প্রশান্ত সামন্ত। নিজস্ব চিত্র
বছর আটেক আগে তমলুক জেলা হাসপাতালে চক্ষুদানের একটি বিজ্ঞাপন নাড়া দিয়েছিল পাঁশকুড়ার প্রশান্ত সমান্তকে। সেই বিজ্ঞাপন দেখে এবং তমলুক হাসপাতাল সূত্রে তাঁর যোগাযোগ হয় চৈতন্যপুরের নেত্র নিরাময় কেন্দ্রের ‘আই ব্যাঙ্কে’র আধিকারিকদের সঙ্গে। আর তাতেই বদলে গিয়েছে প্রাশন্তের জীবনযাত্রা! নিজের এলাকায় কোথাও মৃত্যুর খবর পেলেই সেখানে ছুটে যান প্রশান্ত। মৃতের আত্মীয়দের বোঝান চক্ষুদানের গুরুত্ব। আর তাতে তাঁরা রাজি হলেই ‘আই ব্যাঙ্কে’র আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাহায্য করেন চক্ষুদানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, পেশায় বিমা সংস্থার এজেন্ট প্রশান্তের বাড়ি পাঁশকুড়ার বাহারপোতা গ্রামে। বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী, দুই ছেলে এবং বাবা-মা। তিনি জানাচ্ছেন, ১৯৯৩ সালে মাধ্যমিক পাস করার পরেই বিমা সংস্থার এজেন্ট হিসাবে কাজে যোগ দেন। কিন্তু ২০১০ সালে তমলুক জেলা হাসপাতালে লাগানো চক্ষুদানের বিজ্ঞাপন দেখে তাঁর মনে হয়েছিল, বিষয়টি নিয়ে সকলকে সচেতন করা উচিত। পরে যোগাযোগ হয়েছিল ‘আই ব্যাঙ্কে’র আধিকারিকদের সঙ্গে।
প্রশান্তের দাবি, ২০১০ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ৪০ জন মৃত ব্যক্তির চক্ষু সংগ্রহ করে ৮০ জন দৃষ্টিহীনকে তা দান করা হয়েছে। প্রায় একশোরও বেশি মানুষকে চক্ষুদানের অঙ্গীকারে সই করিয়েছেন। তবে এ জন্য তাঁকে যথেষ্ট কাঠখড়ও পোড়াতে হয়েছে। প্রশান্তের কথায়, ‘‘অন্তত ৪০০ জন মৃত ব্যক্তির পরিবারকে বুঝিয়েছি। কিন্তু রাজি হয়েছেন মাত্র ৪০টি পরিবার।’’ প্রশান্তের বক্তব্য, চক্ষুদানের মতো মহৎ কাজ ঘিরে এলাকায় বহু কুসংস্কার রয়েছে। তাঁর দাবি, চক্ষু সংগ্রহ করতে গিয়ে কোনও মৃতের পরিবার তাঁকে জানিয়েছেন, চক্ষুদান করলে পরের জন্মে ওই ব্যক্তি অন্ধ হয়ে জন্মগ্রহণ করছেন। আবার কেউ কেউ বিষয়টি হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন। তবে প্রতিকূলতরা মধ্যেও লড়াই জারি রেখেছেন প্রশান্ত।
প্রশান্তের লড়াই প্রসঙ্গে চৈতন্যপুর বিবেকানন্দ মিশন আশ্রম নেত্র নিরাময় নিকেতনের ‘আই ব্যাঙ্কে’র অপটোমেট্রিস্ট পবিত্রকুমার মাইতি বলেন, ‘‘প্রশান্তবাবু আমাদের সঙ্গে আট বছর ধরে চক্ষুদানের কাজে সহযোগিতা করে চলেছেন। মানুষকে চক্ষুদানে বিষয়ে বোঝানোর মত গুরুদায়িত্ব উনি পালন করেন। ওঁর এই নিঃস্বার্থ সেবা আমাদের কাজের ক্ষেত্রে খুবই সহায়ক।’’
নিজের লড়াইয়ে প্রশান্ত পাশে পেয়েছেন স্ত্রী রাঙা এবং বন্ধুদের। স্ত্রী রাঙার কথায়, ‘‘অন্ধদের দৃষ্টিদান, এর থেকে মহৎ কাজ আর কী থাকতে পারে! ওর কাজে আমারা যতটা সম্ভব সমর্থন করি।’’ চক্ষুদানের অঙ্গীকারপত্রে সই করেছেন রাঙাদেবী এবং প্রশান্তের বাবা-মা-ও। প্রশান্তের এক পরিচিতের কথায়, ‘‘এলাকায় কারও মৃত্যুর খবর পেলে ওঁকে জানাই। ও আমাদের কাছে গর্বের।’’ আর এলাকাবাসীর কাছে প্রশান্ত ‘নয়নমণি’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy