এরকমই বিভিন্ন পোস্ট ঘুরছে ফেসবুকে।
এ কোন সমাজ মাধ্যম? যেখানে বিপদের সময়েও থামে না মশকরা! ঘূর্ণিঝড় বুলবুল নিয়ে নানা রসিকতা, মন্তব্য, মিমে নেটিজেনদের দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক থেকে বিদ্বজ্জনদের একাংশ।
শনিবার সন্ধ্যার পর থেকেই গতিবেগ বাড়ছিল বুলবুলের। সঙ্গে আতঙ্কও! কী ভাবে বাঁচবে ধান, ফসল চিন্তায় ঘুম উড়েছিল চাষিদের। পড়ে যাবে না তো কাঁচা বাড়িটা? দুরু দুরু বুকে ভাবছিল গৃহস্থ। কিন্তু এ সব ভাবনা সে ভাবে স্পর্শ করেনি নেটিজেনদের একাংশকে। বরং তাঁরা মশগুল ছিলেন বুলবুল নিয়ে রঙ্গ-রসিকতায়। কেউ লিখেছেন, ‘ডবল বুল থাকতে সিঙ্গেল বুল কী করবে’! ভাইরাল হয়েছে একটি হিন্দি গানের বেশ কিছুটা অংশ। যেখানে অজয় দেবগন ও আমির খান নায়িকাকে পাশে নিয়ে গাইছেন— ‘আ জা মেরি বুলবুল তেরি ইন্তেজার হ্যায়’। যাঁরা এ সব লিখলেন বা পোস্ট করলেন, তাঁদের সংবেদনশীলতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন সমাজকর্মী ঝর্না আচার্য। তিনি বলছেন, ‘‘ঝড়ের নাম যাই হোক, মানুষ বিষয়টাকে নিয়ে মজা আর কৌতুকে মেতেছেন। যারা মানুষের আতঙ্ক ও ক্ষতি নিয়ে মজা করেছেন তারা কতটা শিক্ষিত, তার পরিচয়ও তারা দিয়েছেন। মানুষ কতটা হিংস্র এবং স্বার্থপরতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ,এটা তার নমুনা!’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘ধান বা আনাজ নষ্ট হলে কী খাব? এই নিয়ে যদি ওদের ভাবতে হত, তা হলে এমন কৌতুক করতে পারতেন না।’’
রসিকতার সবচেয়ে বড় অবলম্বন রাজনীতি। স্বাভাবিক ভাবে বুলবুল নিয়ে রঙ্গ-রসিকতায় এসেছে রাজনীতিও। কেউ লিখেছেন, ‘যতই আসুক বুলবুল/পাশে আছে তৃণমূল’। আবার মুখ্যমন্ত্রীর নবান্নে কন্ট্রোল রুমে রাতজাগা নিয়েও কারও মন্তব্য, ‘ভয় করো না জনতা/ পাশে আছে মমতা’।
প্রশ্ন উঠছে, সমাজ মাধ্যমে কারা এ ধরনের পোস্ট করছেন? সত্যিই প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিপন্নতা তাঁদের ছুঁয়ে যায় না? বেলদা গঙ্গাধর অ্যাকাডেমি স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ননীগোপাল শীট বলেন, ‘‘মূলত চাকুরীজীবীই মানুষজন করছেন। কারণ, তাঁদের কাছে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আনন্দের বিষয়। সরকার আগে থেকেই ছুটি ঘোষণা করে দিচ্ছে। ফলে কর্মক্ষেত্রে যেতে হচ্ছে না। তাই সারদিন এ সব কৌতুক চলছে।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘মানবিকতার ক্ষেত্রে আমরা কতটা পিছিয়ে পড়ছি, এগুলি তারই উদাহরণ।’’
অবশ্য বিপরীত চিত্রও রয়েছে। বেলদার বাসিন্দা গৃহশিক্ষক বাঙ্ময় মিশ্র ছড়া লিখেছেন, ‘‘ও আমার বুলবুল গো/ তুমি কি সেই পাখি না? কেন তুমি ঝড় হলে?/ প্লিজ, বেশি ক্ষতি করো না’। কেশিয়াড়ির পরেশ বেরা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘দুপুরে বুলবুল দেখতে বেরিয়ে ওর কুঁড়ে ঘরটায় না ঢুকলেই ভাল হত! শুধু নুন দিয়ে সে আর বাচ্চাটা ভাত খাচ্ছে। তবুও আমাকে দেখে হাসল’। কেউ অন্যের বিপদে নিজেও বিপন্ন বোধ করলেন! কেউ আবার অন্যের বিপদে রইলেন হাসি, ঠাট্টা, মশকরায় ব্যস্ত।
বুলবুলে বিশ্বদর্শন সমাজ মাধ্যমে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy