, হলদিয়া ও তমলুক মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় দেড় মিটার (প্রায় ৫ ফুট) নীচে পাতা ওই পাইপ লাইনগুলির একটি গিয়েছে পারাদ্বীপ, একটি দুর্গাপুর ও একটি বিহারের বারাউনি। ১৯৬৩-’৬৪ সালে প্রথম পাইপ লাইন পাতা শুরু হয়েছিল অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায়। জমি মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল। শর্ত ছিল, যত বার পাইপ লাইন সারানো হবে ততবার জমির মালিক ক্ষতিপূরণ পাবেন। পাইপ লাইনের যাতে ক্ষতি না হয় সে বিষয়েও জমির মালিকদের সচেতন করা হয়। কিন্তু জমি মালিকদের একাংশ সেই নিয়ম মানছেন না বলে অভিযোগ।

ভেড়ির জন্য মাটির উপরের তল থেকে ৫ ফুট গভীর পর্যন্ত জলাধার তৈরি করতে হয়। আর এতেই প্রমাদ গুনতে শুরু করেছে তেল সংস্থা। কারণ, পুকুর কাটতে গিয়ে ট্রাক্টর বা অন্য কোনও যন্ত্রের আঘাত লেগে যে কোনও সময় পাইপ লাইন ফেটে বড় ধরনের বিপদ ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

ইন্ডিয়ান অয়েলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মুকেশ কুমার বলেন, ‘‘মাছের ভেড়ি কিংবা জলাধার বানিয়ে আদতে পাইপ লাইন গুলি অরক্ষিত করে দেওয়া হচ্ছে। এতে গ্যাস লিক করে বড়সড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটতে পারে।’’

যদিও জমিমালিকদের যুক্তি, পাইপ লাইন পাতার জন্য তেল সংস্থা আইওসি) যে ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল, তার চেয়ে ঢের বেশি টাকা দেয় ভেড়ি ব্যবসায়ীরা। রবীন্দ্রনাথ জানা নামে স্থানীয় এক জমির মালিক বলেন, ‘‘তেল শোধনকারী সংস্থা শুধু পাইপ লাইন পাতার সময় ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল। তারপর আর কোনও ক্ষতিপূরণ মেলেনি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

IOC Indian Oil Corporation Fish Farm Pipeline
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE