সেলমাবাদ গ্রামে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য মণীন্দ্র শাসমলের বাড়ি ঘেরাও করে বিজেপির বিক্ষোভ। রবিবার।অমূল্য মণ্ডল।(ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র।
ফের তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে উত্তপ্ত পটাশপুর। আক্রান্ত ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের ধাক্কায় পড়ে গিয়ে পশ্চিম সেলমাবাদ গ্রামের এক বৃদ্ধের মৃত্যুর অভিযোগ উঠল। অভিযুক্ত তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাল বিজেপি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে তৃণমূল। তবে রবিবার রাত পর্যন্ত থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের না হলেও পুলিশ দু’জন তৃণমূল কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, পটাশপুর-১ ব্লকে গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে কয়েকদিন আগে বিজেপির‘আর নয় অন্যায়’ কর্মসূচিতে বাইক মিছিল হয়। বাম আমলে গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান শঙ্কর মণ্ডল এখন বিজেপিতে। ‘আর নয় অন্যায়’ কর্মসূচিতে বিজেপির মিছিলে শঙ্কর-সহ সেলমাবাদ গ্রামে একাধিক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। শনিবার সন্ধ্যায় পশ্চিম সেলমাবাদ গ্রামে সিংলাই মোড়ে তৃণমূল পাল্টা কর্মিসভা ও মিছিল করে। অভিযোগ কর্মিসভা চলাকালীন দোকানে বসে থাকা বিজেপি সমর্থক এক ব্যক্তিকে কাচের গ্লাস দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। পরে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকেরা পশ্চিম সেলমাবাদ গ্রামে মিছিল করে। অভিযোগ, মিছিল চলাকালীন প্রাক্তন উপপ্রধান তথা বিজেপি কর্মী শঙ্কর মণ্ডলের বাড়ির সামনে চড়াও হয় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। শঙ্করের বৃদ্ধ বাবা অমূল্য মণ্ডল (৮২) ছেলেকে বাঁচাতে এলে দুষ্কৃতীরা তাঁকে ধাক্কা মেরে ঢালাই রাস্তার উপর ফেলে দেয় বলে অভিযোগ। অমূল্য গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয়রা চিকিৎসক ডেকে নিয়ে আসেন। অবস্থার অবনতি হলে রবিবার ভোরে অমূল্যকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। সূত্রের খবর, বার্ধক্যজনিত কারণে কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন অমূল্য।
প্রসঙ্গত, গত বছর সেপ্টেম্বরে গোকুলপুরের বিজেপি কর্মী মদন ঘোড়াইর জেল হাজতে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্য রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তৃণমূল ও পুলিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরব হয় মৃতের পরিবার এবং বিজেপি নেতৃত্ব।
এ দিন মৃত বৃদ্ধের ছেলে শঙ্কর মণ্ডল বলেন, ‘‘বিজেপি করার অপরাধে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা আমার উপর আক্রমণ করে। বৃদ্ধ বাবা আমাকে বাঁচাতে এলে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা বাবাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়ায় মৃত্যু হয়েছে। অভিযুক্তদের শাস্তি চাই।’’ ঘটনার পরে স্থানীয় তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য মনীন্দ্র শাসমলকে গ্রেফতারের দাবিতে তাঁর বাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দেহ উদ্ধার করতে গেলেও পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় স্থানীয় মানুষ। পুলিশ দুই তৃণমূল কর্মীকে আটক করেছে। তবে ঘটনায় এ দিন রাত পর্যন্ত অভিযোগ দায়ের হয়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশ দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।
প্রসঙ্গত গত লোকসভা ভোটের পরেই পটাশপুর-১ ব্লকে বিজেপির শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। গোপালপুর ও গোকুলপুর এবং নৈপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপির সাংগঠনিক শক্তি বেড়েছে। ফলে ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে মাঝেমধ্যেই সংঘর্ষে জড়াচ্ছে তৃণমূল এবং বিজেপি। শনিবার রাতের ঘটনাও তারই জের।
বিজেপি কাঁথি সাংগঠনিক সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘তৃণমূলের হার্মাদরা পেশী শক্তি ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করছে। সেলমাবাদে আমাদের এক বয়স্ক সমর্থকের উপর পরিকল্পিত হামলা চালিয়ে তাঁকে হত্যা করেছে। তৃণমূলের এই হার্মাদের হিসেব আগামী দিনে মানুষ বুঝে নেবে।’’ পটাশপুর-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি পীযূষ পন্ডা বলেন, ‘‘বিজেপি সব সময় মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করে। ঘটনায় তৃণমূলের কেউ জড়িত নয়। বার্ধক্যজনিত অসুখে বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। উন্নয়নের অস্ত্রে হেরে গিয়ে ভোটের আগে মৃত্যু নিয়ে রাজনীতির চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি।’’
পটাশপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় এখনও পর্যন্ত অভিযোগ দায়ের হয়নি। তব দু’জনকে আটক করা হয়েছে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy