২০১০ সালে এই বাড়িতে বাজি বিস্ফোরণে তিনজনের মৃত্যু হয় (বাঁ’দিকে)। নিজস্ব চিত্র।
বাজির গ্রামে ‘ভূতে’র বাড়ি। সেই বাড়িরই মালকিন বাজির আগুনে সকলের সামনে জ্বলে মারা গিয়েছিলেন।মৃত্যু হয়েছিল আরও দু’জনের। তারপর প্রায় দেড় দশক ধরে কোলাঘাটের পয়াগ গ্রামে দাঁড়িয়ে রয়েছে ‘ভূতুড়ে’ বাড়িটির কঙ্কাল। পরিবারের সদস্যরা হয়েছেন গ্রামছাড়া। আর ঘটনার ভয়াবহতা দেখে ভয়ে পেশা বদলে ফেলেছিলেন ওই গ্রামে বাসিন্দা তথা বাজি কারবারি নিমাই মাইতি। কিন্তু অতীত পেশার ‘কর্মফল’ ফেন এখনও তাড়া করে চলেছে তাঁকে। তাই পুলিশের অভিযান থেকে বাঁচতে নিমাই ঘরের সামনে ব্যানার দিয়েছেন— ‘বাজি তৈরি এবং বিক্রি করি না’!
কোলাঘাটের পয়াগ গ্রামটি ‘বাজির হাব’ হিসাবে পরিচিত। মাঝে মধ্যেই এখানের বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ হয়। গত রবিবার রাতেও আনন্দ মাইতি নামে এক বাজি কারবারির দোতলা কারখানায় বিস্ফোরণ হয়েছে। প্রাণহানি না হলেও ধূলিস্যাৎ হয়েছে বাড়িটি। এর পরেই গ্রামে পুলিশ তল্লাশি জোরদার হয়েছে।স্থানীয় সূত্রের খবর, অধিকাংশ বাজি করাবারি বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। তবে থেকে গিয়েছেন আনন্দ মাইতির প্রতিবেশী নিমাই মাইতি এবং তাঁর স্ত্রী সন্ধ্যা। নিজের বাড়ির সামনে ফ্লেক্স ঝুলিয়েছেন লিখেছেন, ‘এখানে কোনও রকম বাজি তৈরি ও বিক্রি হয় না। দয়া করে কেউ এই বাড়ির দরজা, জানালা ভাঙচুর করবেন না। বাড়ির লোককে ডাকুন দরজা খুলে দেবে।...দয়া করে বাড়িতে শান্তিতে বসবাস করতে দিন।’’
কেন এই ফ্লেক্স? নিমাইয়ের স্ত্রী সন্ধ্যা মাইতি বলেন, ‘‘আগে বাজির কারবার করতাম। চোখের সামনে তিনজনকে মরতে দেখেছি। তারপর কারবার ছেড়ে দিই। কিন্তু এখনও কিছু লোকের প্ররোচনায় পুলিশ আমাদের বাড়িতে একাধিকবার হামলা চালায়। তল্লাশির নামে বাড়ির দরজা, জানালা ভেঙে দেয়। আমার স্বামীর নামে ৫-৬ টি মিথ্যা মামলা করেছে পুলিশ।’’ সন্ধ্যার কথায়, ‘‘এবারও পাড়ায় পুলিশ সারাক্ষণ টহল দিচ্ছে। যাতে বাড়িতে পুলিশি অভিযান আর না হয়, তাই বাড়ির সামনে ওরকম ফ্লেক্স দিয়েছি।’’
নিমাইরা জানাচ্ছেন তাঁদের বাজি কারবার ত্যাগের কারণ। ২০১০ সালে দুর্গাপুজোর সপ্তমীর সকালে পয়াগ গ্রামে যখন পুজোর আয়োজন করছেন গ্রামবাসী, সে সময় হঠাৎ বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল গোটা গ্রাম। জানা যায়, পয়াগ গ্রামের বাজি কারবারি লক্ষ্মীকান্ত মাইতির বাড়ির দোতলায় বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটেছে। বিস্ফোরণের জেরে ছাদের চাঙড় ভেঙে চাপা পড়ে যান লক্ষ্মীকান্তর ভাইপো এবং একজন বাজি তৈরির কারিগর। লক্ষ্মীকান্তর স্ত্রী'র শাড়িতে বাজি থেকে আগুন ধরে যায়। বাঁচার তাগিদে লক্ষ্মীকান্তের স্ত্রী দোতলা থেকে ছুটে আসেন বাড়ির বাইরে। বাড়ির উঠোনে সে সময় এক বাজি ক্রেতার মোটরবাইক রাখা ছিল। শাড়ির আঁচল বাইকে জড়িয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ধরে যায় বাইকেও। জ্বলন্ত অবস্থায় বাঁচার জন্য চিৎকার করেন লক্ষ্মীকান্তের স্ত্রী। তবে সেই ভয়াবহ বিস্ফোরণস্থলের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কেউ সাহস দেখাতে পারেননি। চোখের সামনে লক্ষ্মীকান্তের স্ত্রীকে জীবন্ত পুড়ে মরতে দেখেছিলেন প্রতিবেশী নিমাই মাইতি ও তাঁর স্ত্রী সন্ধ্যা মাইতি। আর ঘটনার দু'দিন পর ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও দুজনের দেহ উদ্ধার হয়েছিল।
২০১০ সালের ওই বাজি বিস্ফোরণের কিছুদিন পর লক্ষ্মীকান্ত মাইতি পয়াগ গ্রামের ওই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। এলাকা চাউর হয়ে যায় ওই বাড়িতে ভূত রয়েছে। ১৪ বছর আগে বিস্ফোরণে দগদগে স্মৃতি বুকে নিয়ে ভূতুড়ে তকমা পাওয়া বাড়ির দিকে এখন ঘুরেও তাকান না এলাকাবাসী। হয়তো ভয়ও পান না। তাই এতকিছুর পরও এলাকায় বাজি কারবারিদের হুঁশ ফেরেনি বলে দাবি নিমাইয়ের মতো অন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy