Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Padmashree Award

পদ্মশ্রী দাদা আসবেন, ব্যস্ততা বেড়েছে ভাইয়ের

গত শতকের আটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে রতনচন্দ্র কর গড়বেতায় এসে স্থায়ীভাবে চিকিৎসা পরিষেবা দেবেন বলে মনস্থির করেছিলেন।

গড়বেতায় পদ্মশ্রী প্রাপক রতনচন্দ্র করের ভাইয়ের বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

গড়বেতায় পদ্মশ্রী প্রাপক রতনচন্দ্র করের ভাইয়ের বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য
গড়বেতা শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:০১
Share: Save:

এ বার ভারত সরকারের ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত হচ্ছেন চিকিৎসক রতনচন্দ্র কর। আন্দামানে জারোয়া জনজাতিদের সঙ্গে কাজ করার জন্য পদ্মশ্রী সম্মানের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে রতনচন্দ্রকে। দাদার সম্মান প্রাপ্তিতে উচ্ছ্বসিত তাঁর একমাত্র ভাই সীতারাম কর, ভাইয়ের স্ত্রী, ছেলেমেয়েরা। ভাইয়ের বাড়ি গড়বেতার উপরপাথরীশোল গ্রামে। সোমবার সকালে তাঁর টিনের ছাউনির মাটির বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল কাজের ব্যস্ততা। ঘরে আসবেন যে ‘পদ্মশ্রী’ দাদা!

রতনচন্দ্র করের ভাই সীতারাম কর জানান, তাঁরা ২ ভাই, ২ বোন। জন্মস্থান ঘাটালের মনসুকার বনহরিসিংহপুর গ্রামে। সেখান থেকে দাদা স্কুল ফাইনাল পাশ করে উচ্চশিক্ষার জন্য শান্তিনিকেতনে চলে যান। এইসময় বাবা প্রয়াত কালীপদ কর ঘাটাল থেকে সপরিবারে চলে আসেন গড়বেতার এই উপরপাথরীশোল গ্রামে। ঘাটালের বাড়িতে আত্মীয়েরা রয়ে যান। দাদা মেডিক্যাল সায়েন্স নিয়ে পড়ে চিকিৎসক হন। পরবর্তীকালে কলকাতার এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ, নাগাল্যান্ড, আসাম রাইফেলসে চিকিৎসক হিসাবে কাজ করার পর দাদা চলে যান আন্দামান।

গত শতকের আটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে রতনচন্দ্র কর গড়বেতায় এসে স্থায়ীভাবে চিকিৎসা পরিষেবা দেবেন বলে মনস্থির করেছিলেন। চেম্বার খোলার জন্য বাড়ি ভাড়া নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। সেইসময় তাঁকে বাইকে চাপিয়ে ঘুরতেন বন্ধু পাথরীশোল গ্রামের পঞ্চানন ঘোষাল। বন্ধুর 'পদ্মশ্রী' প্রাপ্তিতে যারপরনাই উচ্ছ্বসিত ভূমি দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী পঞ্চানন বলেন, ‘‘গড়বেতায় চেম্বার খোলার জন্য ওঁকে নিয়ে বাইকে বাড়ি খুঁজতে অনেক ঘুরেছি। ওঁকে(রতনচন্দ্র) বাইক শিখিয়েছি যাতে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে সুবিধা হয়। তবে বাড়ি আর মেলেনি, গড়বেতাতেও ওঁর থাকা হয়নি। তবে বন্ধু যে পদ্মশ্রী সম্মান পাচ্ছে, এটা আমাদের কাছে কম গর্বের!’’ ইতিমধ্যে মোবাইলে বন্ধুকে অভিনন্দন জানিয়েছেন পঞ্চানন। ফোনে অভিনন্দন জানিয়েছেন সেইসময় তাঁর সঙ্গে পরিচয় হওয়া গড়বেতা বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামল মহাপাত্র। তিনি বলেন, ‘‘গড়বেতায় থাকলে হয়তো এতবড় সম্মান নাও পেতে পারতেন! তবে গড়বেতাকে গর্বিত করলেন উনি।’’

দাদার সম্মানে উচ্ছ্বসিত ভাই মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক সীতারাম কর, ভাইয়ের স্ত্রী চম্পা, তাঁদের ছেলে মেয়ে সৌম্যদীপ, মৌপ্রিয়ারা। সীতারাম বলছিলেন, ‘‘গতবছর মার্চে এখানে এসেছিলেন দাদা, সেইসময় জমি থেকে আলু তোলার কাজ চলছিল। দাদাও সেই কাজে তদারকি করেছিলেন, দিন দুয়েক থেকে কলকাতায় চলে গিয়েছিলেন।’’ 'পদ্মশ্রী' দাদা আসবেন, কাজের ব্যস্ততা বেড়েছে ভাইয়ের ঘরে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। ভাই সীতারামের স্ত্রী চম্পা বলেন, ‘‘দাদা তেল ঝাল মশলার রান্না পছন্দ করেন না। তাই দাদার প্রিয় আলু পোস্ত আর শাকের তরকারি করে খাওয়াব। আগের বার এসে এগুলো তৃপ্তি করে খেয়েছিলেন।’’

রতনচন্দ্র কর এখন আছেন বেঙ্গালুরুতে। সেখান থেকে ফোনে তিনি বললেন, ‘‘পদ্মশ্রী পাওয়ার খবর গড়বেতার বাড়িতে ভাইকে জানিয়েছি। খুব শীঘ্রই গড়বেতা যাব। সম্ভবত ১৯৮৬ সালে গড়বেতায় গিয়ে বছর দেড়েক ছিলাম, গতবছরও গিয়েছিলাম। সকলের সঙ্গে দেখা হবে।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘৩৪ বছর ধরে আন্দামানে জারোয়া জনজাতিদের ঘরে ঘরে গিয়ে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য আমাকে পদ্মশ্রী সম্মানের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে, এর জন্য সকলকে ধন্যবাদ।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Padmashree Award Garbeta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy