Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Hilsa Fish

Hilsa Fish: দিঘার সমুদ্রে অমিল ইলিশ, নিয়ম না মেনে নির্বিচারে জাল টানা ঘিরে উঠছে প্রশ্ন

পূর্ব মেদিনীপুর মৎস্যজীবী ফোরামের সম্পাদক দেবাশিস শ্যামল জানান, সমুদ্রে ছোট ফাঁসের জালে নির্বিচারে মাছ ধরা চলছে বছরের বড় অংশ জুড়ে।

পেটুয়াঘাটে ট্রলায়ের সারি।

পেটুয়াঘাটে ট্রলায়ের সারি। নিজস্ব চিত্র।

সুমন মণ্ডল 
কাঁথি শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২১ ২১:১৭
Share: Save:

গত কয়েক বছরের ইতিহাস ঘেঁটে এমন পরিস্থিতির কথা মনে করতে পারছেন না কেউই। গোটা মরসুমে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে নেমে এ ভাবে শূন্য হাতে ফিরে আসা ট্রলারের সারি হতাশ করছে মৎস্যজীবীদের। বর্ষার ভরা মরশুমে একটি যাত্রায় ট্রলার পিছু মাত্র কয়েক কিলোগ্রাম ইলিশ মিলছে। অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের আমদানিও খুবই কম।

একদিকে জ্বালানি তেলের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি, সেই সঙ্গে মাছের আকালের জেরে ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কার প্রহর গুনছেন দিঘা-সহ পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী এলাকার মৎস্যজীবীরা।

কিন্তু কী ভাবে তৈরি হল এমন পরিস্থিতি? আচমকাই কোথায় উধাও হয়ে গেল মোহনা আর সমুদ্রের ইলিশের ঝাঁক? প্রশ্ন উঁকি দিতে শুরু করেছে মাছ শিকারিদের মনে। চিন্তিত মৎস্য বিশেষজ্ঞরাও। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় নেমে পড়েছে মৎস্যজীবিদের সংগঠনও। ঘটনার অন্তর্তদন্তে উঠে এসেছে একাধিক সম্ভাব্য কারণ।

পূর্ব মেদিনীপুর মৎস্যজীবী ফোরামের সভাপতি দেবাশিস শ্যামলের যুক্তি, সমুদ্রে নির্বিচারে মাছ ধরা চলছে বছরের বড় অংশ জুড়ে। আর এই ‘ওভার ফিশিং’ ধ্বংস করে দিচ্ছে সমুদ্রে মাছের মজুত। কারণ সমুদ্রে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির সুযোগ পাচ্ছে না। তাঁর কথায়, ‘‘সমুদ্রে মাছের যা ‘স্টক ক্যাপাসিটি’ তার প্রায় সবটাই আমরা তুলে ফেলছি।’’

পাশাপাশি, সমুদ্রের তলদেশ লন্ডভন্ড করে ‘বটম ট্রলিং’ এবং ছোট ফাঁসের জাল ব্যবহার করে খোকা ইলিশ-সহ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের চারা ধরাকেও দায়ী করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে সমুদ্র দূষণ এবং পরিবেশের খামখেয়ালিপনা ইলিশ-সহ নানা মাছ কমে যাওয়ার জন্য অনেকটা দায়ী বলে জানান দেবাশিস। তিনি বলেন, ‘‘উষ্ণতা এবং জলস্তর বাড়ছে। যখন-তখন ঘূর্ণিঝড়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সব কিছুর মিলিত প্রভাবে গত এক দশকে মাছ ৬০ শতাংশ কমে গিয়েছে। অনেক প্রজাতির মাছ আছে যে গুলি ধ্বংস হয়ে গেছে। পরিস্থিতি সামলাতে অবিলম্বে সক্রিয়তা দরকার।’’

বর্তমানে গ্রীষ্ম-বর্ষায় ৬১ দিন (১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন) সমুদ্র মাছ ধরা নিষেধ। কারণ, এই সময়টি ইলিশ-সহ নানা মাছের প্রজননের সময়। শ্যামলের মতে, সমুদ্রের গভীরে মাছ ধরতে সক্ষম ৩০ অশ্বশক্তির বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রলারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়ে ১২০ দিন করা উচিত। ৩০ অশ্বশক্তি বা তার কম ক্ষমতার যন্ত্রচালিত নৌকার ক্ষেত্রে অন্তত ৯০ দিন। তবে হাতে টানা নৌকা এবং হাত-জাল ব্যবহারকারীদের ছাড় দেওয়ার পক্ষপাতী তিনি। পাশাপাশি, জালের ফাঁসের মাপ বড় করা এবং সরকারি নির্দেশিকা ঠিক ভাবে পালিত হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য উপযুক্ত নজরদারির কথাও বলেছেন শ্যামল। এ ছাড়া হলদিয়া বন্দরে জাহাজ চলাচলের জেরেও ব্যাপক হারে জল দূষণ হচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ।

‘দিঘা ফিশারম্যান অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর ডিরেক্টর নবকুমার পয়ড়্যা বলেন, “এই মুহূর্তে দিঘার সমূদ্রে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৩,৬০০ লাইসেন্স ভুক্ত ট্রলার রয়েছে। তবে এ বার সমূদ্রে মাছ প্রায় নেই। বছর দশেক আগেও ঠিক এমনই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তবে এ বার পরিস্থিতি আরও ভয়ানক। সমুদ্র ও নদীর খাঁড়ি থেকে ইলিশ প্রায় উধাও। অন্যান্য বছর এমন সময় প্রতিদিন যেখানে ২০ থেকে ২৫ টন ইলিশ আমদানী হত এবার তা মাত্র পাঁচ-দশ কিলোগ্রামে নেমে এসেছে।’’

নবকুমারের দাবি,মাছের আকালে পেটুয়াঘাটে এশিয়ার সর্ববৃহৎ মৎস্য নিলাম কেন্দ্রের অস্তিত্ব সঙ্কটে। আগে যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৪ কোটি টাকার বেশি মাছের নিলাম হত সেখানে এখন দিনে ১কোটিরও নীচে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, “এ বছর শুরু থেকেই ডিজেলের আকাশছোঁয়া দামের পাশাপাশি মাছের আকালের খবর পেয়ে ৩০ শতাংশ ট্রলার সমূদ্রেই নামেনি। বাকী ৭০ শতাংশ ট্রলারের মধ্যে লোকসানের জেরে অনেকগুলিই মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছে। বাকিদের অবস্থাও করুণ।’’

এক বার মাছ ধরতে ঠিক কতটা খরচ হিসেব দিয়ে নবকুমার জানান, “একটি ট্রলার সমূদ্রে মাছ শিকারে গেলে ৭ থেকে ১০ দিন পর ফেরে। এই এক দফায় ছোট ট্রলারের তেল খরচ প্রায় ২,০০০ লিটার (২ লক্ষ টাকা) আর বড় ট্রলারে খরচ হয় ৩,০০০ লিটার (৩ লক্ষ টাকা)। এ ছাড়াও বিপুল টাকার জাল, ট্রলারের কর্মীদের খরচ তো রয়েইছে। কিন্তু মাছ আসছে সামান্য পরিমাণে, যা থেকে খরচ ওঠানোই মুশকিল।’’ তাঁর দাবি, “কেন্দ্র ও রাজ্য এখনই এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করুক। ট্রলারের জ্বালানি তেলের ওপর ভর্তুকি চালু করা হোক।’’

সমুদ্রবিজ্ঞানী প্রসাদ টুডুর মতে, “সমূদ্রের জলে দূষণ বাড়ার পাশাপাশি ব্যাপক হারে মৎস্য শিকারও মাছ কমার বড় কারণ। যে সময় ইলিশের ঝাঁক সমুদ্র থেকে নদীর দিকে ছুটে আসে ডিম পাড়ার জন্য সে সময়ই তাঁদের ধরে নেওয়া হয়। বছরের পর বছর ধরে এ ভাবে চলতে থাকায় ধাপে ধাপে সমুদ্রে মাছের প্রজনন কমে গিয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

digha Purba Medinipur fishing trawler Hilsa Fish
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy