গত সেপ্টেম্বরের ঘটনা। খড়্গপুরের চৌরঙ্গি হয়ে নিউ সেটেলমেন্ট ফিরছিল রেলমাফিয়া শ্রীনু নায়ডু। গোলবাজারে এক যুবক শ্রীনুর গাড়ি লক্ষ করে গুলি চালায় বলে অভিযোগ। সেই সময় পুলিশের কাছে শ্রীনু দাবি করেছিল, এই ঘটনায় রামবাবুর হাত থাকতে পারে।
শ্রীনু খুনের মামলায় এক সময় খড়্গপুর দাপানো সেই রামবাবুই এখন পুলিশের জালে। ইতিমধ্যে এই মামলায় রামবাবুকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। আর তারপরই রামবাবুর বিরুদ্ধে তোলা শ্রীনুর পুরনো অভিযোগগুলো ফের নাড়াচাড়া করা শুরু করেছে পুলিশ। এই সব পুরনো অভিযোগও যে শ্রীনু মামলায় পুলিশের হাতিয়ার হতে চলেছে, তা মানছেন মামলার বিশেষ সরকারি আইনজীবী সমরকুমার নায়েক। তাঁর কথায়, “শ্রীনু খুন হওয়ার আগে কিছু ঘটনা ঘটে। গত কয়েক মাসে সেই সব ঘটনায় রামবাবুর দিকেই অভিযোগ ছিল শ্রীনুর। ওই সব কথা আদালতে জানানো হবে।” সমরবাবুর দাবি, “কাউকে খুন করা রামবাবুর কাছে সামান্য ব্যাপার। আগেও ও খুন করে জেল খেটেছে। শ্রীনু হত্যায় রামবাবু সরাসরি যুক্ত। পুলিশের কাছে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে।”
রেলশহরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, সে খুন হতে পারে বলে গুলিবিদ্ধ হওয়ার দিন কয়েক আগেই ঘনিষ্ঠ মহলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল শ্রীনু। এমনকী এই আশঙ্কার কথা পুলিশকেও জানিয়েছিল সে। পুলিশ অবশ্য সে কথা মানতে নারাজ। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের দাবি, “এমন কোনও আশঙ্কার কথা শ্রীনু কখনও জানায়নি।” তবে একটা ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত যে, মাফিয়া দুনিয়ার পুরনো শত্রুতার জেরেই শ্রীনু খুনের পরিকল্পনা করে রামবাবু। জেলা পুলিশ সুপার ভারতীদেবীর কথায়, “শ্রীনুর সঙ্গে রামবাবুর শত্রুতা অনেক পুরনো। ওর (রামবাবুর) মনে হয়েছিল, শ্রীনু খড়্গপুরে থাকলে ওর পক্ষে একা মাফিয়ারাজ চালানো সম্ভব নয়। খড়্গপুরে যদি মাফিয়ারাজ ফিরিয়ে আনতে হয় তাহলে শ্রীনুকে খুন করেই তা শুরু করতে হবে।”
শ্রীনু হত্যা মামলায় দিন কয়েক আগেই রামবাবুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল মেদিনীপুর আদালত। মঙ্গলবার দুপুরে অন্ধ্রপ্রদেশের তানুকা থেকে রামবাবুকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার রামবাবুকে একদফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
১৯৯৯ সালে মানস চৌবে যখন খুন হন, তখন রামবাবু ও তার কয়েকজন শাগরেদ গ্রেফতার হয়েছিল। ২০০১ সালে যখন গৌতম চৌবে খুন হন, তখনও একই জিনিস। রামবাবু ও তার শাকরেদরা এই খুনের ঘটনাতেও যুক্ত ছিল। গৌতম চৌবে, মানস চৌবে খুনের মামলায় রামবাবুর যাবজ্জীবন সাজা হয়। পরে সুপ্রিম কোর্ট থেকে সে জামিন পায়। এ বার ওই জামিন রদের আর্জি জানিয়ে শীর্ষ আদালতে যাবে পুলিশ। ভারতীদেবী বলেন, “আমরা এ বার সরাসরি সুপ্রিম কোর্টকে জানাচ্ছি, ওখান থেকে এই লোকটা জামিন নিয়ে কী কী করেছে। সেই সঙ্গে আবেদন করব, যাতে পুরো জিনিসটাকে (জামিনের বিষয়টি) পুনর্বিবেচনা করেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy