সবংয়ের বুড়াল গ্রাম পঞ্চায়েতের নতুন ভবনের (ইনসেটে) উদ্বোধন করছেন জেলা সভাধিপতি উত্তরা সিংহ। সোমবার। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
উন্নয়নের প্রশ্নে রাজনীতি নয়। সোমবার সবংয়ের বুড়াল পঞ্চায়েতের নতুন ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রায় সকলের বক্তব্যেই উঠে এল দলমত নির্বিশেষে একসঙ্গে কাজ করার প্রসঙ্গও। তবুও কোথাও যেন ঘটে গেল ‘ছন্দপতন’।
সোমবার সবং ব্লকের বুড়াল গ্রাম পঞ্চায়েতের নব নির্মিত ভবনের উদ্বোধন হল। অনুষ্ঠানে সবং ব্লকের ৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও একটি কো-অপারেটিভ সোসাইটিকে অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়া হয়। ঘাটালের সাংসদ দীপক অধিকারীর সাংসদ তহবিল থেকে কেনা হয়েছে অ্যাম্বুল্যান্সগুলি। এ দিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সভাধিপতি উত্তরা সিংহ, কর্মাধ্যক্ষ সূর্য অট্ট, শৈবাল গিরি, শ্যামপদ পাত্র, জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা অজিত মাইতি, জেলা পরিকল্পনা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান প্রদ্যোত্ ঘোষ। অনুষ্ঠানে আসার কথা ছিল রাজ্যের পঞায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। যদিও তিনি আসেননি। অনুষ্ঠানে ডাকা হয়নি স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়াকেও। অনুষ্ঠানে অমলবাবু বলেন, ‘‘অনুষ্ঠানে অনেকেই হাজির। ভাল লাগছে। তবু কোথাও যেন ছন্দপতন ঘটে গেল।”
কেন ছন্দপতন? তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অমলবাবু বলেন, “মন্ত্রী উপস্থিত থাকলে ভাল হত। সাংসদও উপস্থিত থাকলে ভাল লাগত। স্থানীয় বিধায়ককে আমন্ত্রণ জানানো হলেও ভাল হত।” নিজের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের পরেই অবশ্য মঞ্চ ছেড়ে চলে যান অমলবাবু। কেন বিধায়ককে আমন্ত্রণ জানানো হল না? এ ব্যাপারে তৃণমূল নেতৃত্ব কোনও বিতর্কে যেতে রাজি নন। জেলা পরিষদের বিদ্যুত্ কর্মাধ্যক্ষ তথা অনুষ্ঠানের সভাপতি অমূল্য মাইতি বলেন, “প্রশাসনিক সভা। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে তো ডাকা হয়েছে। তা সত্ত্বেও কেউ বা কারা যদি বিতর্ক করতে চান তো আমাদের কী করার রয়েছে।”
কংগ্রেস কিন্তু এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুলতে ছাড়ছে না। কংগ্রেসের অভিযোগ, এই অনুষ্ঠানে জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষকে পর্যন্ত আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। যদিও তিনি আসেননি। কংগ্রেস নেতাদের প্রশ্ন, “পুলিশ সুপারের সঙ্গে পঞ্চায়েত ও উন্নয়নের সম্পর্ক কোথায়? যদি পুলিশ সুপারকে আমন্ত্রণ জানানো হয় তাহলে স্থানীয় বিধায়ককে নয় কেন?” কংগ্রেসের জেলা সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়ার বক্তব্য, ‘‘সরকারি এই অনুষ্ঠানে জেলা পুলিশ সুপারকে ডাকা হল কেন? এটা কী শাসকদলের অনুকূলে সবংয়ে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত চালানোর পুরস্কার। অথচ এই অনুষ্ঠানে স্থানীয় বিধায়ককেই ডাকা হল না।’’ এ বিষয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের জবাব, পঞ্চায়েত সমিতি সরাসরি পঞ্চায়েতের কাজের সঙ্গে যুক্ত। পঞ্চায়েতের উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে তো ডাকা হয়েছে। তবু প্রশ্ন কেন?
এতদিন বুড়াল গ্রাম পঞ্চায়েতের নিজস্ব কোনও ভবন ছিল না। এ বার তা করা হল। তারই সঙ্গে এ বার এলাকার মানুষ হঠাত্ অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য পঞ্চায়েতকে দেওয়া হল অ্যাম্বুল্যান্স। এ দিন পঞ্চায়েত প্রধানদের হাতে তুলে দেওয়া হয় অ্যাম্বুল্যান্সের চাবি। মুখ্যমন্ত্রী ভুটান যাওয়ার আগে পঞ্চায়েত মন্ত্রী অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে পারেননি বলে দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের। তাই তাঁর পরিবর্তে নতুন ভবনের দ্বারোদ্ঘাটন করেন সভাধিপতি। সভাধিপতির কথায়, “উন্নয়নের প্রশ্নে দলমত নির্বিশেষে কাজ করতে হবে। তার জন্য জেলা পরিষদ সব ধরনের সাহায্য করতে প্রস্তুত।” শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্রের কথায়, “এমন নজির গড়ে তুলতে হবে যাতে পঞ্চায়েত অফিসের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এলাকার প্রতিটি মানুষ যেন মনে করেন এটা তাঁদের পঞ্চায়েত, তাঁদের অফিস। যেখানে গেলেই সমস্ত সমস্যার সমাধান হবে।” তবে এটাও ঠিক যে, এখনও ইন্দিরা আবাস যোজনা ও মিশন নির্মল বাংলায় জেলা অনেকটাই পিছিয়ে পড়ছে বলেও জানাতে ভোলেননি অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) সজল টিকাদার। তাঁর কথায়, “এই কাজে সকলকে তত্পরতা দেখাতে হবে। আমরা তো কাজ করবই। কিন্তু আপনাদেরও করতে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy