Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

গ্রামবাসীরাই কুম্ভ, বাদুড়গ্রামে নিশ্চিন্ত সংসার ওদের

গ্রামবাসীদের যত্ন আর কড়া দেখভালে এই গ্রামে বাস হাজার দশেকেরও বেশি বাদুড়ের।

এ ভাবেই গাছ ভরে থাকে বাদুড়ে। নিজস্ব চিত্র

এ ভাবেই গাছ ভরে থাকে বাদুড়ে। নিজস্ব চিত্র

আরিফ ইকবাল খান
নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৯ ০৩:২৮
Share: Save:

পথচলতি কাউকে ধান্যখোলা পশ্চিমপাড়া যাওয়ার রাস্তা জানতে চাইলে তিনি অবাক চোখেই আপনার দিকে তাকাবেন। কারণ এলাকায় ওই নামে যে গ্রাম আদৌ আছে তা দীর্ঘদিন আগেই বিস্মৃত হয়েছেন অনেকে। তবে বাদুড়গ্রাম কোথায় জানতে চাইলে নিমেষেই আপনাকে সঙ্গে করে ধান্যখোলা পশ্চিমপাড়ায় পৌঁছে দেবেন কেউ।

গ্রামবাসীদের যত্ন আর কড়া দেখভালে এই গ্রামে বাস হাজার দশেকেরও বেশি বাদুড়ের। নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের ধান্যখোলা পশ্চিম পাড়ার নাম তাই বাদুড়পাড়া। এলাকায় গিয়ে দেখা গেল ৭-৮ আটটি খিরিষ ও বটগাছ ঢেকে গিয়েছে বাদুড়ে। ডাল-পাতা প্রায় চোখেই পড়ে না। বাদুড়গ্রাম হিসাবে খ্যাতি ছড়ানোয় ঝোপঝাড়, জঙ্গলে ঘেরা পরিবেশে এত বিপুল সংখ্যক বাদুড় দেখতে অন্য এলাকা থেকেও লোকজন ভিড় করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা সুচরিত ভুঁইয়া বলেন, ‘‘গ্রামের পূর্ব প্রান্তে আমার বাড়ি। ছোটবেলা থেকেই দেখছি এদের। বলতে গেলে ওদের জন্যই আমাদের গ্রামের সুনাম ছড়িয়েছে। রাত হলে গাছ প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। আবার ভোরের আলো ফুটলেই গাছে ফিরে আসে ওরা। সে দৃশ্যও দেখার মতো।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এই বাদুড়দের কাকমারা গোষ্ঠীর হাত থেকে রক্ষা করেন স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজন। মানুষের ভরসা পেয়ে ওরাও নিশ্চিন্ত হয়ে আছে এখানে।’’

বাদুড়পাড়ার বাসিন্দা তাহেরা খাতুন বলেন, ‘‘বাড়ির পাশেই বড় বড় গাছে কয়েক হাজার বাদুড়ের বাস। ওরা আমাদেরই পড়শি হয়ে গিয়েছে। আমরা এমন কোনও কাজ করি না যাতে ওদের অসুবিধা হয়।’’ দিনভর বাদুড় আগলে রেখেও কোনও ক্লান্তি নেই আজানুর খাঁ, মাজেদ খানের। খুশি মনেই তাঁরা জানান, এই গ্রামে অনেক গাছগাছালি রয়েছে। অনেক পুরনো গাছ বাঁচিয়ে রেখেছি আমরা। সে সব গাছেই ডেরা বেঁধেছে ওরা। কানে আসে, বিভিন জায়গায় গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। তাই ওদের থাকার জায়গাও কমে আসছে। তাই ওদের যাতে কেউ বিরক্ত না করে সেদিকে নজর রাখতে হয়। গ্রামে জোরে মাইক বাজানো বা বাজি ফাটানোর ক্ষেত্রেও সবাই অনেক সতর্ক।

স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, গ্রামের ছোট-বড় সকলেই জানে বাদুড়ের গুরুত্ব। তবে মাঝে মাঝে বাদুড়ের মাংসের লোভে কিছু লোকজন চলে আসে। বাদুড়ের চিৎকারে বুঝতে পেরে গ্রামের মানুষ জড়ো হয়ে যান। শিকারিদের বুঝিয়ে নিরস্ত করেন তাঁরা। তবে ইদানীং বাদুড়ের খাদ্য কমে যাওয়াটাও আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাতে নয়াচর সহ নন্দীগ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে ওরা উড়ে যায়। বর্তমানে আশপাশের এলাকায় প্রচুর ভেড়ি হচ্ছে। ভেড়ি সংলগ্ন গাছে খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে ভেড়ির ওপর বিছানো জালে আটকে পড়ছে ওরা। স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশ কর্মী সৈকত শাসমল বলেন, ‘‘বাদুড় রক্ষা করে গ্রামের মানুষ যে সচেতনতার পরিচয় দিচ্ছেন তার তুলনা নেই।’’

হলদিয়ার বাসিন্দা সৌমিত্র ঘোষ ও সুকমল মাইতির কথায়, ‘‘এই গ্রামে বন্ধুর আমন্ত্রণে বাদুড় দেখতে এসেছিলাম। ছবি তুলতে গিয়ে এদের নিয়ে গ্রামের মানুষের আবেগ, সচেতনতা টের পেয়েছি। সত্যি, এই আত্মীয়তাই বোধহয় বাদুড়গ্রামকে বিখ্যাত করেছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bats Nandigram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy