মহালয়ার দিন ঘাটালের কুঠিবাজােরর একটি দোকানে। ফাইল চিত্র
এ বড় অসম লড়াই!
‘‘দিনকাল যা পড়ছে ‘অনলাইন শপিং’য়ের সঙ্গে এঁটে ওঠাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।’’, দুর্গাপুজোয় বিক্রিবাটা সম্পর্কে এমনই অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন ঘাটাল শহরের এক বড় বস্ত্র ব্যবসায়ী। তাঁর অভিজ্ঞতার সঙ্গে ফারাক নেই পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর, মেদিনীপুর শহর অথবা ঝাড়গ্রাম শহরের বড় বস্ত্র অথবা জুতো ব্যবসায়ীদের। দু’জেলাতেই শহর অথবা শহর ঘেঁষা অঞ্চলে মূলত ‘অনলাইন’ কেনাকাটার সুযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে ‘অনলাইন শপিং’-এর সঙ্গে যুঝতে কালঘাম ছুটেছে বড় ব্যবসায়ীদের। গ্রামীণ এলাকায় ‘অনলাইন’ কেনাকাটার সুযোগ এখনও নেই। ফলে সেখানকার ব্যবসায়ীরা মোটের উপর ভাল ব্যবসাই করেছেন। সবচেয়ে বেশি মুশকিলে পড়েছেন মাঝারি ব্যবসায়ীরা। করোনা কাল কাটিয়ে দু’বছর পর পূর্ণমাত্রায় দুর্গাপুজো হল এ বার। ফলে আশায় ছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিছু ক্ষেত্রে আশা পূরণ হলেও সামগ্রিক ভাবে হতাশই হতে হয়েছে অনেককে।
ঘাটাল শহরের এক বড় বস্ত্র ব্যবসায়ী বলছিলেন, ‘‘এখন খদ্দেরদের অনেকেই হাল ফ্যাশনের পোশাক কিনতে দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন। খদ্দের ধরে রাখতে প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। সেই তুলনায় ব্যবসা হয়নি।” কয়েকবছর আগেও পুজোর বাজারে গমগম করত ঘাটাল শহর। সে দিন আর নেই। ছোট ও মাঝারি দোকানগুলিতে খদ্দের কমছে। শহরে বাড়ছে শপিং মলের সংখ্যা। সেখানে কেনাকাটায় নানা পুরস্কার থাকছে। ঘাটাল শহরের বস্ত্র বিক্রেতা পাপন ঘোষাল বলছিলেন, “অনেকে অনলাইন কেনাকাটা করছে। প্রতিযোগিতা বাড়ছে। এই টানাপড়েনে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা মার খাচ্ছে।” পুজোয় এ বার ঘাটালে জুতোর দোকানগুলিতেও ভিড় ছিল। নামী এবং অনামী সব ধরনের কোম্পানি জুতোর চাহিদা ভাল ছিল।”
মেদিনীপুর শহরে ভিড় টেনেছে শপিং কমপ্লেক্স। পুজোর আগের শেষ সাত দিনে মেদিনীপুরে একটি নামী শাড়ির দোকানে দিনে বিক্রি হয়েছে ৩০- ৩৫ লক্ষ টাকার শাড়ি। এক মাঝারি দোকানের মালিক শোনাচ্ছেন, ‘‘আগে পুজোর আগের সপ্তাহে ১০-১২লক্ষ টাকার পোশাক বিক্রি হত। এ বার ৫-৬ লক্ষ টাকার বিক্রি হয়েছে।’’ মেদিনীপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মলয় রায় বলছেন, ‘‘পুজোর কেনাকাটায় প্রথম দিকে ভিড় ততটা ছিল না। তবে শেষবেলায় মানুষ বাজারমুখী হয়েছেন।’’ একই ছবি ঝাড়গ্রামেও। শহরের জুবিলি বাজারের বস্ত্র ব্যবসায়ী সুবীর কুণ্ডু বলছেন, ‘‘গত বছর করোনা আবহ সত্ত্বেও ভাল বিক্রি হয়েছিল। এ বার গত বারের তুলনায় বিক্রি কম। ফলে লাভের অঙ্কও কম। অনলাইন ব্যবসার বাড়বাড়ন্তের কারণেই দোকানের বিক্রি কমেছে। আমার ছেলেমেয়েরাই এ বার অনলাইনে কেনাকাটা করেছে।’’ জুবিলি বাজারের নামী জুতো দোকানের মালিক সুভাষ রায়েরও আক্ষেপ, ‘‘নতুন প্রজন্ম অনলাইনে কিনছে। ফলে আমাদের ব্যবসা কিছুটা কমেছে। তা-ও পুজোর মুখে ভাল বিক্রি হয়েছে।’’ খড়্গপুর শহরের গোলবাজারের এক শাড়ি দোকানের মালিক টিঙ্কু ভৌমিক বলেন, ‘‘আশা করেছিলাম করোনার পরে ভাল মুনাফা হবে। কিন্তু তা হল কই!’’ আবার এক রেডিমেড পোশাক ব্যবসায়ী বাবাই কুণ্ডু বলেন, ‘‘অনলাইনের কারণেই মনে হচ্ছে মানুষ বাজারে কম আসছে। বিক্রি একেবারে আশানুরূপ হয়নি।’’ যদিও বিভিন্ন জুতোর শো-রুমে শেষ কয়েকদিন ভিড় দেখা গিয়েছে।
গ্রামীণ এলাকায় অনলাইনে কেনাকাটার প্রভাব কিছুটা কম থাকায় ভালই ব্যবসা হয়েছে। গোপীবল্লভপুরের বস্ত্র ব্যবসায়ী প্রীতম পৈড়া বলেন, ‘‘এ বছর বেচা-কেনা ভাল হয়েছে। প্রতিদিন দোকানে ভাল ভিড়। বৃষ্টি হলেও সেভাবে প্রভাব পড়েনি।’’ গত দু’বছরের ঘাটতি কিছুটা এ বারের পুজোতে মিটেছে বলে জানাচ্ছেন গড়বেতার তিনটি ব্লকের অনেক জামাকাপড়ের দোকানদারেরা। গড়বেতার ফতেসিংহপুরের একটি অভিজাত বস্ত্রালয়ের মালিক জয়ন্ত দত্ত বলেন, ‘‘দু’বছরের ক্ষতিটা খানিকটা পূরণ হল।’’ চন্দ্রকোনা রোডের ফুটপাথে বসা পোশাক ও জুতো দোকান গুলিতে এ বার ভিড় ছিল নজরকাড়া। জুতো দোকানদার বীরেন দাস বলেন, ‘‘জুতোর বিক্রি ভাল হয়েছে, খরচ বাদ দিয়ে হাজার তিনেক টাকা আয়ও হয়েছে।’’
(সহ প্রতিবেদক: রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য, বরুণ দে, দেবমাল্য বাগচী, কিংশুক গুপ্ত ও রঞ্জন পাল)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy