ছাতা মাথায় বাসের অপেক্ষায়। খড়্গপুরের কৌশল্যায়। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
চড়া রোদে বাস স্টপে দাঁড়িয়ে ছিলেন সবংয়ের সুমন মাইতি। সঙ্গে স্ত্রী ও পাঁচ বছরের ছেলে। খড়্গপুরের কৌশল্যা সংলগ্ন একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসকের কাছে এসেছিলেন তাঁরা। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানোর পরে স্ত্রীর শৌচগারে যাওয়ার প্রয়োজন হলে বিপাকে পড়েন সুমন। ভরা বাস স্টপে যে কোথাও শৌচাগার নেই। শেষমেশ পাশে একজনের বাড়িতে গিয়ে অনুরোধ করে শৌচাগার ব্যবহার করেন তাঁর স্ত্রী। সুমন বলছিলেন, ‘‘খড়্গপুরের মতো শহরে এসে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে ভাবিনি। আমাদের সবংয়ের বাস স্টপের হাল এর থেকে ভাল। ’’
মিশ্র সংস্কৃতির শহর খড়্গপুর ‘মিনি ইন্ডিয়া’ বলে পরিচিত। সরকারি-বেসরকারি একাধিক অফিস, স্কুল, কলেজ, আইআইটি-র মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে খড়্গপুরে। তা ছাড়া, রেলের সূত্রেও এই শহরে আনাগোনা বহু মানুষের। কিন্তু খড়্গপুরের বাস স্টপগুলিতে যাত্রী প্রতীক্ষালয় না থাকায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তির অন্ত থাকে না। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা— সব মরসুমেই এক ছবি।
অথচ খড়্গপুর শহরের সৌন্দর্যায়ন ও নিত্যযাত্রীদের সাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখে আটের দশকে বেশ কিছু যাত্রী প্রতীক্ষালয় গড়েছিল পূর্ত দফতর ও পুরসভা। কথা ছিল সেগুলির সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে পুরসভা। প্রথম দিকে সেই মতো চললেও ধীরে ধীরে পুরসভা কর্তব্য থেকে দূরে সরে যায়। পূর্ত দফতরও উদাসীন হয়ে পড়ে। পরিণাম, শহরে এই মুহূর্তে হাতেগোনা যে কটা জায়গায় প্রতীক্ষালয় রয়েছে, সেগুলি জীর্ণ। যেকটি প্রতীক্ষালয়ে শৌচাগার আছে, সেগুলিও বেহাল। অনেক জায়গাতেই প্রতীক্ষালক্ষ বেদখল হয়ে গিয়েছে। কোথাও চলছে ইডলির দোকান, কোথাও জেনারেটরের ব্যবসা। আর আমজনতাকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাসের অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
বছর দু’য়েক আগে একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদ শহরে কয়েকটি প্রতীক্ষালয় নির্মাণ করেছে। কিন্তু সেগুলি বাসস্টপ থেকে কিছুটা দূরে। আর সেগুলির একটিতেও শৌচাগার নেই। ফলে, দিঘা, কাঁথি, সবং, হলদিয়া-সহ বিভিন্ন রুটের বাসযাত্রীদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে। শৌচাগারের অভাবে কখনও স্থানীয়দের বাড়ির দরজায় কড়া নাড়তে হচ্ছে, কখনও খুঁজতে হচ্ছে আড়াল।
খড়্গপুরের পুরাতন বাজার, ইন্দা মোড়, কৌশল্যা, কমলাকেবিন, ঝাপেটাপুর মোড়— সর্বত্র এক ছবি। কোথাও প্রতীক্ষালয় আছে তো শৌচাগার নেই, আবার কোথাও শৌচাগার যেন নরক। ইন্দা মোড়ে প্রতিদিন বহু মানুষ দূরপাল্লার বাস ধরতে আসেন। সেখানে যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে এতটাই নোংরা যে যাত্রীরা রাস্তাতেই অপেক্ষা করেন দাঁড়িয়ে থাকেন। শৌচাগারও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জীর্ণ। স্থানীয় ‘কেওয়াইসি অ্যান্ড সেভেন স্টার ক্লাব’ শৌচাগার রক্ষণাবেক্ষণের চেষ্টা করে। তবে হাল ফেরে না তাতেও। ক্লাবের সদস্য ইন্দার বাসিন্দা সোমনাথ আচার্য বলেন, ‘‘সামর্থ অনুযায়ী আমরা চেষ্টা করি। তবে বাস স্টপের শৌচাগারের যা হাল হয়েছে তাতে আমাদের ক্লাবের পক্ষে রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব নয়। পুরসভাও উদাসীন।’’ একইভাবে খড়্গপুরের পুরাতনবাজার, কৌশল্যা, ঝাপেটাপুর মোড়ের বাস স্টপে শৌচাগার না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা, বিশেষত মহিলারা। কৌশল্যার বাসিন্দা স্থানীয় তৃণমূল নেতা বিবেকানন্দ দাস চৌধুরী বলেন, ‘‘শৌচাগার না থাকার বিষয়টি পুরসভার নজরে এনেছি।’’
পুরসভা জানিয়েছে, বহু বাস স্টপে আলোর ব্যবস্থা হয়েছে। এ বার যাত্রী প্রতীক্ষালয় ও শৌচাগার গড়া হবে। সেই সঙ্গে করা হবে পানীয় জলের ব্যবস্থা। পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, ‘‘শৌচাগার না থাকায় শহরে আসা সাধারণ থেকে মহিলা যাত্রীদের অবস্থা করুণ এ কথা ঠিক। আমরা ঠিক করেছি শহরের বাস স্টপগুলিতে শৌচাগার গড়ব।’’ এ জন্য সাংসদ সন্ধ্যা রায়ের কাছে টাকা চেয়ে আবেদন করা হয়েছে বলেও জানান পুরপ্রধান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy