Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

তিনের জবাব দেবে নবাগত!

ভগবানপুরের ভাগ্যে এ বার কি ভগবান বদল সম্ভব! চাপা সন্ত্রাস আর একপেশে ভোটের হাওয়ায় সে প্রশ্ন ভেসে বেড়ায় এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। চুপ করে থাকা মুখগুলো থেকে কোনও উত্তর আশা করা অবান্তর। তবু ভোট আসে।

সুব্রত গুহ
ভগবানপুর শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৬ ০১:২২
Share: Save:

ভগবানপুরের ভাগ্যে এ বার কি ভগবান বদল সম্ভব! চাপা সন্ত্রাস আর একপেশে ভোটের হাওয়ায় সে প্রশ্ন ভেসে বেড়ায় এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। চুপ করে থাকা মুখগুলো থেকে কোনও উত্তর আশা করা অবান্তর। তবু ভোট আসে।

টানা তিনবারের বিধায়ক বনাম বিরোধী জোটের নবাগত প্রার্থী। এই সমীকরণেই এ বার টানটান ভগবানপুরের বিধানসভা নির্বাচন। তৃণমূলের বিদায়ী বিধায়ক অর্ধেন্দু মাইতি আর কংগ্রেস প্রার্থী হিমাংশুশেখর মহাপাত্র দু’জনেই দাবি করেছেন, এলাকার মানুষ তাঁকেই জয়ী করবেন। একজনের ঝুলিতে পাঁচ বছরের উন্নয়ন-খতিয়ান আর অন্যজনের হাতে সেই আপাত উন্নয়নের ভিতরের জল খুঁজে বেড়ানোর তালিকা।

ভগবানপুর-১ ও ২ ব্লকের ১১টি আর পটাশপুর-২ ব্লকের দু’টি— মোট ১৩টি অঞ্চল নিয়েই ভগবানপুর বিধানসভা কেন্দ্র। ২০১১ সালের বিধানসভায় অর্ধেন্দু মাইতি ৮,৯৯৭ ভোটে বাম সোশ্যালিস্ট দলের প্রার্থী রঞ্জিত মান্নাকে পরাজিত করেছিলেন। অর্ধেন্দুবাবু পেয়েছিলেন ৯৩,৯৪৫ ভোট। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে সে জয়ের ব্যবধান আরও অনেকটা বেড়েছিলে। তৃণমূলের শিশির অধিকারী কাঁথি লোকসভা ভোটে ভগবানপুর বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে ছিলেন ৩৬,৪২৬ ভোটে। সে বার এখানে সিপিএম প্রার্থী তাপস সিংহ পেয়েছিলেন ৬৯,৪৯৪ ভোট আর শিশিরবাবু পেয়েছিলেন ১০৫,৯২০ ভোট।

কংগ্রেস নেতা অর্ধেন্দু মাইতি জন্মলগ্ন থেকেই তৃণমূলে। তারপর বাম জমানায় ২০০১ এবং ২০০৬ বিধানসভা ভোটেও ভগবানপুর থেকে জয়ী হয়েছেন তিনি। ফলে বিধায়ক হিসেবে গত ১৫ বছরে খতিয়ান তুলে ধরতে মরিয়া অর্ধেন্দুবাবু। তাঁর আশা উন্নয়নের নিরিখেই মানুষ ফের তাঁকে পুর্ননির্বাচিত করবেন। তাঁর কথায়, “একটা সময় ছিল যখন, এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় সরাসরি যাওয়া যেত না। সে সমস্যা দূর করতে আড়গোয়াল, আশুটিয়া ও মাধাখালিতে তিনটি নতুন বড় সেতু তৈরি করেছি।’’ যদিও বিরোধীরা বলছেন মাধাখালির সেতু এখনও অসম্পূর্ণ। সে কথা স্বীকার করে নিয়েও অর্ধেন্দুবাবু বলেন, ‘‘তাতে যাতায়াতে সমস্যা হয় না। তা ছাড়া, বাসুদেববেড়িয়া সপ্ততীর্থে মিনি ইনডোর স্টেডিয়াম, রাস্তাঘাট, কন্যাশ্রী, যুবশ্রী তো রয়েছেই।’’ সেচের জন্য খাল সংস্কার, বিদ্যুদয়ন ও পানীয় জলের সুব্যবস্থা— তৃণমূলের উন্নয়নের তালিকা ফুরোয় না।

সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন।

কিন্তু সে দাবি মেনে নিতে নারাজ বিরোধীরা। স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব বলছে, ভগবানপুরে যা কিছু উন্নয়ন হয়েছে তা বাম আমলেই হয়েছে। গত পাঁচ বছরে উন্নয়ন তো হয়নি বরং দুর্নীতি আর স্বজনপোষণের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে সন্ত্রাসের দাপট। পরিস্থিতি এমনই যে গোটা এলাকায় বিরোধীদের মত প্রকাশের অবকাশ নেই। অভিযোগ, বরোজ, অর্জুননগর, কায়েমগেড়িয়া, বাসুদেববেড়িয়ার মতো এলাকায় আতঙ্কিত বাসিন্দারা বাড়ির বাইরে পা রাখতেই ভয় পান। কিছুদিন আগেই মুগবেড়িয়া এলাকা সভা করার কথা ছিল বিরোধী জোটের নেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের। অভিযোগ, যে মাঠে সভা করার কথা ছিল, আগের রাতে সেখানে জল ঢুকিয়ে দেয় তৃণমূলের লোকজন। গত ২৫ এপ্রিল জোটের তরফে অভিযোগ করা হয়েছিল পুলিশের উপস্থিতিতেই তাদের মিছিলে হামলা করেছে তৃণমূল। মিছিল নিয়ে ভগবানপুর এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

এমন পরিস্থিতিতে নতুন মুখকে প্রার্থী করেছে জোট। কংগ্রেসের প্রতীকে লড়ছেন স্থানীয় বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা হিমাংশুশেখর মহাপাত্র। তাঁর অভিযোগ, “একশো দিনের কাজে পুকুর চুরি-দুর্নীতি, জেলায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের স্বজনপোষন আর চূড়ান্ত দলবাজীই শুধু হয়েছে গত পাঁচ বছরে।” ভগবানপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সুব্রত মহাপাত্রের অভিযোগ, “গোটা ভগবানপুরে সন্ত্রাসের আবহ চলছে পাঁচ বছর ধরে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মী থেকে সাধারণ মানুষ অত্যাচার থেকে বাদ যাচ্ছেন না কেউই।” সুব্রতবাবু মনে করিয়ে দেন, গত লোকসভা নিবার্চনের কাঁথি কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী তাপস সিংহ প্রচারে এসে আক্রান্ত হয়েছিলেন তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হাতে। প্রতিবাদ দূর-অস্ত, শাসক দলের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহসটুকুও নেই মানুষের। মারধর, বাড়ি ভাঙচুর, জরিমানা, এমনকী গ্রামছাড়া করাও হয় শাসক-নেতা বা কর্মীর বিধানে। এ সব অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন অর্ধেন্দু মাইতি। তাঁর কথায়, “গত পাঁচ বছরের উন্নয়ন আর নিজেদের ৩৪ বছরের অপশাসন ঢাকতেই সন্ত্রাসের অপপ্রচার শুরু করছে বিরোধীরা।”

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy